মালদা, 7 ফেব্রুয়ারি : পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ইংরেজবাজারের দামোদরপুর এলাকা ৷ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্র ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত স্কুল পড়ুয়ারা গতকাল মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে ৷ অবরোধে শামিল হল স্থানীয় লোকজনও ৷ ঘাতক গাড়িটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌঁছোলে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ পরবর্তীতে পুলিশ অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷ গোটা ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকেই অভিযোগ এলাকাবাসীর ৷
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল সকাল সাড়ে 10টা নাগাদ ৷ সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্র ৷ সুদীপ্ত বাড়ই ও খোকা বাইন৷ তারা শান্তাদেব্যা হাইস্কুলের ছাত্র৷ দু’জনেই স্থানীয় দৌলতপুর কলোনির বাসিন্দা ৷ স্কুলে ঢোকার মুহূর্তে পিছন থেকে দ্রুতগতিতে তাদের সাইকেলে ধাক্কা মারে চাঁচল থেকে মালদাগামী একটি ম্যাক্সিক্যাব ৷ ক্যাবের রুট ভায়া কোতওয়ালি থাকলেও সেটি ভায়া মানিকচক হয়ে আসছিল ৷ সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দু’জনেই৷ গুরুতর আহত হয় তারা ৷ সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষজন ও স্কুল শিক্ষকরা দু’জনকে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যায়৷ ঘাতক গাড়িটিকে আটকে দেয় উত্তেজিত জনতা৷ পরিস্থিতি বুঝে ম্যাক্সিক্যাবের চালক ও খালাসি গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়৷ জনরোষ আছড়ে পড়ে গাড়ির উপর৷ চলে ব্যাপক ভাঙচুর৷ একই সঙ্গে ক্ষিপ্ত পড়ুয়ারা মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে ৷ তাদের অভিযোগ, এর আগেও একই জায়গায় একাধিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে পড়ুয়ারা ৷ দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য কিছুদিন স্কুলের মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ দেওয়া হয়েছিল ব্যারিকেডও৷ কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার তুলে নেওয়া হয় ৷
পথ অবরোধের খবর পেয়ে ঘণ্টাখানেক পর ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌঁছোয় ৷ উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ৷ এক পুলিশকর্মীকে ধাক্কাধাক্কিও করা হয় ৷ তবে গাড়ি ভাঙচুর কিংবা পুলিশি হেনস্তার কোনও ছবি কাউকে তুলতে দেওয়া হয়নি ৷ এক পথচারি সেই ছবি তুলতে গিয়ে গণরোষের শিকার হয় ৷ মারধর করা হয় এক সাংবাদিককেও ৷
গতকাল ছুটিতে ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৷ স্কুলের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক মনোজ মণ্ডল বলেন, "আজ স্কুল শুরুর আগে ঘটনাটি ঘটে ৷ স্কুলের দুই ছাত্র সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসছিল ৷ সেই সময় একটি ম্যাক্সিক্যাব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের ধাক্কা মারে৷ কিছুদিন আগেও সেখানে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়েই সেখান থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার তুলে নেওয়া হয় ৷ এর আগেও একাধিকবার ওই একই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ দুর্ঘটনার পর স্কুলের স্টাফ দিয়ে ওই দুই ছাত্রকে মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে ৷ বর্তমানে তারা বিপন্মুক্ত বলে জানতে পেরেছি ৷ এই ঘটনার পর স্কুলের পড়ুয়া ও এলাকার লোকজন পথ অবরোধ করেছে ৷ সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করার পরেও কেন সেখান থেকে তাদের তুলে নেওয়া হল তা নিয়ে প্রশাসনের জবাব চায় তারা ৷ একই দাবি আমাদেরও৷”
এক পড়ুয়ার অভিভাবক দীনেশ সরকার বলেন, “পড়াশোনার জন্য ছেলেমেয়েদের আমরা স্কুলে পাঠাই ৷ কিন্তু বারবার এমন দুর্ঘটনার পর ছেলেমেয়েদের আর স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছি না ৷ এদিনের ঘটনা নিয়ে চারবার দুর্ঘটনা ঘটল ৷ এর দায়িত্ব কি স্কুলের শিক্ষকদের নেই? স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ৷ এর আগে আমাদের আন্দোলনের জেরে দিন পাঁচেক ওই জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছিল৷ তারপর ফের একই ছবি ৷ আমাদের দাবি, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ৷”
যদিও গতকাল পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনার পর ইংরেজবাজার থানার IC অমলেন্দু আশ্বাস জানান, "আজ থেকেই দুর্ঘটনার জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে৷ খুব তাড়াতাড়ি সেখানে রবারের স্পিড ব্রেকারও বসানো হবে৷" তাঁর এই আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷ যদিও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও অনেকটা সময় লেগে যায়৷