মালদা, 30 অগস্ট : জাতীয় শিক্ষক হিসাবে আগেই নির্বাচিত হয়েছেন, এবার শিক্ষারত্ন সম্মাননার জন্যও নির্বাচিত হলেন মালদার শোভানগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস । 5 সেপ্টেম্বর তাঁকে শিক্ষারত্নে ভূষিত করবে রাজ্য সরকার । ইতিমধ্যে রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে তাঁর কাছে সেই বার্তা এসে পৌঁছেছে । একই সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে শিক্ষক সম্মাননায় নির্বাচিত হয়ে আপ্লুত হরিস্বামী । ইটিভি ভারতের ক্যামেরার সামনে সেকথা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি তিনি । জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্যের কথাও । তিনি এখন এই পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য করার উপায় খুঁজতে বিভোর । পাশাপাশি কীভাবে এই রাজ্যের পড়ুয়ারা সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, সেই ভাবনাও ঘোরাঘুরি করছে তাঁর মাথায় ।
এবার জাতীয় শিক্ষক হিসাবে রাজ্য থেকে একমাত্র নির্বাচিত হয়েছেন হরিস্বামী । 5 সেপ্টেম্বর রাজ্য শিক্ষা দফতরে তাঁর হাতে সেই সম্মাননা তুলে দেবেন শিক্ষা দফতরের সচিব । করোনা আবহে তেমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র । এই খবর চাউর হতে ক’দিন আগেই খুশির হাওয়া ছড়িয়েছিল জেলার শিক্ষা মহলে । এবার শিক্ষারত্ন হিসাবে রাজ্য সরকারও হরিস্বামীবাবুকে নির্বাচিত করায় সেই হাওয়ার গতিই বেড়েছে ৷
জাতীয় শিক্ষক আজ ইটিভি ভারতকে বলেন, "বিশ্বাস করতে পারছি না ৷ একই বছরে এক শিক্ষক এমন দুই সম্মাননা পেয়েছেন কিনা জানা নেই । তবে শিক্ষারত্ন হিসাবে আমাকে মনোনীত করার খবর পেয়ে আমি বাস্তবিকই আপ্লুত । কোনও শিক্ষকের সারা জীবনের স্বপ্ন এসব । এবার একই সঙ্গে আমার দুই স্বপ্ন সাকার হতে চলেছে । কী বলব, ঠিক ভেবে পাচ্ছি না । এবার জেলাশাসকের দফতরেই শিক্ষারত্ন সম্মাননা প্রদান করা হবে । কিন্তু 5 সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষকের সম্মাননা নেওয়ার জন্য আমি রাজ্য শিক্ষা দফতরে থাকব । সেখানেই যাতে আমাকে শিক্ষারত্ন সম্মাননা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং বিকাশ ভবনে কথা বলব ।"
জেলার ভাবী শিক্ষারত্ন বলেন, "দুই সরকারের তরফে এই সম্মাননা আমার কাছে নিজেকে আরও বেশি প্রকাশ করার সুযোগ । এটা আমার ব্যক্তিগত সম্মাননা নয়, এটা আমার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অবশ্যই প্রাক্তনীদের মিলিত প্রচেষ্টার ফল । সরকারি বিভিন্ন দফতরও প্রতিনিয়ত আমাদের স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েছে । মালদায় শিক্ষকদের একটি ভাল গ্রুপ রয়েছে যাঁরা নতুন চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক কাজ করে থাকেন । আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি । ফলে আমার এই সম্মাননা সবার মিলিত প্রচেষ্টা । শিক্ষক হিসাবে আমার প্রথম কাজ পড়ুয়াদের পাঠ দান করা । অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এই কাজকেই অগ্রাধিকার দেব । আমাদের সবার এখন একটাই দায়িত্ব । ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবা । তাই ক্লাসরুমে পাঠদানের সঙ্গে আগামী 20 বছরে বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসতে চলেছে, তার জন্য আমরা নিজেদের কীভাবে তৈরি করব, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে ।"
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আজও ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন হরিস্বামী । বলেন, "বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই রাজ্যেও শিক্ষার ডিজিটালাইজেশন হওয়া খুব জরুরি । সেই মতো পাঠ্যক্রমও তৈরি হওয়া প্রয়োজন । এই সময়ে কিউআর কোড ভীষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে । সহজ উপায়ে পড়ুয়াদের কাছে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছতে হবে । নইলে রাজ্যের পড়ুয়ারা পিছতেই থাকবে । সেটা মোটেই ভালো নয় । সেই ভাবে নিজেকেও তৈরি করছি আমি । হাইব্রিড লার্নিংকেও গুরুত্ব দিতে হবে । একই সঙ্গে আমাদের ভাবতে হবে পরিবেশের কথাও । কারণ, পরিবেশ ঠিক না রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানো যাবে না । আমরা, বড়রা ইতিমধ্যেই পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে ফেলেছি । উন্নতির দিকে এগোতে গিয়ে যথেচ্ছ গাছ কেটেছি । কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অক্সিজেনের ঘাটতির বিষয়টি বুঝতে পেরেছি । পরিবেশকে ফের তৈরি করার শিক্ষাটা স্কুল থেকে শুরু করতে হবে । কারণ, এই পড়ুয়ারাই ভবিষ্যতে নীতি নির্ধারক হবে । ভবিষ্যতে একটা গাছ কাটার সময় তারা যেন ভাবে, সেই গাছ বাঁচিয়ে রেখে কীভাবে কাজ করা যায় । অথবা বাড়ির আবর্জনা কীভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় । জল কীভাবে বাঁচানো যায় । ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটা সুরক্ষিত পৃথিবী রেখে যাওয়াই এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ।"
আরও পড়ুন : National Teacher : ছাত্রদের স্বপ্ন বাঁচাতে চান এবছরে রাজ্য থেকে একমাত্র জাতীয় শিক্ষক হরিস্বামী