শিলিগুড়ি, 15 অগাস্ট : 15 আগস্ট মধ্যরাতে ঘোষণা হয় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা । গোটা দেশ আনন্দে মেতে উঠেছিল । যদিও এরাজ্যের উত্তরে বাংলাদেশ ঘেঁষা জেলা দার্জিলিংয়ের বাসিন্দারা তখনও উৎকন্ঠায়, আতঙ্কে । নিশ্চিত হতে পারছিলেন না দেশ স্বাধীন হলেও দার্জিলিং কি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হল? না কি পূর্ব পাকিস্তানের? এই আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় সেই রাতে ঘুম ছিল না জেলাবাসীর । প্রত্যেকেই গেছিলেন গান্ধির ছায়া সঙ্গী তথা দাপুটে কংগ্রেস নেতা শিবমঙ্গল সিংয়ের কাছে ৷ যদিও সেই রাতে তিনিও অসহায় হয়ে পড়েছিলেন । তিনিও বুঝতে পারছিলেন না যে, তার স্বাধীনতা সংগ্রাম আদৌ স্বার্থকতা পেয়েছে কি না । স্বাভাবিকভাবেই ওই রাতে গোটা দেশ আনন্দে মেতে উঠলেও দার্জিলিংবাসী গৃহবন্দী হয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছিলেন । আশঙ্কা করছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির । যদিও 15 তারিখে সূর্যোদয়ের বহুক্ষণ পর স্বস্তি মিলেছিল । এরপর 15 তারিখ রাতে উল্লাসে মেতে ওঠেন দার্জিলিংবাসী । মহানন্দার তীরে পুড়েছিল আতসবাজি ।
দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা ছিলেন শিবমঙ্গল সিং । তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছিলেন । শুধু তাই নয়, মহাত্মা গান্ধির ঘনিষ্ঠ তথা ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিতি ছিল তাঁর । স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা ছিল তাঁর । আজ তিনি বেঁচে নেই । তবে তাঁর নাতি নরেন্দ্র সিং ঠাকুরদাকে জীবিত রেখেছেন স্মৃতির রোমন্থনে ।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে শিবমঙ্গল সিংয়ের নাতি নরেন্দ্র সিং ETV ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, "ঠাকুরদা মহাত্মা গান্ধির ঘনিষ্ঠ ছিলেন । সেই সুবাদেই স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান ছিল যথেষ্টই । তবে যে রাতে দেশ স্বাধীন হয় সেই রাতে ঠাকুরদা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন । রাতভর জেগেছিলেন । সঙ্গে ছিলেন একাধিক জেলাবাসী । ভোরের সূর্য কোন দেশ থেকে দেখতে হবে তা নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন সকলেই ।"
নরেন্দ্রবাবু বলেন, "ঠাকুরদা গল্প করতেন দেশ স্বাধীনের রাতে রেডিও মারফৎ খবর পান । কিন্তু দার্জিলিং কোন দেশের অন্তর্ভুক্ত হল তা জানতে পারেননি । স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশ আনন্দে মেতে উঠলেও এই জেলার সকলেই আতঙ্কে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চিন্তা করে । রাতভর দুশ্চিন্তার শেষে পরদিন ফের রেডিও মারফৎ জানতে পারেন দার্জিলিং ভারতের অংশ । এরপরেই শুরু হয় উল্লাস । রাতের অন্ধকারে মহানন্দা নদীর চরে মশাল নিয়ে জমায়েত হয় জেলাবাসী । আতসবাজি পুড়িয়ে দেশ স্বাধীনের উল্লাস পর্ব চলে ।"
ঠাকুরদার সঙ্গে গান্ধির ঘনিষ্টতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নরেন্দ্রবাবু আরও বলেন, "গান্ধির ছায়া সঙ্গী ছিলেন বলা চলে । কেন না, সে সময় গান্ধি দার্জিলিং জেলায় এলেই ভেনাস মোড় সংলগ্ন এলাকায় দাদুর বাড়িতে থাকতেন । তবে সেই বাড়িটি আজ আর নেই । সেই কাঠের বাড়ির জায়গায় এখন দশতলা বিল্ডিং । দাদু ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, 1925 সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । সে সময় তিনি দার্জিলিঙে ছিলেন । তাঁকে দেখতে এসেছিলেন গান্ধি । গান্ধিকে পথ দেখিয়ে দার্জিলিঙে নিয়ে গেছিলেন আমার ঠাকুরদা । এছাড়াও ঠাকুরদা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসেছিলেন ।"