কলকাতা, 27 নভেম্বর: টানা 10টি ম্যাচ জেতার পরেও বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার ৷ ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবারের জন্য জিতে নিয়েছে বিশ্বকাপ। আর ভারতের এই হারে বাংলাদেশ জুড়ে চলেছে উচ্ছ্বাস। একাংশের বক্তব্য, "বাংলাদেশ জিতলেও এত খুশি হতাম না যতটা ভারতের হারে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা ভারতকে সহ্য করতে পারি না।..." স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের মন্তব্য মেনে নিতে পারছে না এপার বাংলার মানুষজন ৷ এই ধরনের মন্তব্যকে সমর্থন করছেন না ওপার বাংলার শিল্পীরাও ৷ তাঁদের মতে এই ধরনের মন্তব্য যাঁরা করছেন তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন ওপার বাংলার শিল্পীরা? সরেজমিনে খোঁজ নিল ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি।
ওপার বাংলার সঙ্গীত শিল্পী স্বপ্নীল সজীব ইটিভি ভারতকে বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধু দেশ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র। একটা ক্রিকেট খেলা আমাদের সম্পর্কে আঘাত হানতে পারবে না কখনও। শুধুমাত্র একটা কাঁটাতার দুই বাংলার মধ্যে বাধা হতে পারে না। আমি এটাকে একটা বাংলাই ভাবি। একজন মানুষ খেলায় যে কোনও দলকে সমর্থন করতে পারে। তা বলে অন্য দলের হার দেখে এরূপ উচ্ছ্বাস আমি সমর্থন করি না। একইভাবে বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় মানুষের এরূপ আচরণ দেখে গোটা বাংলাদেশকে বিচার করলে চলবে না ৷ সবাই তো একরকম কাজ করেনি। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান চিরকাল চলতে থাকবে, এই একটা ঘটনায় তা কোনওদিনই বন্ধ হতে পারে না। আমি বলব, যারা ভারতের হারে এমন উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে তাদের বুদ্ধির বিকাশ হোক এবং ভাবনা বিকশিত হোক।"
অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস বলেন, "ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ভারত থেকে যাঁরা বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়েছেন তাঁদের অনেকেরই পূর্বসূরিরা বাংলাদেশের। আবার আমার বোন ভারতে থাকে। আমি এখানে এলে আমার মনে হয় না, আমি অন্য দেশে এসেছি। আমার মনে হয় আমি আমার আরেকটা বাড়িতে এসেছি। খেলায় হার জিত আছে। যাঁরা জিতেছে তাঁদের শুভেচ্ছা। আর যাঁরা হেরেছে তাঁদেরকে ভালো করতে হবে। ভারতের পরাজয়ের পর যারা উচ্ছ্বাস করেছে তাঁদের চিহ্নিত করা হোক। বাংলাদেশের সবাই তো ভারতের পরাজয়ে খুশি নয়। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। তাঁদের থেকে আমরা সবথেকে বেশি উপকার পাই। তা সে সবজি হোক বা ওষুধ কিংবা শপিং। বন্ধুর সঙ্গে কন্ট্রোভার্সি করা উচিত নয়। যাঁরা এটা করেছেন, তাঁদের জন্য বাকিদের শাস্তি পাওয়াটাও ঠিক নয়।"
প্রখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তাঁর সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "ইন্ডিয়া বিশ্বকাপ হারার পর যাঁরা বাংলাদেশে আনন্দ উদযাপন করেছে তাঁরা স্বাধীনতা বিরোধী, 71-এ যাঁরা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, তাঁদের রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরাই এখন ইন্ডিয়া বিরোধী।" এই নিয়ে অভিনেতাকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
সম্প্রতি ওপার বাংলার অভিনেতা শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ইধিকা পাল। তাঁর কাছে এই ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "প্রতিবেশীদের সঙ্গেও তো আমাদের কথা কাটাকাটি, মনোমালিন্য হয়। এটাও তেমনই। এটা বেশিদিনের জন্য না। ঠিক হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। দু'টো বাংলাই একই রকমের। একটা কাঁটাতার শুধু বিচ্ছিন্ন করেছে দেশ দু'টোকে। বন্ধুত্ব এদের চিরকাল একই থাকবে।" অভিনেত্রী জয়া এহসান এই ব্যাপারে মত প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, "আমি ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী নই। তাই একে ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে দুই বাংলায়, তা নিয়েও আমি কোনও কথা বলব না।"
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি পণ্য এদেশে বিশেষ করে বাংলায় বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল দেখতে নারাজ নেট নাগরিকদের একাংশ। এমনকী উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি, স্টল দিতে বাধ্য করা হলেও কেউ যেন না যান ওই স্টলে। শুধুমাত্র দাবি নয়, এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও। স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ বিরোধিতা করেছেন, কেউ আবার পক্ষেও রয়েছেন। শুধু রাসমেলা উৎসবই নয়, আলিপুরদুয়ারে ডুয়ার্স উৎসবেও এই একই ধরনের দাবি উঠেছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী দার্জিলিং-এর হোটেলগুলিও বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং নেবে না বলে সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
1. 16 বছর পর কফি কাউচে রানি-কাজল, করণকে 'এক্সপোজ' করার হুমকি!
2. ব্রিটিশ সেন্সর বোর্ডে পাশ 'অ্যানিম্যাল', প্রাপ্তবয়স্ক রেটিংয়ের বিনিময়ে ছাড়পত্র
3. 'অ্যানিম্যাল' ছবির প্রি-রিলিজ ইভেন্টে প্রধান অতিথি এসএস রাজামৌলি ও মহেশ বাবু, হায়দরাবাদে বসছে আসর