হায়দরাবাদ, 10 মার্চ: রাজা পৃথু রাইয়ের জীবনী নির্ভর গল্পকে হাতিয়ার করে তাঁর আসন্ন পিরিয়ড ড্রামাটি তৈরির পরিকল্পনা করছেন পরিচালক শৈলেন্দ্র ব্যাস ৷ এই ছবিতে তিনি ফুটিয়ে তুলবেন তুরস্ক-আফগানিস্তানে হামলাকারী বখতিয়ার খিলজী এবং পৃথু রাইয়ের লড়াইয়ের কাহিনি ৷ এবার ইটিভি ভারতের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মৃণাল ডোডিয়াকে পরিচালক জানালেন ছবি সংক্রান্ত নানা কথা ৷
তাঁর আগের কাজটি ছিল একেবারে অন্য ঘরানার ৷ এর আগে তিনি বানিয়েছিলেন সাই ফাই থ্রিলার সিরিজ 'জেএল 50' ৷ তাঁর এই কল্পবিজ্ঞানের গল্পটিতে অভিনয় করেছিলেন অভয় দেওল, পঙ্কজ কাপুর এবং পীযূষ মিশ্রর মতো অভিনেতারা ৷ শুধু 'রাজা পৃথু রাই' নয় শৈলেন্দ্র এদিন আলোচনা করলেন ছবি নিয়ে তাঁর ধারণা, তাঁর লক্ষ্য, কীভাবে তিনি একটি কাল্পনিক ইউনিভার্স তৈরি করতে চান তার সমস্তটা নিয়েই ৷
প্রশ্ন: আপনার আসন্ন প্রজেক্টে আপনি রাজা পৃথু রাই এবং বখতিয়ার খিলজির ঐতিহাসিক যুদ্ধের কাহিনি পুনর্নিমান করতে চলেছেন ৷ সেই বখতিয়ার যিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করেছিলেন বলে জানা যায় । আপনি কি ইটিভি ভারতের পাঠকদের জন্য ছবিটি নিয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি মনে করি রাজা পৃথু রাইয়ের কাহিনি সমগ্র দেশের মানুষের জানাটা খুব জরুরি ৷ এক নৃশংস বিদেশী হানাদার যিনি বহু বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে হত্যা করেছিলেন, ধ্বংস করেছিলেন নালন্দার মতো প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে কীভাবে জয়লাভ করে পৃথু রাইয়ের সেনা; তারই কাহিনি ফুটে উঠবে এই ছবিতে ৷
প্রশ্ন: এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ ছাড়া রাজা পৃথু রাইয়ের আর কোন কোন দিক তুলে ধরব এই ছবি?
উত্তর: যুদ্ধ ছাড়াও, আমার ছবিতে রাজা পৃথু রাইয়ের মানবিক দিকটাও তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে ৷ তাঁর প্রজাদের জন্য় তাঁর যে দরদ, সকলকে এক ছাতার তলায় ধরে রাখার ক্ষমতা তার উপরেও নজর দেবে এই ছবি ৷ শুধু তাই নয়, এই ছবিতে দেখানো হবে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও বেশকিছু উপজাতিকে কীভাবে তিনি শুধু বুদ্ধির জোরে খিলজীর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেন ৷ তিনি এই লড়াই শুধু নিজের জন্য লড়েননি, লড়েছেন তাঁর প্রজাদের জন্য ৷ একইসঙ্গে দেখানো হবে তাঁর বিনয়ী আচরণ এবং সাহসিকতার ছবিও যা তাঁকে আত্মঅহংকারী বখতিয়ার খিলজির বিরুদ্ধে জয়লাভে সাহায্য় করেছিল ৷
প্রশ্ন: এই ছবি তৈরির ভাবনা আপনার মধ্য়ে এল কীভাবে?
উত্তর: আমি মন থেকে খুব দৃঢ়ভাবে চাই ভারতের প্রতিটি দর্শক এই ছবিটি দেখুক আর আমাদের পূর্বপুরুষদের দেশের প্রতি কতখানি ভালোবাসা ও ভক্তি ছিল তা দেখুক ৷ ইতিহাসের প্রতি আমার শুরু থেকেই ভীষণ ভালোবাসা রয়েছে ৷ আমার মনে হয়, ইতিহাসে অনেক কিছু শেখার এবং খোঁজার বিষয় রয়েছে ৷ অন্য গল্প তো বটেই তবে রাজা পৃথুর গল্প আমাকে গর্বিত করে ৷ আমি অবাক হয়ে যাই যে কেউ এই অসাধারণ ব্যক্তিকে নিয়ে একটিও ছবি তৈরি করেনি।
প্রশ্ন: এই ধরনের ছবিতে বড় সড় বাজেটও লাগে তাই প্রযোজকের টাকার অঙ্কের কথা মাথায় রাখতে হয় ৷ আবার অন্যদিকে প্রতিটি সূক্ষ্ম বিষয়ের দিকে নজরও দিতে হয়, এই দু'টো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা ঠিক কতটা মুশকিল ছিল?
উত্তর: আমি মন থেকে বিশ্বাস করি এই দু'টো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য় বজায় রাখা সমানভাবে চ্যালেঞ্জিং এবং একইরকম গুরুত্বপূর্ণ । কোনও ঐতিহাসিক পিরিয়ডকে তুলে ধরতে হলে পোশাক, সেট, প্রপস এবং সেদিনের সংস্কৃতি নিয়ে বিপুল গবেষণা প্রয়োজন ৷ আমায় নিশ্চিত করতে হবে যাতে আমি সেই সময়ের সুগন্ধ, সেই সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারি ৷ সেই সময়ের অভিজ্ঞতা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য় করে তুলে ধরত হলে ভালো বাজেট ভীষণ জরুরী ৷
প্রশ্ন: চিত্রনাট্য লেখার সময়, প্রধান চরিত্র হিসাবে কোনও বিশেষ অভিনেতার মুখ কী আপনার মাথায় ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ ৷ আমি মনে মনে কয়েকজনকে তো ঠিক করেছিলামই ৷ তাঁদের কারোর কারোর সঙ্গে এখন আমরা কথাও বলছি। রাজা পৃথু রাইয়ের জন্য, আমি শাহিদ কাপুরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি ।
প্রশ্ন: ছবির কাস্টিংয়ের কাজ কি শেষ?
উত্তর: না, কিছু প্রধান চরিত্র নিয়ে এখনও কথা চলছে ৷
প্রশ্ন: এই ধরনের ঐতিহাসিক ছবি আজকাল খুবই বিতর্কের মুখে পড়ছে ৷ তাই আপনার এই ধরনের শোরগোল নিয়ে কী স্ট্র্যাটেজি নিতে চলেছেন যদি একটু বলেন ?
উত্তর: আমি এই নিয়ে ভীষণ সংবেদনশীল এবং একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা নিয়েই বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করছি ৷ কারণ আমি জানি এই ধরনের ঐতিহাসিক গল্পগুলি বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আবেগী করে তুলতে পারে ৷ তাই আমরা এই বিষয়ে যে কোনও বিকৃতি এবং ভুল উপস্থাপনা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব ৷ যাতে সম্ভাব্য বিতর্ক বা আপত্তি কম হয় ৷ আমার লক্ষ্য হল, একটি এমন ছবি তৈরি করা যা নিয়ে সঠিকভাবে গবষণা করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে যা প্রামাণিক এবং আকর্ষক হবে।
প্রশ্ন: হিন্দি সিনেমায়, সঞ্জয় লীলা বনশালি এবং আশুতোষ গোয়ারিকরের মতো পরিচালকরা দারুণ দারুণ ঐতিহাসিক ছবি তৈরি করেছেন ৷ রয়েছেন আরও অনেকেই ৷ তাঁদের থেকে আপনার ছবিকে আলাদা করতে ঠিক কতটা পরিশ্রম দরকার বলে মনে করেন?
উত্তর: অবশ্য়ই স্বীকার করতেই হবে সঞ্জয় লীলা বনশালি এবং আশুতোষ গোয়ারিকর অসাধারণ সব ঐতিহাসিক ছবি তৈরি করেছেন ৷ তাঁদের অনন্য ভিজ্যুয়াল এফেক্টস এবং গল্প বলার শৈলি অনুরাগীদের মনে দৃঢ় ছাপ রেখে গিয়েছে ৷ তবে আমি এক্ষেত্রে পরিচালক হিসােবে অন্য় ছবি থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার বিরোধী ৷ এই ছবি নিয়েও আমার একটা নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা রয়েছে তার লুক, স্পিরিট বা অনুভূতি ঠিক কেমন হবে তা নিয়ে ৷
প্রশ্ন: ছবিটি কবে মুক্তি পাবে তা নিয়ে যদি একটু আভাস দেন?
উত্তর: আমরা কাস্টিং প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা আগামী বছরের শেষে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আনার পরিকল্পনা করছি।