ETV Bharat / entertainment

'শুধু গান গাইলেও মহীরুহ হতেন সৌমিত্র স্যর', 'অপু'র জন্মদিবসে স্মৃতি রোমন্থনে দেবনাথ

Debnath Chatterjee: থিয়েটার করার দরুণ খুব কাছ থেকে দেখেছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ৷ সান্নিধ্য পেয়েছেন ৷ শিখেছেন অনেক কিছু ৷ আজ তাঁর 89তম জন্মদিবসে ফেলে আসা সেই স্মৃতি রোমন্থন করলেন অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় ৷ শুনল ইটিভি ভারত ৷

Etv Bharat
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিবসে স্মৃতিচারণ দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 19, 2024, 12:03 PM IST

Updated : Jan 19, 2024, 2:16 PM IST

কলকাতা, 19 জানুয়ারি: সত্যজিৎ রায়ের ছবি থেকে তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের হাতেখড়ি। 'অপুর সংসার' ছবির হাত ধরেই টলিউড সফর শুরু করেন বাঙালির আর এক আইকন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তি অভিনেতার 89তম জন্মদিনে তাঁকে কাছ থেকে দেখার অনেক স্মৃতি ভাগ করে নিলেন তাঁর নাট্যসঙ্গী দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে 'ফেরা' নাটক-সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন 'হত্যাপুরী', 'লালবাজার', 'লাভ ম্যারেজ' খ্যাত অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়।

অভিনেতা বলেন, "আমি স্যার বলে ডাকতাম। স্যর ছিলেন শিশু মনের এক সহজ সরল মানুষ। একইভাবে খাদ্যরসিক এবং রবীন্দ্রানুরাগী। কতটা শিশু মনের ছিলেন সেটা বলি, একবার বেহালার শরৎ সদন থেকে নাটক সেরে লিফটে উঠেছি বেরোব বলে। লিফটে হঠাৎ একটা মিউজিক বেজে ওঠে। স্যর তালে তালে নাচতে শুরু করেন। সেদিন নাটকে প্রচুর হাততালি পড়েছিল। আর ওটা ছিল স্যরের সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। আবার কোনও জনপ্রিয় নাটকে যদি কোনও একদিন হাততালি না পড়ত তখন বলতেন, দর্শকরা কি মারা গেছেন? এরকম ছিলেন আমার স্যর।..."

সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজির শেষ ভাগে অভিনেতা অপূর্ব কুমার রায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। তিনি এরপর যেমন তপন সিংহের ছবিতে অভিনয় করেছেন তেমনই মূল স্রোতের বাংলা সিনেমারও নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। নবীন পরিচালকদের ছবিতেও চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। উৎসাহ দিতেন তাঁদের। বলেছিলেন, "আমিও নতুন ছিলাম একদিন। তাই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। ওঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখা যায়।" বাংলা ধারাবাহিকেও তাঁকে দেখা গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে। 1959 সাল থেকে 2020 অবধি অব্যাহত ছিল তাঁর কার্যকাল। নাটক থেকে সিনেমা, ধারাবাহিক এমনকী বাচিক শিল্পেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "স্যরের কাছেই শোনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন মারা যান স্যরের তখন খুব অল্প বয়স। সেই তখন থেকেই নিয়মিত রবীন্দ্র চর্চা করতেন উনি। তা সে কবিতা পাঠ হোক বা সঙ্গীত চর্চা। জীবনের শেষদিন অবধি রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া থাকেননি স্যর। দূরে কোথাও শো করতে গেলে সেখানে ভালো প্রশংসা পেলে ফেরার পথে গাড়িতে একটার পর একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। আমরা রেকর্ড করে রাখতাম। কিন্তু কোথাও দিতে পারতাম না। ওটা একান্ত নিজস্ব ছিল আমাদের। স্যর যদি শুধুই গান গাইতেন তাহলেও মহীরুহ হতেন।"

অভিনেতা আরও বলেন, "স্যর সিঙাড়া, ডিমের ডেভিল, জিলিপি খেতে খুব ভালোবাসতেন। প্রায়ই তার জোগান দিতে হত আমাদের। আবার কোথাও কেউ প্লেট সাজিয়ে দিলে অতটা খেতে না পারলে আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভুলতেন না। খেতে এবং খাওয়াতে দুইই ভালোবাসতেন। "

আবালবৃদ্ধবনিতার আজও হার্টথ্রব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর হার্টথ্রব ছিলেন কে? এই প্রশ্নের উত্তর অভিনেতার কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "একবার নয়, একাধিকবার স্যর আমাদের বলেছেন যে তিনি মহানায়ক উত্তমকুমারের ফ্যান। ওই হাসি আর কেউ হাসতে পারবেন না। ওই চাহুনি আর বেশ কিছু ছবিতে ওই অভিনয় উত্তম বাবু ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না। আর স্যরের প্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। বলতেন, সাবু সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী। উনি কখনও সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী কিংবা কানন দেবীকে সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী বলেননি।" আজ অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিবসে শুভেচ্ছা কামনা রইল ইটিভি ভারতের তরফে ৷

আরও পড়ুন

1. 'মেগা সিরিয়াল মেয়েরা টানলেও পারিশ্রমিকের অংক বেশি পুরুষদের', ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অকপট অনন্যা

2. সাহিত্য ও সঙ্গীতকে আঁকড়ে বাঁচার শিক্ষা তাঁর থেকেই, মায়ের জন্মদিনে আবেগঘন অনুপম

3. শুটিং লোকেশনের খোঁজে দেব, কয়লাখনিতে টিম 'খাদান'

কলকাতা, 19 জানুয়ারি: সত্যজিৎ রায়ের ছবি থেকে তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের হাতেখড়ি। 'অপুর সংসার' ছবির হাত ধরেই টলিউড সফর শুরু করেন বাঙালির আর এক আইকন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তি অভিনেতার 89তম জন্মদিনে তাঁকে কাছ থেকে দেখার অনেক স্মৃতি ভাগ করে নিলেন তাঁর নাট্যসঙ্গী দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে 'ফেরা' নাটক-সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন 'হত্যাপুরী', 'লালবাজার', 'লাভ ম্যারেজ' খ্যাত অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়।

অভিনেতা বলেন, "আমি স্যার বলে ডাকতাম। স্যর ছিলেন শিশু মনের এক সহজ সরল মানুষ। একইভাবে খাদ্যরসিক এবং রবীন্দ্রানুরাগী। কতটা শিশু মনের ছিলেন সেটা বলি, একবার বেহালার শরৎ সদন থেকে নাটক সেরে লিফটে উঠেছি বেরোব বলে। লিফটে হঠাৎ একটা মিউজিক বেজে ওঠে। স্যর তালে তালে নাচতে শুরু করেন। সেদিন নাটকে প্রচুর হাততালি পড়েছিল। আর ওটা ছিল স্যরের সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। আবার কোনও জনপ্রিয় নাটকে যদি কোনও একদিন হাততালি না পড়ত তখন বলতেন, দর্শকরা কি মারা গেছেন? এরকম ছিলেন আমার স্যর।..."

সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজির শেষ ভাগে অভিনেতা অপূর্ব কুমার রায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। তিনি এরপর যেমন তপন সিংহের ছবিতে অভিনয় করেছেন তেমনই মূল স্রোতের বাংলা সিনেমারও নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। নবীন পরিচালকদের ছবিতেও চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। উৎসাহ দিতেন তাঁদের। বলেছিলেন, "আমিও নতুন ছিলাম একদিন। তাই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। ওঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শেখা যায়।" বাংলা ধারাবাহিকেও তাঁকে দেখা গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে। 1959 সাল থেকে 2020 অবধি অব্যাহত ছিল তাঁর কার্যকাল। নাটক থেকে সিনেমা, ধারাবাহিক এমনকী বাচিক শিল্পেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "স্যরের কাছেই শোনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন মারা যান স্যরের তখন খুব অল্প বয়স। সেই তখন থেকেই নিয়মিত রবীন্দ্র চর্চা করতেন উনি। তা সে কবিতা পাঠ হোক বা সঙ্গীত চর্চা। জীবনের শেষদিন অবধি রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া থাকেননি স্যর। দূরে কোথাও শো করতে গেলে সেখানে ভালো প্রশংসা পেলে ফেরার পথে গাড়িতে একটার পর একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। আমরা রেকর্ড করে রাখতাম। কিন্তু কোথাও দিতে পারতাম না। ওটা একান্ত নিজস্ব ছিল আমাদের। স্যর যদি শুধুই গান গাইতেন তাহলেও মহীরুহ হতেন।"

অভিনেতা আরও বলেন, "স্যর সিঙাড়া, ডিমের ডেভিল, জিলিপি খেতে খুব ভালোবাসতেন। প্রায়ই তার জোগান দিতে হত আমাদের। আবার কোথাও কেউ প্লেট সাজিয়ে দিলে অতটা খেতে না পারলে আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভুলতেন না। খেতে এবং খাওয়াতে দুইই ভালোবাসতেন। "

আবালবৃদ্ধবনিতার আজও হার্টথ্রব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর হার্টথ্রব ছিলেন কে? এই প্রশ্নের উত্তর অভিনেতার কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "একবার নয়, একাধিকবার স্যর আমাদের বলেছেন যে তিনি মহানায়ক উত্তমকুমারের ফ্যান। ওই হাসি আর কেউ হাসতে পারবেন না। ওই চাহুনি আর বেশ কিছু ছবিতে ওই অভিনয় উত্তম বাবু ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না। আর স্যরের প্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। বলতেন, সাবু সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী। উনি কখনও সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী কিংবা কানন দেবীকে সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী বলেননি।" আজ অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিবসে শুভেচ্ছা কামনা রইল ইটিভি ভারতের তরফে ৷

আরও পড়ুন

1. 'মেগা সিরিয়াল মেয়েরা টানলেও পারিশ্রমিকের অংক বেশি পুরুষদের', ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অকপট অনন্যা

2. সাহিত্য ও সঙ্গীতকে আঁকড়ে বাঁচার শিক্ষা তাঁর থেকেই, মায়ের জন্মদিনে আবেগঘন অনুপম

3. শুটিং লোকেশনের খোঁজে দেব, কয়লাখনিতে টিম 'খাদান'

Last Updated : Jan 19, 2024, 2:16 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.