কলকাতা, 5 জুলাই: আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী বঙ্গ সম্মেলন অর্থাৎ নর্থ আমেরিকা বেঙ্গলি কনফারেন্সে গিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও দুর্ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়েছে বাংলার তাবড় শিল্পীদের ৷ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, জয়তী চক্রবর্তী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মতো স্বনামধন্য শিল্পীরা স্বয়ং এই অভিযোগ জানিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ৷ এই নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় ৷
বঙ্গ সম্মেলনে যাঁরা গিয়েছিলেন: দীর্ঘ সময় ধরে কলকাতা ও বাংলাদেশের বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত হয়ে আসছে আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলন ৷ চলতি বছর 30 জুন থেকে 2 জুলাই পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেই উপলক্ষে আটলান্টা পৌঁছে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, জয়তী চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের মতো নামী-দামি সঙ্গীতশিল্পীরা ৷ এ ছাড়াও গিয়েছিলেন দেবশংকর হালদার, সোহিনী সেনগুপ্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চক্রবর্তী, সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো নাট্যশিল্পীরাও ৷
ক্ষোভ প্রকাশ শিল্পীদের: কিন্তু সেখানে যাওয়ার দিন থেকে বাংলার শিল্পীদের নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ পৌঁছনোর পর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা না থাকা, হোটেলে পৌঁছনোর জন্য গাইড করার মতো কেউ না থাকা, শিল্পীদের স্বাগত জানাতে উদ্যোক্তাদের অনুপস্থিতি, অনুষ্ঠানের রদবদল, অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে দেওয়া, এমনকী প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন শিল্পীরা ৷
রুষ্ট পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী: পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এই অভিযোগ জানিয়ে উদ্যোক্তাদের একটি মেইল করেছেন, যা ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় ৷
সেই মেইলে শিল্পী লিখেছেন, "আমি ভাবিনি সেখানে আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা থাকবে না ৷ দুপুরের খাবার আসবে বিকেল 4টের সময় ৷ হোটেলের ঘরেও ঢুকতে পারিনি আমরা ৷ বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের ৷ প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী যেখানে আমাকে এত সম্মান দেন, সেখানে আমার মতো একজন প্রবীণ শিল্পীকে নিয়ে গিয়ে এমন অপমান করা হল ৷ আমার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাইনি ৷"
আরও পড়ুন: আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কী বলছে সেলেব মহল ?
ক্ষুব্ধ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়: সঙ্গীতশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় অজয় চক্রবর্তীর এই মেইলটি নিজের ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরে এই ঘটনায় তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন ৷ অনিন্দ্য লিখেছেন যে, "ভারতের সিনিয়র-মোস্ট কিংবদন্তি শিল্পীকে যদি এমন চিঠি লিখতে হয়,তাহলে বেঙ্গলি কনফারেন্স করে লাভ কী? এই অসম্মানটুকু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রাপ্য বুঝি !! বাঙালি আর কত নীচে নামবে ?"
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
ফেবু লাইভে ক্ষোভপ্রকাশ জয়তীর: বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া আর এক শিল্পী জয়তী চক্রবর্তী ফেসবুক লাইভ করে একরাশ অভিযোগ জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে ৷ তিনি সরাসরি নাম করে নিশানা করেছেন অন্যতম আয়োজক অভীক দাশগুপ্তের দিকে, যাঁর আমন্ত্রণে বঙ্গ সম্মেলনে গিয়েছিলেন জয়তী ৷ তাঁর কথায়, "অভীক দাশগুপ্ত শিল্পীকে শিল্পী বলে মনেই করেন না ৷ তিনি ভাবছেন, আমাদের বঙ্গ সম্মেলনে নিয়ে গিয়ে টাকা দিয়ে ধন্য করে দিচ্ছেন ৷ মিনিমান ভদ্র ব্যবহার, সম্মান আমরা শিল্পীরা আশা করি ৷ অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করা হয়েছে ৷ আমারা পৌঁছে 12-14 ঘণ্টা কোনও খাবার পাইনি ৷ অনেক শিল্পীকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি, মাইক টেস্ট করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকী এখনও অনেক শিল্পী নিজেদের প্রাপ্য টাকাটাও পাননি ৷ আপনারা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর লেখা দেখেছেন ৷ নিজের চোখে গুরুজির যে অসম্মান দেখলাম সেটা মেনে নিতে পারছি না ৷"
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
জয়তী চক্রবর্তীর সঙ্গে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে আমি দেশে ফেরার পথে । এয়ারপোর্টে যাচ্ছি । সবাই আজকেই ফিরছি না । ভাগে ভাগে টিকিট হয়েছে আমাদের । আজ আমি, রাঘবদা (চট্টোপাধ্যায়), সাহানা ব্যানার্জি, যতদূর জানি তেজেনদা (তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার) ফিরছেন । বাকিরা একে একে ফিরবেন । 6 তারিখ অনেক রাতে বাড়ি ফিরব আমরা । আর এ বারের এনএবিসি'র অভিজ্ঞতার সবটা আমি আমার ফেসবুক লাইভে বলেছি । এর বেশি আর কিছু বলার নেই ।"
এ বারের বঙ্গ সম্মেলনে তিক্ত অভিজ্ঞতার পর অনেক শিল্পী বঙ্গ সম্মেলন বয়কটের কথা ভাবছেন ৷ মার্কিন মুলুকে বাংলার শিল্পীদের এই অপমান দেখে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন নেট নাগরিকরাও ৷