কলকাতা, 10 মার্চ : ঠা-ঠা রোদ্দুরে লম্বা লাইন ৷ রেশন দোকানের কর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি ৷ পণ্যের মান আর পরিমাণ নিয়ে ‘সমঝোতা’ ৷ ন্যায্যমূল্যের দোকানে এসে বঙ্গবাসীর এমন অভিজ্ঞতা ভূরি ভূরি ! যা বদলাতে বদ্ধপরিকর গেরুয়াশিবির ৷ তাদের দাবি, রাজ্য়ে বিজেপির সরকার গঠিত হলেই আমূল বদলে যাবে রেশন বণ্টনের ছবি ৷ কোনও উপভোক্তাকেই রেশন পেতে আর দোকানে দৌড়তে হবে না ৷ বদলে পণ্য় পৌঁছে যাবে গ্রাহকদের দরজায় !
বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলার ক্ষমতা দখল করতে পারলেই ব্লকে ব্লকে তৈরি খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের গুদামগুলিতে মোতায়েন করা হবে মোবাইল ভ্য়ান ৷ সেই ভ্য়ানে পণ্য বোঝাই করে তা নিয়ে যাওয়া হবে উপভোক্তাদের দরজা পর্যন্ত ৷ বাড়ি বাড়ি ঘুরে চলবে রেশন বণ্টন ৷ বিজেপি সূত্রে খবর, তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারের অন্যতম চমক রাজ্য়ের রেশন ব্য়বস্থার ভোলবদল ৷ গেরুয়া শিবিরের পরিকল্পনা যে অভিনব ও আকর্ষণীয়, তা নিয়ে সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, এত বড় একটা কর্মকাণ্ড সফল করতে হলে যে পরিমাণ পরিকাঠামো ও অর্থের দরকার, তার বন্দোবস্ত হবে কীভাবে ? তাছাড়া, উপভোক্তারাই বা তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বরাত দেবেন কীভাবে ? রেশন থেকে যাঁরা নিয়মিত চাল, গম, চিনি কেনেন, তাঁদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত ৷ তাঁদের মধ্যে শিক্ষার হারও খুব একটা সন্তোষজনক নয় ৷ প্রশ্ন উঠছে, নয়া ব্য়বস্থায় অনলাইন অর্ডারের বন্দোবস্ত করা হলে এমন মানুষগুলোর পক্ষে তা কতটা সহায়ক হবে ? আর যদি অনলাইন অর্ডারের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে এলাকা পিছু প্রত্য়েক পরিবারের প্রয়োজন মাফিক পণ্য সরবরাহ করা হবে কীভাবে ? আশা করা হচ্ছে, বিজেপির ইস্তাহারেই এসবের বিস্তারিত বিবরণ থাকবে ৷
চমকের এখানেই শেষ নয় ৷ বাংলা যে বিজেপির পাখির চোখ, তা বোঝাতে ইস্তাহার প্রকাশকেও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে গেরুয়া শিবির ৷ দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য়ের কোনও নেতা নন, বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ৷ সম্প্রতি রাজ্য়ে এসে 294টি বিধানসভা কেন্দ্রেই মোবাইল ভ্য়ান চালু করেন নাড্ডা ৷ সেই গাড়িতে বসানো হয় একটি করে ড্রপ বক্স ৷ সেই ড্রপ বক্সে আমজনতাকে তাঁদের দাবি দাওয়া ও পরামর্শ জানাতে বলা হয় ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, ড্রপ বক্সে জমা হওয়া মতামত বিচার করেই তৈরি হচ্ছে এবারের ইস্তাহার ৷
আরও পড়ুন : ইস্তাহার নিয়েও বিবাদ কংগ্রেসের অন্দরে
এখনও পর্যন্ত যেটুকু জানা গিয়েছে, সেই মোতাবেক, বিজেপির ইস্তাহারে প্রথমের দিকেই থাকছে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি চালুর আশ্বাস ৷ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে গরিবের স্বাস্থ্যরক্ষারও ৷ বলা হয়েছে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্য়সাথীর বদলে চালু করা হবে আয়ুষ্মান ভারত ৷ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে যাঁরা ক’দিন আগেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করালেন, তাঁদের কি এবার আয়ুষ্মার ভারতের জন্যেও হত্যে দিতে হবে ? তাছাড়া, স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রাজ্য়ের সব পরিবার এলেও আয়ুষ্মান ভারতের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা মিলবে কি ?
বিজেপির ইস্তাহারে অন্যান্য় যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি হল, রাজ্যের সব বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় 10 লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে রান্নার গ্য়াসের সংযোগ পাইয়ে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামের বিপিএল তালিকাভুক্তদের সকলের জন্য বাড়ি তৈরি করা, শহরের প্রত্য়েক বস্তিবাসীর জন্য় বাড়ি তৈরি করা, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্য়ন্ত গ্রামঞ্চলগুলিকেও ব্য়াঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আনা, প্রত্য়েকটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি, রাজ্যজুড়ে 50 হাজার নতুন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল তৈরি, 10 হাজার নতুন কলেজ তৈরি, তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া, আগামী দু’বছরের মধ্যে রাজ্য়ের প্রত্য়েকটি বাড়িতে বিদ্যুতে সংযোগ দেওয়া ৷
বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল জমানায় বাংলার কর্ম সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে ৷ বেড়েছে বেকারত্ব ৷ সিভিক ভলান্টিয়ার, গ্রামীণ পুলিশের মতো পদ তৈরি করে মমতা সরকার যে কর্মস্থানের চেষ্টা করেছে, তাকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি নেতৃত্ব ৷ এক্ষেত্রে তাদের দাওয়াই স্থায়ীকরণ ৷ চাকরির নিশ্চয়তা বাড়াতেই এই পদক্ষেপ করা হবে বলে তাদের দাবি ৷ দলীয় সূত্রে খবর, একুশের বাংলায় বিজেপি সরকার গড়লে তৃণমূল আমলের অস্থায়ী সরকারি কর্মীদের স্থায়ী করা হবে ৷ স্থায়ী হবেন সিভিক ভলান্টিয়ার, গ্রামীণ পুলিশ ও আশাকর্মীরাও ৷ কর্মস্থান বাড়াতে জোর দেওয়া হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের উপর ৷ তৈরি করা হবে অসংখ্য ছোট, বড় কারখানা ৷ তরুণদের জন্য রাজ্য়ের পাঁচ হাজার আইটিআই-তে বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে ৷
আরও পড়ুন : আজ নয়, নেত্রীর মনোনয়নের পরেই ইস্তাহার তৃণমূলের
বিজেপির নজরে রয়েছে রাজ্য়ের বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও ৷ ক্ষমতায় এলে যার ভোল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তারা ৷ ইস্তাহারে দেওয়া থাকবে তার বিবরণও ৷ সূত্রের দাবি, ভাবী সরকারের রং গেরুয়া হলেই রাজ্যের সবক’টি ব্লকে গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো অত্যাধুনিক করা হবে ৷ মেডিক্য়াল কলেজগুলিকে মডেল হিসাবে ধরে সেই অনুসারেই দেওয়া হবে চিকিৎসা পরিষেবা ৷
বিজেপির ইস্তাহার কমিটির সভাপতি তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের ইস্তাহারে রাজ্যের সব স্তরের মানুষের কথা বলা হয়েছে ৷ শুধুই প্রতিশ্রুতি দেওয়া নয়, ইস্তাহার তৈরি হচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ৷ খাদ্য, বাসস্থান,পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ-সহ সমস্ত বিষয় নজরে রাখা হয়েছে ৷ ইস্তাহার প্রকাশ করবেন আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ৷’’