মালদা, 17 জুন : দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রাস্তা। একাধিকবার রাস্তা সারাইয়ের আবেদন করেও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ। অবশেষে রাস্তার জমা জলে মাছ ছেড়ে, মাছ ধরার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ তাদের সঙ্গে যোগ দেয় BJP কর্মীরাও। বেহাল রাস্তা সারাইয়ের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই অভিনব প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-BJP চাপানউতোর শুরু হয় ।
চাঁচল 1 ব্লকের থানাপাড়ার রাস্তা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাধিক বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনিক কর্তাদের রাস্তা সারাইয়ের জন্য বলা হলেও এখনও রাস্তা সারানো হয়নি। বাধ্য হয়ে বেহাল রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে স্থানীয় বাসিন্দারা জমা জলে মাছ ছেড়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা করে ৷ স্থানীয় BJP কর্মী প্রসেনজিৎ শর্মা অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানান। রাস্তায় জমা বৃষ্টির জলে মাছ ছেড়ে সেই মাছ ধরার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে 1 হাজার টাকা পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। মাছ ধরার প্রতিযোগিতার খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যান চাঁচল পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লব দাস। এই প্রতিবাদকে কেন্দ্র করেই তৃণমূল ও BJP-র মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় ।
স্থানীয় বাসিন্দা পলি দাস বলেন, “এই রাস্তা দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বারবার বিষয়টি পঞ্চায়েত, BDO -কে জানিয়েও লাভ হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে যায়। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গেলে পোশাক গুটিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রাস্তায় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আজকের এই অভিনব প্রতিবাদের পরে প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে।”
চাঁচল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উৎপল তালুকদার বলেন, “থানা পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা তথা BJP কর্মী প্রসেনজিৎ শর্মা সাব মার্শালের জল রাস্তায় ফেলে মাছ ছেড়ে দেয়। সেই জলেই মাছ ধরার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে প্রসেনজিৎ। এই নাটকের মাধ্যমেই সে দেখাতে চাইছে রাস্তার কাজ হচ্ছে না। আমরা ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য জেলাতে আবেদন জানিয়েছি। রাস্তা সংস্কারের টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু কাজ শুরুর অপেক্ষা। এই ঘটনার খবর পেয়ে পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লব দাস ঘটনাস্থানে যান। সেই সময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেই সময় প্রসেনজিৎ গামছা দিয়ে বিপ্লববাবুকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করে। বিপ্লববাবুকে প্রাণে বাঁচান অমিতেষবাবু। আমরা তাঁকে উদ্ধার করে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি করি। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। আমরা সমস্ত ঘটনা জানিয়ে চাঁচল থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছি।”
তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অমিতেষ পাণ্ডে বলেন, “প্রসেনজিৎ শর্মা নামে এক BJP কর্মী বাড়ির সাব মার্শাল চালিয়ে রাস্তায় জল ফেলে কিছু মাছ ছেড়ে একটা নাটকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সেই কারণে কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রাস্তাটা সংস্কারের প্রয়োজন আছে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে রাস্তা সংস্কারের জন্য BDO সাহেবকে জানানো হয়েছে। BDO অফিস থেকে সেটা অনুমোদনের জন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। এখন রাস্তার কাজ শুরু হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এরমধ্যেই রাস্তার জল ফেলে মাছ ধরার নাটক করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে প্রসেনজিৎ। সেই ঘটনার খবর পেয়ে পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লববাবু আমাকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানান। আমরা দুজনে ঘটনাস্থানে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি। বাড়ি মার্শাল দিয়ে জল রাস্তায় ফেলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা চলছিল। বিপ্লববাবু সেই ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রসেনজিৎ বাড়ি থেকে গামছা এনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারার চেষ্টা করে। আমরা তাঁকে উদ্ধার করে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসি। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছেন।”
ঘটনা প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎবাবু বলেন, “আমাদের থানা পাড়ার এই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বারবার বিষয়টি পঞ্চায়েত অফিস থেকে শুরু করে BDO অফিস পর্যন্ত জানানো হলেও ফল মেলেনি। লকডাউনের মধ্যে ব্লকে হাইমাস্ট টাওয়ার, AC লাগানো সমস্ত কাজ হলেও থানাপাড়ার রাস্তার কাজ শুরু হয়নি। অথচ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে মা-বোনদের পোশাক গুটিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রতিযোগিতার যে কথা বলা হয়েছে আমি তা অস্বীকার করছি না। গত দুদিনের বৃ্ষ্টিতে জল জমে ছিল। তার সঙ্গে আজ আমার বাড়ির ট্যাঙ্কির জল পরিষ্কার করা হয়। পঞ্চায়েতে কোনও ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। যেখানে ডেঙ্গির প্রকোপ চলছে সেই সময়, আমি আমার বাড়ির জমা জল কোথায় ফেলব? পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। জন প্রতিনিধি হলেও এলাকাতে পঞ্চায়েত সদস্যের দেখা পাওয়া যায় না। প্রধানের কথাও বলা হচ্ছে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কিন্তু প্রধান ঘটনাস্থানে ছিলেন না। এই পঞ্চায়েতের প্রধান একজন মহিলা, আজমেরি খাতুন। ঘটনাস্থানে এসেছিলেন তাঁর স্বামী। গোটা ভারতবর্ষে যেখানে প্রধান পতি ব্যবস্থা উঠে গিয়েছে। সেখানে চাঁচলের মতো মহকুমা এলাকায় প্রধান পতি ব্যবস্থা চলছে। আর যিনি এসেছিলেন তিনি কি কারও প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন? উনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকায় এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গিয়েছেন। আমাকে মারধরের চেষ্টা করেন। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে আমি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করব।”
BDO সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি পঞ্চায়েতকে দেখতে বলা হয়েছে। ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত থেকে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল, সেই অনুমোদনের জন্য আবেদন জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে ।”