ইংরেজবাজার, 9 ডিসেম্বর : গোটা এলাকায় যেন অলিখিত 144 ধারা জারি হয়ে রয়েছে৷ গ্রামে পুরুষদের দেখা নেই ৷ মাত্র দু’জন মহিলা গ্রামে রয়েছেন ৷ তাঁরাও আতঙ্কে ৷ যখন তখন গ্রামে আসছে পুলিশ ৷ ঘটনা নিয়ে খোঁজখবর করছে ৷ বিশেষ করে গ্রামের তিনজনের বিষয়েই বেশি খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ ৷ তবে যে তিনজনকে পুলিশ খুঁজছে, তাদের এখনও দেখা পায়নি খাকি উর্দিধারীরা ৷ আমবাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের পাঁচদিন পর এই ছবিই ধরা পড়েছে ইংরেজবাজারের ধানতলা সংলগ্ন চাকলা গ্রামে ৷ এদিকে এখনও পর্যন্ত পুলিশ মৃত যুবতির পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি ৷ আজও ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেছে জেলা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত গোটা ঘটনা নিয়ে অন্ধকারেই রয়েছে পুলিশ ৷
গত বৃহস্পতিবার (5 ডিসেম্বর) ইংরেজবাজারের ধানতলা গ্রামের একটি আমবাগানের ভিতর থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় ৷ প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছিল, হায়দরাবাদের কায়দাতেই ওই যুবতিকে ধর্ষণ করার পর পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে ৷ যদিও ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানাচ্ছে, যুবতিকে ধর্ষণ করার কোনও চিহ্ন ধরা পড়েনি ৷ তবে এই নিয়ে নিশ্চিত হতে ওই যুবতির দেহাংশ ফরেনসিক তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ ৷ তার রিপোর্ট অবশ্য এখনও পুলিশের হাতে আসেনি ৷ এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে ৷ এমনকি সংসদেও এনিয়ে বক্তব্য রেখেছেন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ ঘটনাস্থান পরিদর্শন করে রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন BJP সাংসদ তথা দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ দোষীদের খুঁজে পুলিশি এনকাউন্টার করে শাস্তির দাওয়াই বাতলেছেন তিনি৷
যে আমবাগান থেকে ওই যুবতির দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেখান থেকে মাত্র 400 মিটার দূরে চাকলা গ্রাম৷ তদন্ত শুরুর পর পুলিশের প্রথম নজর পড়েছে এই গ্রামেই ৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, এই গ্রামেরই তিন বাসিন্দা প্রথম মৃতদেহটি দেখতে পেয়েছিল ৷ শুধু তাই নয়, একজনের মোবাইল ফোন ওই এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল ৷ যদিও পুলিশ ঘটনাস্থানে যাওয়ার আগেই সেই ফোনটি সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায় সেটির মালিক ৷ যদিও সন্দেহভাজন তিনজনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ আজ চাকলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাত্র 14টি পরিবার বসবাস করে ৷ গোটা গ্রামে মাত্র দু’জন মহিলা রয়েছেন ৷ বাকি সবাই এলাকার বাইরে ৷ খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গ্রামের পুরুষরা প্রায় সবাই ভয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে ৷ একমাত্র বয়স্ক পুরুষ ও শিশুরাই রাতে বাড়িতে থাকে ৷ মহিলাদের মধ্যেও অনেকে এই মুহূর্তে গ্রামের বাইরে রয়েছেন ৷ আজ সকালেও পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল ৷ গ্রামের কেউ যাতে কারও সঙ্গে এই নিয়ে কোনও কথা না বলে সেই হুমকিও নাকি পুলিশ আজ গ্রামবাসীদের দিয়ে এসেছে৷
আরও পড়ুন : মালদায় যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধার, অভিযোগ ধর্ষণের
পুলিশের ভয়ে প্রথমে কথা বলতে অস্বীকার করেন দুই মহিলা ৷ শেষ পর্যন্ত ঝুমা পাহাড়ি বলেন, "এই দেহ উদ্ধারের পর থেকেই গ্রামে পুলিশের যাতায়াত বেড়েছে ৷ তাদের আসার সময়ের কোনও ঠিক নেই ৷ এই মুহূর্তে গ্রামে কোনও পুরুষ নেই ৷ সবাই কাজে চলে গিয়েছে ৷ একদিকে গ্রামের পাশের আমবাগান থেকে মহিলার জ্বলে যাওয়া দেহ উদ্ধার, তার সঙ্গে পুলিশের আনাগোনা, এসব নিয়ে আমরা ভয়ে রয়েছি ৷ কয়েক বছর আগেও এখানে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল ৷ সেবারও পুলিশ গ্রামে ঝামেলা করেছিল ৷" গ্রামের আরেক মহিলা জবা পাহাড়ি বলেন, "আমরা চাই, এই ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে উচিত শাস্তি দেওয়া হোক ৷ যেখান থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে আমাদের গ্রাম খুব কাছে ৷ তাই পুলিশ আমাদের গ্রামেও আসা যাওয়া করছে ৷ খুন আর পুলিশের আনাগোনায় আমরা ভয়ে রয়েছি ৷ যে কোনও সময় পুলিশ গ্রামের কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছি ৷ এই ভয়ে রয়েছে গ্রামের পুরুষরাও ৷ তারা সকালে কাজে বেরোয়, সন্ধেয় ঘরে ফেরে ৷ তবে এখন অনেকেই গ্রামে নেই ৷ বাইরে চলে গেছে ৷ বয়স্ক পুরুষরাই রাতে গ্রামে থাকছে ৷"