ঝাড়গ্রাম, 15 মার্চ : হেলিকপ্টারের যান্ত্রিক গোলযোগ, নাকি মাঠ ভরাতে লোকের অভাব ? ঠিক কোন কারণে সোমবার ঝাড়গ্রামের সভা এড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ? ঝাড়গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে অমিত শাহের ভার্চুয়াল সভার পরই এনিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া ৷ এদিন ঝাড়গ্রামের জামদা সার্কাস ময়দানে জনসভা করার কথা ছিল তাঁর ৷ কথা ছিল, বেলা এগারোটার মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে সভার কাজ ৷ কিন্তু শেষমেশ তা বাতিল হয়ে যায় ৷
বিজেপি সূত্রের খবর, হেলিকপ্টারে হঠাৎ যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়াতেই ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে পারেননি অমিত ৷ তাই সভাস্থলে উপস্থিত দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের কাছে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমকে হাতিয়ার করেন তিনি ৷ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ভাষণ দেন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ৷
তবে এদিন অমিতের সভা বাতিল নিয়ে উঠে আসছে অন্য তত্ত্বও ৷ তৃণমূল শিবিরের দাবি, মাঠ ভরানোর মতো পর্যাপ্ত লোক না হওয়াতেই ঝাড়গ্রামের সভাস্থলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অমিত ৷ এই দাবির সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের সুর কিছুটা হলেও মিলে যাচ্ছে ৷ যদিও সভাস্থলে বেশি লোক না আসার অন্য কারণ দেখিয়েছেন তাঁরা ৷
ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী সুখময় শতপথির অভিযোগ, যে বাসে চড়ে কর্মী, সমর্থকরা সভাস্থলে এসেছিলেন, সেই বাসগুলিকে জামদা সার্কাস ময়দান থেকে অনেক দূরে রাখা হয় ৷ এমনকি, কর্মী-সমর্থকদের মাঠে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলেও একটি সূত্র মারফত দাবি করা হয়েছে ৷ গোটা ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সুখময় ৷ পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ ৷ তাদের সাফ কথা, যা করা হয়েছে, আদর্শ আচরণ বিধি মেনেই করা হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, ঝাড়গ্রাম জেলায় বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে মোট চারটি ৷ এগুলি হল, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম এবং বিনপুর ৷ 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে চারটিতেই জয়ী হয় তৃণমূল ৷ হিসেব উল্টে যায় উনিশের লোকসভা ভোটে ৷ তথ্য বলছে, 2019-এর লোকসভা ভোট অনুযায়ী, ঝাড়গ্রামের চারটির মধ্যে তিনটিতেই (গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম) এগিয়ে রয়েছে বিজেপি ৷ তাই এবারের নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী গেরুয়া শিবির ৷
আরও পড়ুন : আজ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক, রণনীতি বাতলে দেবেন শাহ
ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে সুখময় শতপথি ছাড়াও নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং বিনপুরে বিজেপির এবারের প্রার্থীরা হলেন যথাক্রমে বকুল মুর্মু, সঞ্জিত মাহাত এবং পালান সোরেন ৷ দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে বিজেপির ভরসা স্থানীয় আদিবাসী ভোট ৷ বস্তুত, জঙ্গলমহলের এই অংশে আদিবাসী ভোটব্য়াঙ্কই যে কোনও দলের উইনিং ফ্য়াক্টর ৷
এই আদিবাসী ভোট ব্য়াঙ্ককে টার্গেট করেই সোমবার জামদা সার্কাস ময়দানে সভা করার সিদ্ধান্ত নেন অমিত ৷ কিন্তু শেষমেশ তা বাতিলের পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ এমনকি, ভার্চুয়ালি অমিত যে ভাষণ দেন, তাঁর দৈর্ঘ্যও ছিল অত্যন্ত স্বল্প ৷ গতে বাঁধা কিছু কথা বলেই ভাষণ শেষ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের মোদি সরকার আদিবাসীদের কল্যাণে একাধিক পদক্ষেপ করলেও রাজ্য সরকারের বাধায় তার সুফল পাননি বাংলার আদিবাসীরা ৷ তাই সমগ্র আদিবাসী সমাজের স্বার্থে বাংলায় পদ্ম ফোটানোর আহ্বান জানান অমিত ৷ ঝাড়গ্রামে দলের চার প্রার্থীকে আদিবাসীরা যাতে ভোটের ঝুলি উপুড় করে আশীর্বাদ করেন, তারও আবেদন আদিবাসী সমাজের সামনে রাখেন অমিত শাহ ৷ দেন আদিবাসী সমাজের স্বার্থে অসংখ্য প্রকল্প রূপায়ণের আশ্বাস ৷ তবে তার জন্য যে বাংলাতেও বিজেপির সরকার গড়তে হবে, তা বারবার মনে করিয়ে দেন কেন্দ্রের সেকেন্ড ইন কম্য়ান্ড ৷