মালদা, ৬ ফেব্রুয়ারি : উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীপদ থেকে ছেলেকে সরাতে মরিয়া দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি (ডালু মিঞা)। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে জেলা কংগ্রেসে মোস্তাক আলমের কাছে ধাক্কা খেয়েই কি এই সিদ্ধান্ত? যদিও, ইশা খানকে ওই কেন্দ্র থেকে সরানোর জন্য আজ সাংবাদিক বৈঠকে অনেক কারণ দেখিয়েছেন তিনি।
গতকাল AICC মালদা জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব তুলে দেয় হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলমের হাতে। গতকাল এনিয়ে ডালুবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আজ জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। ডালুবাবু ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলম সহ দুই কার্যকরী সভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ হালদার (অর্জুন) ও কালীসাধন রায়।
ডালুবাবু বলেন, "জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোস্তাক সাহেবকে। সেটা জানাতেই আজকের এই সাংবাদিক বৈঠক। মোস্তাক সাহেব মালদায় ভালো কাজ করছেন। সেই কারণেই AICC তাঁকে দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে।"
PCC আপনাকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল। এমন কী ঘটল যে AICC আপনাকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিল? তিনি জানান, তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর AICC-র কর্তারা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে জানিয়েছিলেন, একসঙ্গে দুটো পদ ধরে রাখা যাবে না। সেসময় তাঁরা তাঁকে বলেন, আপনি দলের জেলা সভাপতি ছিলেন, সঙ্গে মন্ত্রীও হয়ে গেলেন। একটা পদ থেকে আপনাকে ইস্তফা দিতে হবে। তখন তিনি জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে তিনি PCC-র কার্যকরী সভাপতি। তাঁর অধীনে মালদা সহ ১০টি জেলা রয়েছে। PCC জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম খামে পাঠিয়েছিল। কিন্তু, তিনি দুটো পদে একসঙ্গে থাকতে পারবেন না। ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার নেওয়ার সময় তাঁর মাথায় আসেনি, তিনি আবার দুটো পদে চলে এসেছেন। PCC তাঁকে অস্থায়ীভাবে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল। তাই AICC জেলা সভাপতির দায়িত্ব মোস্তাক সাহেবের হাতে তুলে দিয়েছে। তিনি PCC-র কার্যকরী সভাপতি পদে রয়েছেন।
PCC ইশা খানকে উত্তর মালদার প্রার্থী করেছে, AICC কি প্রার্থী পরিবর্তন করবে? ডালুবাবুর জানান, PCC প্রার্থী ঘোষণা করে তা AICC-কে জানিয়েছে। AICC-র কোনও অভিযোগ থাকলে হয়তো এতদিনে তা তারা প্রকাশ করত। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কলকাতায় একটি কমিটি গঠন হবে। সেই কমিটি প্রার্থী নির্বাচন করবে। উত্তর মালদার জন্য ৩ জনের নাম পাঠানো হবে। ইশার নাম আগেই প্রস্তাবিত হয়েছে। আরও দুজনের নাম পাঠানো হবে। তাঁরা ভালোবেসে কংগ্রেস করেন। পদ না পেলেও তাঁরা দল পরিবর্তন করবেন না।
ডালুবাবু আজ জানান, তিনি নিজেই চাননি ইশা খান উত্তর মালদার প্রার্থী হোক। তিনি ইশাকে নিয়ে সোমেনবাবুর কাছে গেছিলেন। সোমেনবাবুকে তিনি জানিয়েছেন, ইশাকে তাঁর দরকার। দক্ষিণ মালদায় ইশা অনেক ভালো কাজ করছে। তা সত্ত্বেও সৌমেনবাবু ইশাকেই উত্তর মালদার প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।
মৌসমের দলত্যাগ প্রসঙ্গে ডালুবাবু আজ জানান, মৌসম রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে কোনওদিনই কংগ্রেস করত না। তাঁর মা রুবি নুর কংগ্রেস করতেন। মৌসম সেই সময় আইন নিয়ে পড়াশোনা করছিল। রুবি নুর মারা যাওয়ার পর তাঁরা মৌসমকে দলে আনেন। পশ্চিমবঙ্গে একটা হাওয়া উঠেছে, অনেকেই দল ছেড়ে চলে গেছে। তৃণমূল মৌসমের পিছনে অনেকদিন ধরেই লেগে ছিল। তিনি মৌসমকে সেভাবে দোষারোপ করছেন না। কিন্তু কংগ্রেস মৌসমকে MLA করেছে, MP করেছে, যুব কংগ্রেস সভাপতি করেছে, জেলা সভাপতি করেছে। তিনি ভেবেছিলেন, এবার যদি কংগ্রেস সরকার গঠন করে তবে হয়ত মৌসমকে রাজ্যের মন্ত্রীও করা হতে পারে।
পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ইশুতে ডালুবাবু জানান, রাজীববাবুকে CBI বহুদিন ধরে খুঁজছিল একজন সাক্ষী হিসেবে। কিন্তু, তিনি টালবাহানা করে যাননি। রাজীববাবুর উচিত ছিল CBI-র সহযোগিতা করা। এক্ষেত্রে তাঁর মনে হয় CBI সঠিক পথে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি অবশ্য কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি মনে করেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন পুলিশ কমিশনারের জন্য যেভাবে ধরনায় বসেছেন তা ঠিক নয়। ডালুবাবুর মতে, পুরোটা হয়তো না জেনেই রাহুল গান্ধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে এনিয়ে আর বেশি কিছু তিনি বলতে চান না।
প্রার্থী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠে আসছে সেই বিষয়ে মোস্তাক সাহেব জানান, হাইকমান্ড যাকে প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করবে তাকেই তাঁরা মেনে নেবেন। তাঁদের বর্তমান লক্ষ্য, ডালুবাবুর নেতৃত্বে লোকসভায় মালদার দুটো আসন দখল করা। কংগ্রেস যখনই দুর্বল হয়েছে, ভারতবর্ষে তখনই দাঙ্গা হয়েছে।
ডালুবাবুকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানোর বিষয়টি মানতে না পেরেই কি দল থেকে গতকাল কয়েকজন তৃণমূলে যোগদান করেছেন? এপ্রসঙ্গে মোস্তাক সাহেব জানান, দু-তিনজন ঠিকাদার লোভে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। মৌসমের পিছন পিছন যারা দল পরিবর্তন করেছে, তাদের জন্য নুর মেনশনে জায়গা হবে না। মালদা জেলার কোনও অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি, বিধায়ক কেউ দল ছাড়েনি। তবে বামফ্রন্টের সঙ্গে ভোটের জোট নিয়ে আজ কোনও মন্তব্য করতে চাননি মোস্তাক সাহেব।