কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: ভারতীয় সঙ্গীত জগতের আরেকটি অধ্যায় শেষ হল। তারার দেশে প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ডঃ অনুপ ঘোষাল। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী।
যথার্থ অর্থেই দামি শিল্পী ছিলেন তিনি। বেসুরো গুপীর ভূতের রাজার বরে পাওয়া আশ্চর্য সুরেলা কণ্ঠ পাওয়ার পর প্রথম ভোরবেলায় গাওয়া সেই গানের গলায় আসল মালিক আজ অমৃতলোকে। যদিও শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মে, সৃষ্টির মধ্যেই।
"আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে" থেকে "তুমি যে ঘরে কে তা জানত", "ও মন্ত্রী মশাই ষড়যন্ত্রী মশাই..", "দেখো রে নয়ন মেলে", "মধুর আমার মায়ের হাসি"-সহ একাধিক জনপ্রিয় বাংলা গান তাঁর কণ্ঠে শুনেছে বাঙালি শ্রোতা। শুধু বাংলায় নয়, একাধিক হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছেন তিনি। বিশেষ করে 'মাসুম' ছবিতে তাঁর কণ্ঠে "তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি" পুরনো হবে না কোনওদিন। তাঁর কণ্ঠে এই গান ঘিরে ইতিহাস আছে একটি। গানটি একজন বেনামী শিল্পীকে দিয়ে গাওয়ানো হচ্ছে বলে ফের লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে গাওয়ায় প্রযোজনা সংস্থা।
তবে, অনুপ ঘোষালের কণ্ঠেও গানটি সমান জনপ্রিয়তা পায়। আর তাতে অবাক হয় প্রযোজনা সংস্থা। এরপর বাপ্পি লাহিড়ী তাঁকে দিয়ে 'শপথ' ছবিতে গান গাওয়ান। অসমিয়া, ভোজপুরি ছবিতেও গান গেয়েছেন অনুপ ঘোষাল। অনুপ ঘোষাল ছিলেন আদতে একজন নজরুলগীতির শিল্পী। একইসঙ্গে আধুনিক গানেও ছিলেন অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী। সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ পছন্দের ছিলেন তিনি। আর তাই তো "ভূতের রাজা দিল বর" থেকে "আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে", "সবই সত্যজিৎ বাবু গাইয়েছিলেন তাঁকে দিয়েই। জানা যায়, সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, "খালি গলায় সেরা গায়ক কিশোর কুমার এবং অনুপ ঘোষাল।" 'সাগিনা মাহাতো' ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
কলকাতায়, 1945 সালে জন্ম হয় শিল্পী অনুপ ঘোষালের। বাল্যকালে মা লাবণ্য ঘোষালের অনুপ্রেরণাতেই গান শেখা শুরু। রবীন্দ্রনাথের গান শিখেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছ থেকে। মণিন্দ্রা চক্রবর্তীর কাছ থেকে শিখেছিলেন নানা ধরনের বাংলা গান। আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক শিল্পী অনুপ ঘোষাল পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেন। মাত্র 19 বছর বয়সেই সত্যজিৎ রায়ের নজরে পড়েন তিনি। তাঁর গুপীর কণ্ঠের জন্য অনুপ ঘোষালকে বেছে নেন মাণিকবাবু। 'বিরাজবৌ', 'বাঞ্ছারামের বাগান', 'ফুলেশ্বরী', 'নিমন্ত্রণ', 'মোহনবাগানের মেয়ে'-সহ অগণিত ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পীকে 'নজরুল স্মৃতি পুরস্কার' দেয় 2011 সালে ৷ 2013 সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' পান তিনি। 'হীরক রাজার দেশে' ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে ৷
আরও পড়ুন:
মহারাজা, তোমারে সেলাম! হীরকরাজ্য ছাড়লেন সত্যজিৎ-সঙ্গী অনুপ ঘোষাল