আগরতলা, 20 জুন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (TMC Chief Mamata Banerjee) ভাইপো ৷ তাই তৃণমূলে তিনিই নম্বর টু ৷ এতদিন ঘাসফুল শিবিরে এটা ছিল অলিখিত সত্য ৷ কিন্তু সোমবার আগরতলায় বসে সেটাই কার্যত ‘অফিসিয়াল’ করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC Leader Abhishek Banerjee) ৷
আগামী 23 জুন ত্রিপুরার কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন (Tripura Assembly Bye Election 2022) রয়েছে ৷ সেই উপ-নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে এদিন ত্রিপুরার রাজধানীতে সাংবাদিক বৈঠক করেন ৷ ঘণ্টাখানেক সাংবাদিকদের সামনে বসে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ ত্রিপুরা বিজেপিকে তো চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেনই ৷ একই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে অপমান ও নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সরাসরি তোপ দাগলেন গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ৷
2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের (Bengal Assembly Elections 2021) পর তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী ৷ তার পর থেকে জাতীয়স্তরে তৃণমূলের ‘ফুটপ্রিন্ট’ বৃদ্ধিতে সচেষ্ট ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ৷ তার উপর আগামিকাল মঙ্গলবার তিনি নয়াদিল্লিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠকে মমতার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ৷
যা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, তৃণমূলে মমতার বিকল্প অভিষেক ৷ এই নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না ৷ কিন্তু শরদ পাওয়ারের ডাকা বৈঠকে অভিষেককে পাঠানোর সিদ্ধান্তে তৃণমূলে তাঁর গুরুত্ব অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর সেটা উপলব্ধি করতে পেরেই আরও আক্রমণাত্মক মেজাজে সোমবার হাজির হলেন অভিষেক ৷
সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে তিনি নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন ৷ সেখানে তিনি সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন ৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সিপিএমের সন্ত্রাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে বিজেপি ৷ প্রতিরোধের রাস্তা বেছে না নিলে এই সন্ত্রাস চলতে থাকবে ৷ স্মার্ট সিটি তৈরিতে আগরতলার জন্য বরাদ্দ 245 কোটি টাকা কোথায় গেল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অভিষেক ৷
নাম না করে কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধিকেও (Congress Leader Rahul Gandhi) আক্রমণ করেছেন ৷ তাঁর অভিযোগ, ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে আক্রমণ করলে কোনওদিন রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি করা যায় না ৷
আবার অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সরাসরি তোপ দেগেছেন মোদি সরকারের (Modi Government) বিরুদ্ধে ৷ তাঁর দাবি, মোদি সরকারের ট্র্যাডিশন পরিকল্পনাহীন ভাবে যে কোনও ঘোষণা করা ৷ বাহিনীর আড়ালে ভোটে লড়ে ৷ ভোট শেষ হলে বলে অগ্নিবীর বিজেপি অফিসে নিরাপত্তারক্ষী হবে ৷
এই মন্তব্য করার জন্য বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা উচিত ৷ এমনকি তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া উচিত বলেও অভিষেক এদিন মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি টেনে এনেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডির কথাও ৷ দাবি করেছেন, সেনা সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য তিনিও (রেড্ডি) করেছেন ৷ সেই কারণে রেড্ডিকেও বিজেপিতে বহিষ্কার করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অভিষেক ৷
একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এমন কোনও মন্তব্য তৃণমূলের কেউ করলে, তাঁকেও বহিষ্কার করা হতো ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে মমতার পর দলের নম্বর-2 হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে অভিষেক যে কতটা কনফিডেন্ট, তা এই বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন ৷
অন্যদিকে সাংবাদিকদের বাউন্সারও সামলেছেন সমানভাবে৷ মেজাজ না হারিয়ে উত্তর দিয়েছেন ৷ ত্রিপুরায় তৃণমূলের ধারাবাহিকতার অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েও তিনি ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিয়ে জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় আজকের তৃণমূলের সঙ্গে 2011-2016-র তৃণমূলের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত রয়েছে ৷ আজকের তৃণমূল ত্রিপুরা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর ৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, এদিন আগরতলার সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক শুধু বিরোধীদের আক্রমণ করেননি ৷ বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সকলের খেয়াল রাখেন, সেদিকেও নজর রেখেছেন, সেভাবেই অভিষেকও এদিন সকলের দিকে খেয়াল করেন ৷ তাই সাংবাদিক বৈঠকের শেষে জেনে নিয়েছেন সকলে চা পেয়েছেন কি না !
আরও পড়ুন : Abhishek Banerjee : পাওয়ার-বৈঠকে মমতার প্রতিনিধি অভিষেক, জাতীয়স্তরে গুরুত্ব বৃদ্ধি তৃণমূল সাংসদের