শিলিগুড়ি, ২৫ মার্চ : হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহ খুবলে খেল ইদুঁর । মর্গের ফ্রিজ যে খারাপ, তা স্বীকার করে বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন হাসপাতালের সুপার । এমন ঘটনায় বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্য ছড়াল শিলিগুড়িতে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় তাজ্জব বনে গিয়েছেন মৃতের পরিজনেরা ।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার মাঝরাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন পাপাই মল্লিক নামে এক যুবক । মৃতের বাড়ি আলিপুরদুয়ারের বীড়পাড়ায় হলেও কর্মসূত্রে তিনি শিলিগুড়ির প্রধাননগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন । পাপাই একটি বেসরকারি এসি সংস্থায় কাজ করতেন । বুধবার রাতে ওই ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পরিজনরা । এরপর রাত দেড়টা নাগাদ দেহ উদ্ধার করে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠায় প্রধাননগর থানার পুলিশ । হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা যুবককে মৃত বলে জানান । ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ দেহ মর্গে ঢোকানো হয় । বৃহস্পতিবার দুপুরে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর কথা ছিল । কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর সময় দেখা যায় যুবকের নাক, চোখ, কান, আঙুল সহ দেহের একাধিক জায়গা খুবলে খেয়েছে মর্গের ইদুঁর । এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে মৃতের পরিবার । বিষয়টি দেখা মাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা । অভিযোগ, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । তড়িঘড়ি মৃতদেহের ক্ষতস্থানগুলিতে ড্রেসিং করা হয় ।
আরও পড়ুন: জোড়া দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য় শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায়
মৃতের কাকা সুব্রত দাস বলেন, "বিষয়টি দেখা মাত্র কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করি । তারা আমাদের মিডিয়াকে বলতে বারণ করে, দেহ ড্রেসিং করে দেয় । মর্গের ফ্রিজ যে খারাপ তা আগে আমাদের জানানো হয়নি ৷ জানালে অন্য ব্যবস্থা করতাম ।"
মৃতের আত্মীয় অভিনন্দন সাহা বলেন, "হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে । রোগী ও রোগীর পরিবারের কোনও কথা শোনা হচ্ছে না ।"
হাসপাতাল সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, "খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । ইদুঁরে দেহ খাওয়ার বিষয়টি থানার আধিকারিককে জানিয়েছি । তারা তদন্ত করে দেখবেন । জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও প্রশাসনিক আধিকারিককেও জানানো হয়েছে । মর্গের ফ্রিজ দীর্ঘদিন ধরে খারাপ ।"
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল মহকুমার হাজার হাজার মানুষের ভরসার জায়গা । প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি দেহ রাখা থাকে এখানকার মর্গে । প্রশ্ন উঠছে, ফ্রিজ যদি দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ থাকে, তবে স্বাস্থ্য দফতর এতদিন কেন ব্যবস্থা নেয়নি ৷