ETV Bharat / city

সোনাজয়ী জাতীয় দলের ২ খো খো খেলোয়াড় আজ 100 দিনের শ্রমিক!

2016 সালের সাফ গেমসে সোনা জেতা ভারতীয় দলের সদস্য সালমা মাঝি৷ 2011 থেকে জাতীয় দলের সদস্য জ্যোতি বিশ্বকর্মাও৷ তাঁরাই এখন পেট চালাতে 100 দিনের কাজের শ্রমিক!

national kho kho team player
জাতীয়
author img

By

Published : Sep 7, 2020, 10:12 PM IST

Updated : Sep 7, 2020, 10:57 PM IST

শিলিগুড়ি, 7 সেপ্টেম্বর : সালমা আর জ্যোতি৷ দুটো আলো ঝলমলে নাম! দু'জনেই ভারতের জাতীয় খো খো দলের খেলোয়াড়৷ শিলিগুড়ির একই কলোনি এলাকায় বাড়ি৷ দুই মেয়ের ঘর ভরতি সোনার মেডেল, অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার এত সার্টিফিকেট, যে গরিবের ঘুপচি ঘরে ধরে না! ওঁদের মধ্যে আরও এক নির্মম মিল- দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও দু'জনকেই ঘাস কেটে-পাথর টেনে মজদুরি করে জীবন চালাতে হচ্ছে!

শিলিগুড়ির তরিবাড়ির কলোনি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে এক কামরার ঘরে থাকেন সালমা মাঝি । 2016 সালে যে ভারতীয় দলটি সাফ গেমসে সোনা জেতে, সেই দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ছোটোবেলাতেই খোখোয় হাতেখড়ি। 2014 সালে সাব জুনিয়র জাতীয় দলে খেলার পর ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে৷ 2015 সালে জুনিয়র দলে সুযোগ৷ এরপর 2016 সালে গর্বের সিনিয়র জাতীয় খো খো দলের সদস্য হওয়া। সেই দলই সাফ গেমসে জেতে সোনা৷ গরিব ঘরের সোনার মেয়ের মুখে তাৎক্ষণিক আলো পড়লেও ব্যক্তি জীবনে অন্ধকারই থেকে গেছে স্থায়ী হয়ে৷ এরই মধ্যে কেটে গেছে চার-চারটে বছর৷

national kho kho team player
সালমা মাঝি৷

পরিবারে চার সদস্য। বাবা দুমরা মাঝি শ্রমিক। বাবার রোজগারে সংসার চলে না। জাতীয় দলের খোখো খোলোয়াড় তাই এখন একশো দিনের কাজের শ্রমিক! এলাকায় জঙ্গল সাফাইয়ে ঘাস কাটার কাজ, রাস্তার পাথর সরানোর কাজে পেট চালাতে হয়৷ যদিও এইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন হার না মানা সালমা। স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। তবু, সব কাজের পর আদিবাসী পরিবারের মেয়েটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘুপচি ঘর থেকে ঝলমল মেডেল, সার্টিফিকেট বের করে রোদে দেন। ঝেড়েমুছে সাজিয়ে রাখেন স্বপ্ন!

national kho kho team player
জ্যোতি বিশ্বকর্মা ও খোখো ফেডারেশনের সদস্য ভাস্কর দত্ত মজুমদার৷

সালমা মাঝি বলেন, "দেশের সোনাজয়ী খো খো দলের সদস্য আমি। সাফ গেমসে দল সোনা পেয়েছিল। আমিও সোনার পদক পেয়েছি। খেলা চালাতে চাই। কিন্তু পেরে উঠছি না। কাজ নেই, অর্থ নেই। বাবার একার রোজগারে সংসার চলে না। তাই ঘাস কাটার কাজ নিয়েছি৷ সামান্য মজুরি মেলে।"

সোনাজয়ী ভারতীয় খোখো দলের দুই খেলোয়াড় এখন 100 দিনের শ্রমিক৷

ক্ষোভ উগরে দেন ভারতের খো খো দলের খেলোয়াড়, "সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেছি একটা চাকরির জন্য। অস্থায়ী হলেও চলবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পাই না।"

সালমার বাড়ি থেকে কিছু দূরেই দেশকে গর্বিত করা আরও এক খো খো খোলোয়াড় জ্যোতি বিশ্বকর্মার বাড়ি। বলা বাহুল্য, তিনিও জাতীয় দলের খেলোয়াড়। 2011 থেকে জাতীয় দলের সদস্য৷ একাধিক সোনার মেডেল ঝুলিতে। চলতি বছরেই পেয়েছেন রাজ্যের খেলশ্রী পুরস্কার।

জ্যোতির কথায়, "পরিবারে নয়জন সদস্য। বাবা নাইট গার্ড। বোন প্রতিবন্ধী। আমার কাজ নেই। তাই এলাকায় রাস্তার কাজ হচ্ছে জেনে সেখানে শ্রমিক হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছি। পাথর সরাই। সামান্য টাকা মেলে। সংসার টানতে কাজে লাগে। কাজ না পেলে কীভাবে খেলব? পেটের টান বড় টান।"

জ্যোতিও জানান, "কাজ চেয়ে বহুবার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সবাই বলেছেন দেখবেন। তারপর কিছু হয়নি। এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও বহুবার গিয়েছি। প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পাইনি।"

খোখো ফেডারেশনের সদস্য ভাস্কর দত্ত মজুমদার বলেন, "আমি লজ্জিত। ওঁদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। সবাইকে জানিয়েছি। যেদিন শুনেছি দুই সোনার মেয়ে পেট টানতে ঘাস কাটছে, পাথর সরাচ্ছে, সেদিন লজ্জিত হয়েছি। যতটা পারি ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সাহায্য করি। কিন্তু, এভাবে কতদিন?"

যদিও খো খো বিশুদ্ধ দেশীয় খেলা ৷ আত্মনির্ভর ভারতে সেই খেলার, খেলোয়াড়দের একটা গতি হবে না?

শিলিগুড়ি, 7 সেপ্টেম্বর : সালমা আর জ্যোতি৷ দুটো আলো ঝলমলে নাম! দু'জনেই ভারতের জাতীয় খো খো দলের খেলোয়াড়৷ শিলিগুড়ির একই কলোনি এলাকায় বাড়ি৷ দুই মেয়ের ঘর ভরতি সোনার মেডেল, অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার এত সার্টিফিকেট, যে গরিবের ঘুপচি ঘরে ধরে না! ওঁদের মধ্যে আরও এক নির্মম মিল- দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও দু'জনকেই ঘাস কেটে-পাথর টেনে মজদুরি করে জীবন চালাতে হচ্ছে!

শিলিগুড়ির তরিবাড়ির কলোনি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে এক কামরার ঘরে থাকেন সালমা মাঝি । 2016 সালে যে ভারতীয় দলটি সাফ গেমসে সোনা জেতে, সেই দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ছোটোবেলাতেই খোখোয় হাতেখড়ি। 2014 সালে সাব জুনিয়র জাতীয় দলে খেলার পর ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে৷ 2015 সালে জুনিয়র দলে সুযোগ৷ এরপর 2016 সালে গর্বের সিনিয়র জাতীয় খো খো দলের সদস্য হওয়া। সেই দলই সাফ গেমসে জেতে সোনা৷ গরিব ঘরের সোনার মেয়ের মুখে তাৎক্ষণিক আলো পড়লেও ব্যক্তি জীবনে অন্ধকারই থেকে গেছে স্থায়ী হয়ে৷ এরই মধ্যে কেটে গেছে চার-চারটে বছর৷

national kho kho team player
সালমা মাঝি৷

পরিবারে চার সদস্য। বাবা দুমরা মাঝি শ্রমিক। বাবার রোজগারে সংসার চলে না। জাতীয় দলের খোখো খোলোয়াড় তাই এখন একশো দিনের কাজের শ্রমিক! এলাকায় জঙ্গল সাফাইয়ে ঘাস কাটার কাজ, রাস্তার পাথর সরানোর কাজে পেট চালাতে হয়৷ যদিও এইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন হার না মানা সালমা। স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। তবু, সব কাজের পর আদিবাসী পরিবারের মেয়েটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘুপচি ঘর থেকে ঝলমল মেডেল, সার্টিফিকেট বের করে রোদে দেন। ঝেড়েমুছে সাজিয়ে রাখেন স্বপ্ন!

national kho kho team player
জ্যোতি বিশ্বকর্মা ও খোখো ফেডারেশনের সদস্য ভাস্কর দত্ত মজুমদার৷

সালমা মাঝি বলেন, "দেশের সোনাজয়ী খো খো দলের সদস্য আমি। সাফ গেমসে দল সোনা পেয়েছিল। আমিও সোনার পদক পেয়েছি। খেলা চালাতে চাই। কিন্তু পেরে উঠছি না। কাজ নেই, অর্থ নেই। বাবার একার রোজগারে সংসার চলে না। তাই ঘাস কাটার কাজ নিয়েছি৷ সামান্য মজুরি মেলে।"

সোনাজয়ী ভারতীয় খোখো দলের দুই খেলোয়াড় এখন 100 দিনের শ্রমিক৷

ক্ষোভ উগরে দেন ভারতের খো খো দলের খেলোয়াড়, "সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেছি একটা চাকরির জন্য। অস্থায়ী হলেও চলবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পাই না।"

সালমার বাড়ি থেকে কিছু দূরেই দেশকে গর্বিত করা আরও এক খো খো খোলোয়াড় জ্যোতি বিশ্বকর্মার বাড়ি। বলা বাহুল্য, তিনিও জাতীয় দলের খেলোয়াড়। 2011 থেকে জাতীয় দলের সদস্য৷ একাধিক সোনার মেডেল ঝুলিতে। চলতি বছরেই পেয়েছেন রাজ্যের খেলশ্রী পুরস্কার।

জ্যোতির কথায়, "পরিবারে নয়জন সদস্য। বাবা নাইট গার্ড। বোন প্রতিবন্ধী। আমার কাজ নেই। তাই এলাকায় রাস্তার কাজ হচ্ছে জেনে সেখানে শ্রমিক হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছি। পাথর সরাই। সামান্য টাকা মেলে। সংসার টানতে কাজে লাগে। কাজ না পেলে কীভাবে খেলব? পেটের টান বড় টান।"

জ্যোতিও জানান, "কাজ চেয়ে বহুবার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সবাই বলেছেন দেখবেন। তারপর কিছু হয়নি। এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও বহুবার গিয়েছি। প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পাইনি।"

খোখো ফেডারেশনের সদস্য ভাস্কর দত্ত মজুমদার বলেন, "আমি লজ্জিত। ওঁদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। সবাইকে জানিয়েছি। যেদিন শুনেছি দুই সোনার মেয়ে পেট টানতে ঘাস কাটছে, পাথর সরাচ্ছে, সেদিন লজ্জিত হয়েছি। যতটা পারি ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সাহায্য করি। কিন্তু, এভাবে কতদিন?"

যদিও খো খো বিশুদ্ধ দেশীয় খেলা ৷ আত্মনির্ভর ভারতে সেই খেলার, খেলোয়াড়দের একটা গতি হবে না?

Last Updated : Sep 7, 2020, 10:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.