শিলিগুড়ি, 23 অগস্ট: সমাজের পিছিয়ে পড়া ও স্কুলের পরীক্ষায় অসফল হওয়া নাবালিকাদের জীবনের পরীক্ষায় সফল হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন প্রমীলা(lady from siliguri is taking initiative to empower school drop out girl)। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েদের পাটের তৈরি সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করছেন ফুলবাড়ির পতনজোতের প্রমীলা খেরওয়াল । স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রমীলা দিদি নামেই পরিচিত । আপাতত ফুলবাড়ির পতনজোত এবং মাটিগাড়ার পাথরঘাটা এই দুই জায়গায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি । কোনও আলাদা ঘর না-থাকায় খোলা আকাশের নিচেই চলছে বুননের প্রশিক্ষণ ৷
নিজে এই কাজের সঙ্গে তিন চার বছর যুক্ত থাকলেও শিলিগুড়ির(Self Employment Training at Siliguri)এই এলাকায় এক মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছেন তিনি । মেয়েরা যাতে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে সেই লক্ষ্যেই গ্রামের গাছ তলাতেই পাটের তৈরি নানান জিনিস বানানোর শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচি দেওয়া শুরু করেন প্রমীলা ।
আরও পড়ুন : রাখি ও প্রদীপ বানিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েরা
প্রধানত, চা বাগান অধ্যুষিত এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েরা আর্থিক পরিস্থিতির জন্য চাইলেও অনেক দূর পড়াশোনা করতে পারে না । এর ফলে অনেক নাবালিকার দ্রুত বিয়ে হয়ে যায় । তাছাড়া বাবা মায়েরা চাষের কাজে ভোরবেলা মাঠে চলে যাওয়ার পর এদের কোনও কাজ থাকে না ৷ তাই যদি কোনও কাজ করে এইসব মেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলা যায় তাহলে গ্রামের উন্নতি হবে ৷ এইভেবেই এগিয়ে আসেন প্রমীলা দেবী ৷ সার্ভে করে রীতিমতো খুঁজে খুঁজে বের করেন এইসব পিছিয়ে পড়া অল্পবয়সি মেয়েদের ৷ আর তারপর এই প্রশিক্ষণ দেন ৷
এখনও পর্যন্ত প্রায় 15 থেকে 16 জন মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে । আরও মেয়েদের খুঁজে নিয়ে আসতে হবে বলে জানান প্রমীলা দেবী । তাই গ্রামে গিয়ে পরিবার ও সেইসব মেয়েদের সচেতন ও স্বনির্ভরতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতে ছুটে চলেছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : আদিবাসী মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ
প্রমীলা দেবী মনে করেন, যে সব মহিলারা ফেল করে যাচ্ছেন, পিছিয়ে পড়ছেন বা তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাদের স্বনির্ভর হওয়াটা খুব জরুরি । সেই থেকেই তাদের জিনিস তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করার কাজ করতে শেখান ৷ মূলত হাট, বাজার এবং শহরের বিভিন্ন বুটিকে পাটের তৈরি এইসব পাপোশ, ব্যাগ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করা হয় । তবে শুধু এখানেই নয়, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি জিনিস বিদেশেরও নানান জায়গায় বিক্রি হয় । এই জিনিস বিক্রির টাকায় মেয়েদের বেতন দেওয়া হয় ৷
প্রমীলা দেবীর কথায়, "যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে । তাদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার শেষ হলে তারা অন্য গ্রামে গিয়ে একইভাবে প্রশিক্ষণ দেবে । এর ফলে মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার পথ অনেকটাই বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন তিনি । এখন খুব অল্প মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ঠিকই । কিন্তু সংখ্যাটা বাড়ছে দিনদিন ৷"
এক ছাত্রী রেশমি টোপ্পো বলেন, "আমি আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম । তবে এখন আমি প্রশিক্ষণ দিই ৷ রবিবার করে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি । মেলা ও বিভিন্ন বাজারে আমরা এই সব সামগ্রী বিক্রি করি ।"
আরও পড়ুন : মাশরুম দিয়ে আচার-পাঁপড় তৈরি করে স্বনির্ভর চোপড়ার মহিলারা