মালদা, 9 জুন : বয়স মাত্র 21 বছর ৷ তার হৃদরোগ ছিল ৷ দিনমজুর পরিবারের ওই যুবককে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল পরিবারের লোকজন ৷ প্রথমে মালদা শহরে তাকে ডাক্তার দেখানো হয় ৷ পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তার হৃদযন্ত্র উলটো অবস্থায় রয়েছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে ৷ সেকথা শুনে অভিভাবকরা অনেক চেষ্টা করে কিছু অর্থ সংগ্রহ করেন ৷ ছেলেকে নিয়ে যান বেঙ্গালুরু ৷ সেখানে এক নামি হাসপাতালে তাকে দেখানো হয় ৷ ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরাও জানিয়ে দেন, তার হৃদযন্ত্র উলটো ৷ দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ৷ লাগবে প্রায় 20 লাখ টাকা ৷ এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় দিনমজুর বাবার ৷ তিনি ছেলেকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন ৷ এরপর রাজনৈতিক নেতাদের ধরে দিল্লির AIIMS-এ ছেলেকে নিয়ে যান ৷ সেখানে ছেলের অস্ত্রোপচার হয় ৷ ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে ওঠে ছেলে ৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলে সেখানেই একটি পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেটে সাফাইকর্মীর কাজ জুটিয়ে নেয় ৷ এক ঠিকাদারের অধীনে সে সেখানে কাজ করতে শুরু করে ৷ সেখানেই থাকতে শুরু করে সে ৷ কিন্তু মাস চারেক কাজ করার পরেই দেশে কোরোনা সংক্রমণে জারি হয় লকডাউন ৷ বন্ধ হয়ে যায় তার কাজ ৷ অনেক চেষ্টা করেও ওই যুবক বাড়ি ফিরতে পারেনি৷ শেষ পর্যন্ত গ্রামেরই কয়েকজনের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা হয় তার ৷ ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা বাস ভাড়া করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৷ এই যুবকও সেই দলে যোগ দেয় ৷ শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরল সে ৷ তবে কফিনবন্দী হয়ে ৷ আজ সেই যুবকের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেয় CPI(M) নেতৃত্ব ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 ব্লকের দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রামে ৷
মৃত যুবকের নাম রকি দাস ৷ তার বাবা দীপককুমার দাস দিনমজুরি করে সংসার চালান ৷ তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে ৷ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে৷ ছেলেদের মধ্যে বড় রকি ৷ ছোট ছেলে বিট্টু এখনও পড়াশোনা করে ৷ দীপকবাবু বলেন, “এইমস থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলে সেখানেই একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল ৷ তাতে সংসারেরও একটু সুরাহা হয়েছিল ৷ তাই আমরা তাকে কাজ ছাড়তে বারণ করিনি ৷ তাছাড়া এইমসে ওকে মাঝেমধ্যেই শারীরিক পরীক্ষার জন্য যেতে হত ৷ এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় লকডাউন ৷ ওর কাজ বন্ধ হয়ে যায় ৷ অনেক চেষ্টা করেও বাড়ি ফিরতে পারছিল না ৷ শেষ পর্যন্ত এলাকারই কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে তার দেখা হয় ৷ তারা সবাই বাস ভাড়া করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ গত 3 জুন দিল্লি থেকে বাস ছাড়ার কথা ছিল ৷ বাস ছাড়ার আগে রকি কিছু ফল কিনে খায় ৷ ফল খাওয়ার পর জলও খায় ৷ তারপরেই ওর বুকে ব্যথা শুরু হয় ৷ তাকে সঙ্গে সঙ্গে AIIMS নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মারা যায় সে ৷ শেষ পর্যন্ত এলাকার শ্রমিকরা তার মৃতদেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসে ৷”
CPI(M)-এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, “ওই যুবক পরিবারের অন্যতম উপার্জনকারী ছিল৷ তার মৃত্যুতে পরিবারটি সমস্যার মধ্যে পড়েছে৷ আজ আমরা তার বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা সহ কিছু জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছি ৷ এনিয়ে লকডাউনের মধ্যে জেলার মোট 13 জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ৷ আমরা দলের পক্ষ থেকে তাদের সবার পরিবারের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি ৷ ভবিষ্যতেও মৃত শ্রমিকদের পরিবারগুলিকে আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করব ৷ মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ৷”