কলকাতা, 30 সেপ্টেম্বর: সিনে সমালোচকদের অনেকের কাছে, 'তিনি ইন্ডাস্ট্রি' ৷ আবার তাঁকে কেউ একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি হেসে বলেন, "প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ইন্ডাস্ট্রি নন। তাঁকে বড়জোর ইন্ডাস্ট্রির সিইও বলা যেতে পারে ৷"1962 সালে আজকের দিনে জন্ম হয় বাংলার এই সুপারস্টার নায়কের ৷ একসময় তাঁর নামে সিঙ্গল স্ক্রিনে ভিড় করতেন দর্শকরা ৷ সেদিনের কথা বলতে হলে চন্দ্রিলের গানের নকল করে বলতে ইচ্ছা করে, "লাস্ট সিনে স্লো মোশানে কী ঢিসুম ঝাড়ে গুরু ৷" আজ সেই বুম্বাদা পার করলেন আরও একটি বসন্ত ৷ আজ সেই বুম্বা একেবারে অন্য মানুষ!
ষাট পেরিয়ে আসা এই অভিনেতার ঝুলিতে রয়েছে 'শশুরবাড়ি জিন্দাবাদ', 'অন্নদাতা', 'বিক্রম সিংহ', 'রাজু আঙ্কেল', 'অন্যায় অত্যাচার'-এর প্রচুর কমার্শিয়াল ছবি ৷ কখনও তাঁর নায়িকা হয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কখনও আবার রচনা বন্দোপাধ্যায়। আবার কখনও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন ৷ একসময় তাঁর নামটাই বাংলার মানুষের কাছে হয়ে গিয়েছিল 'পোহেনজিৎ' ৷ তিনি নিজেই একাধিক ইন্টারভিউতে জানান, তাঁর এই নামটা বেশ উপভোগও করেন তিনি ৷
তবে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন অভিনেতা ৷ ঠিক যেমন 'পোহেনজিৎ' ইমেজটিকে ভেঙে চুরমার করে বেরিয়ে এসে তিনি অভিনয় করেছেন কাকাবাবু কিংবা লালন সাঁই অথবা প্রবীর রায়চৌধুরীর মতো সিরিয়াস চরিত্রে ৷ কাজ করছেন হিন্দি ওয়েব সিরিজেও ৷ এক্ষেত্রে বলতে হবে প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের কথাও ৷ তাঁর হাত ধরেই একসময় বদলে যায় বাংলার বুম্বাদার পথ চলা ৷ আজ তাঁর জন্মদিনে আসুন ফিরে দেখি এমনই কিছু ছবি ৷
দোসর: সালটা 2006 ৷ বাংলার তুমুল জনপ্রিয় এই নায়ক হাত ধরলেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ৷ 'দোসর' ছবিতে প্রসেনজিৎ অভিনয় করেন কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে ৷ পরকিয়ায় লিপ্ত এক স্বামী তার বান্ধবীকে নিয়ে ট্রিপ থেকে ফেরার সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ৷ বান্ধবীর মৃত্যু হলেও বেঁচে যায় কৌশিক ৷ এরপর তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে তৈরি হয় ছবি ৷ এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও জিতে নেন বুম্বাদা ৷
খেলা: ছবি তৈরির জন্য় কি একজন পরিচালক একটি বাচ্চাকে কিডন্যাপ পর্যন্ত করতে পারেন? ঠিক এই নিয়েই তৈরি হয়েছে 'খেলা' ছবিটি ৷ ছবিতে প্রসেনজিৎ অভিনয় করেছেন পরিচালকের ভূমিকায় ৷ যে তার নতুন ছবির জন্য একটি শিশুকে বাবা মায়ের অমতে অপহরণ করে নিয়ে আসে ৷ ছবিতে অভিনয় করেছেন মনীষা কৈরালা রাইমা সেন থেকে শংকর চক্রবর্তীর মতো তাবড় অভিনেতারা ৷ ঋতু-বুম্বা জুটির কথা বললে মনে পড়বে 'সব চরিত্র কাল্পনিক', 'চোখের বালি'র মতো ছবির কথাও ৷
আরও পড়ুন: আর্তদের মসিহা টাইগার! শুক্রবার মুক্তি পেল 'গণপথ' ছবির টিজার
মনের মানুষ: সালটা 2010 ৷ কেরিয়ারে আরও একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে হ্যাঁ বললেন বুম্বাদা ৷ রূপোলি পর্দায় তাঁকে লালন সাঁই বানালেন গৌতম ঘোষ ৷ বাউল এই মানুষটি বাংলা লোক সঙ্গীতের দিকপাল ৷ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি জায়গা করে নেন উপন্যাসের পাতায় ৷ আর গৌতম তাঁকে নিয়ে আসেন রূপোলি পর্দায় ৷ এই ছবিটিও জিতে নিয়ে জাতীয় পুরস্কার ৷
মিশর রহস্য: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একসময় একটি অধ্যায় তৈরি করে ঋতু-বুম্বা জুটি ৷ তেমনই সাড়া ফেলে দেওয়া আরেকটি জুটি হল সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিতের জুটি ৷ আজও সমান প্রাসঙ্গিক এই জুটির রসায়ণ ৷ সৃজিতের হাত ধরেই প্রথমবার গোয়েন্দা হওয়ার স্বাদ পান বুম্বাদা ৷ কাকাবাবুকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্য়েই হয়ে গিয়েছে ৷ চরিত্রটিকে ইতিমধ্য়েই বেশ জনপ্রিয়ও করে তুলেছেন বুম্বাদা ৷
বাইশে শ্রাবণ: সৃজিতের এই ছবিতে প্রসেনজিৎ অভিনয় করেন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় ৷ চরিত্রের নাম প্রবীর রায়চৌধুরী। আচরণের জন্য পুলিশ থেকে চাকরি যায়। দীর্ঘদিন পর একটি সিরিয়াল কিলিংয়ের তদন্ত করতে আবার তার কাছেই ফিরে যেতে হয় পুলিশকে। সে তদন্ত ভার নেয়। খুনির কাছাকাছি পৌঁছেও যায়। তারপর জানা যায় খুনি সে নিজেই। ছবির একটি প্রিক্যুয়ালও মুক্তি পেতে চলেছে আগামী দুর্গাপুজোয় ৷
আরও পড়ুন: মিমির পর ওয়েব দুনিয়ায় পা রাখছেন দেবশ্রী-চিরঞ্জিৎ, প্রকাশ্যে এল পোস্টার
গুমনামি: বুম্বাদা নিজেই স্বীকার করেছিলেন প্রথমবার তিনি ফিরিয়ে দেন সৃজিতের অনুরোধ ৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল সুভাষ চন্দ্র বসুর চরিত্রে তাঁকে মানাবে না ৷ কিন্তু শেষমেশ সৃজিতের অনুরোধেই রাজি হন তিনি ৷ 2019 সালে মুক্তি পায় এই ছবি ৷ মুক্তির পরেও একাধিক বিতর্কের মুখে পড়ে ছবিটি।