শিলিগুড়ি, 10 জুলাই : কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার শিলিগুড়িতে ৷ তিন দিন ধরে বন্ধুর মৃতদেহ আগলে রাখলেন যুবক ! স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে ওই বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে ৷ এরপরই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ৷ বন্ধ ঘর থেকে এক যুবকের পচে যাওয়া দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় তারা ৷ ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় মৃতের এক বন্ধুকে ৷ ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বাগডোগরার ভুজিয়াপানির গোয়ালাপট্টি এলাকায় ৷
প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, মৃত যুবকের নাম রামকৃষ্ণ গুরুং ৷ কিন্তু পরে জানা যায়, তাঁর নাম রামকিশোর গুরুং ৷ তিনি আলিপুরদুয়ারের হাসিমারার বাসিন্দা ৷ পেশায় গাড়ির চালক ৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দিন তিনেক আগে মৃত্য়ু হয়েছে রামকিশোরের ৷ এই তিনদিন মৃতদেহের সঙ্গে একই ঘরে নিজেকে কার্যত বন্দি রেখেছিলেন আরও এক যুবক ৷ তাঁর নাম রাহুল ঝা ৷ তিনিও পেশায় গাড়ির চালক ৷ বাগডোগরা বিমানবন্দরের গাড়ি চালান রাহুল ৷ এদিন ঘটনাস্থল থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে বাগডোগরা থানার পুলিশ ৷
আরও পড়ুন : রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া হাওড়ায়, বোন-স্বামীর দেহ আগলে বসে মহিলা
অন্যদিকে, পচা-গলা ওই মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷ তবে রামকিশোরের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছে পুলিশ। যদিও মৃতদেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা ৷ তাই এটি খুন, নাকি আত্মহত্যা, নাকি মৃত্যুর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) কুনওয়ার ভূষণ সিং এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ তবে কীভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হল, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বোঝা যাবে না ৷’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাহুল ঝা বাগডোগরার ভুজিয়াপানি এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন ৷ কিছুদিন আগে সেখানে হাসিমারা থেকে কাজের খোঁজে আসেন রামকিশোর গুরুং ৷ কিন্তু করোনার প্রকোপ থাকায় বাড়ির মালিক তাঁকে সেখানে থাকার অনুমতি দেননি ৷ এরপর গত তিন দিন ধরে দুই যুবকের কাউকেই বাড়ির বাইরে আসতে দেখেননি প্রতিবেশীরা ৷ কিন্তু, শনিবার সকালে তাঁদের ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে ৷ এরপরই প্রতিবেশীরা ওই ভাড়ার ঘরে ঢোকেন ৷ তখনই রামকিশোরের মৃতদেহ দেখতে পান তাঁরা ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বাগডোগরা থানায় পুলিশ ৷ তারা দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷
আরও পড়ুন : 2 দিন আগে মৃত ছেলে, দেহ আগলে পরিবার
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় ধৃত রাহুল ঝা মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন ৷ তবে কেন তিন দিন ধরে তিনি বন্ধুর মৃতদেহ আগলে নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন, তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে ৷ অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, হয় রামকিশোরকে খুন করা হয়েছে ৷ আর তা না হলে অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে মৃত্য়ু হয়েছে তাঁর ৷ পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ৷ বাগডোগরা থানার তরফে মৃত যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে ৷