হায়দরাবাদ, 26 সেপ্টেম্বর: বলিউডের এভারগ্রিন হিরোদের মধ্যে সবার আগে যাঁদের নাম আসে, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম ৷ তাঁর অভিনয়, বিশেষ ম্যানারিজম আজও তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছে ৷ সাদা-কালো যুগের সেই কিংবদন্তি অভিনেতা আজও রোম্যান্সের রাজা হিসেবে পরিচিত সিনেপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় ৷ দেব আনন্দ ৷ আজ তাঁর শততম জন্মবার্ষিকী ৷
চলচ্চিত্রে দেব আনন্দের যাত্রা শুরু হয়েছিল 1940-এর দশকে ৷ রুপোলি পর্দায় তাঁর প্রথম উপস্থিতি থেকেই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইনিই আগামী দিনের তারকা ৷ পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে জন্মগ্রহণকারী দেব আনন্দ ছিলেন অভিনয় দক্ষতা, স্টাইল ও অপ্রতিরোধ্য ক্যারিশমার এক অনন্য মিশ্রণ ৷ আর তার জোরেই তিনি তাঁর সমসাময়িকদের থেকে আলাদা হিসেবে থেকে গিয়েছেন মানুষের স্মৃতিতে ৷ শুধু অভিনয় নয়, তিনি যেভাবে নিজেকে ক্যারি করতেন, যেভাবে সাজতেন, যেভাবে হাসতেন, যেভাবে হাঁটতেন – এই সবই তাঁকে আইকনিক করে তুলেছিল ৷ তিনি মোহিত করে দিয়েছেন মহিলা দর্শকদের ৷ তাঁকে অনুকরণ করতেন পুরুষরা ৷
দেব আনন্দের সিগনেচার স্টাইল, তাঁর এভারগ্রিন আবেদন তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে ৷ তাঁর ফ্যাশন, তাঁর স্টাইল ছিল সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ৷ স্যুটের সঙ্গে গলায় রঙিন স্কার্ফ, বা স্টাইলিশ টুপি - এমনই নানা কম্বিনেশনে তিনি নিজেকে করে তুলতেন অনন্য ৷ মাথা হেলিয়ে তাঁর গালভরা হাসি যেন সংক্রমিত করত দর্শকদের ৷ অনায়াসেই 50-এর দশকের ডেবোনেয়ার লুক থেকে 70-এর দশকের লম্বা সাইডবার্ন এবং কলারযুক্ত শার্টের লুকে নিজেকে রূপান্তরিত করেছেন ৷ তাঁর করা ফ্যাশনই হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের স্টাইল স্টেটমেন্ট ৷ তিনি ছিলেন ট্রেন্ড সেটার ৷
আরও পড়ুন: বিয়ের পর প্রথমবার জনসমক্ষে 'রাগনীতি', দেখুন ভিডিয়ো
দেব আনন্দের আবেদন, তাঁর আত্মবিশ্বাস ও ক্যারিশমা মানুষকে চুম্বকের মতো আকৃষ্ট করত । অন-স্ক্রিন তাঁর চরিত্রগুলি তাঁর বাস্তব জীবনের ব্যক্তিত্বকেও প্রতিফলিত করেছে ৷ তিনি একজন মুক্ত-প্রাণ এবং সাহসী মানুষ ছিলেন যিনি নিজের শর্তে জীবনযাপন করেছেন । এর ফলে তিনি জনসাধারণের কাছে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছেন ৷ যা তাঁকে কেবল পর্দায় নায়কই নয়, বাস্তবের হিরো করে তুলেছে ৷
একজন অভিনেতা হিসেবে দেব আনন্দের বহুমুখিতা তাঁকে এভারগ্রিন করে রেখেছে ৷ ইনটেন্স ড্রামা বা ভরপুর রোম্যান্স, কিংবা আদর্শবাদী যুবক বা পরিশীলিত ভদ্রলোক - যে কোনও চরিত্রেই তিনি সাবলীল ৷ সময় ও ভাষার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাঁর আবেগ ও অভিনয় দিয়েই দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার অনন্য ক্ষমতা ছিল দেব আনন্দের ।
তাঁর অভিনয় দক্ষতার বাইরেও, দেব একজন পরিচালক, লেখক এবং প্রযোজক ছিলেন । তিনি তাঁর উদ্ভাবনী গল্প বলার এবং সিনেম্যাটিক কৌশল নিয়ে পরীক্ষা করার অভ্যেসের জন্য পরিচিত । তাঁর প্রযোজিত গাইডে ওয়াহিদা রহমানের সঙ্গে তাঁকে প্রধান চরিত্রে দেখা গিয়েছে ৷ এই ছবি তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার একটি প্রমাণ এবং এটি একটি চিরন্তন ক্লাসিক হিসেবে রয়ে গিয়েছে ।
ভারতীয় সিনেমা ও সংস্কৃতিতে দেব আনন্দের প্রভাব অপরিসীম । ছয় দশকের কর্মজীবনে দেব আনন্দ একজন সাংস্কৃতিক আইকন হয়ে উঠেছিলেন । তিনি শুধু একজন চলচ্চিত্র তারকাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগের প্রতীক, ক্লাসিক সিনেমার ম্যাজিক মেমারি দেব আনন্দ ।