মালদা, ১৬ মে : কাউকে কিছু না জানিয়েই হায়দরাবাদ থেকে আচমকা মালদায় নিজের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক৷ গ্রামবাসীদের চোখ এড়িয়ে রাতের অন্ধকারে প্রবেশ করেন নিজের বাড়িতে৷ আজ সকালে সেই কথা চাউর হতেই প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে৷ পঞ্চায়েতের সাহায্যে স্থানীয় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টারে পাঠানোর পাশাপাশি ডেটল জলে ধোয়া হয় গোটা গ্রাম ৷ ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাধাপুকুর গ্রামে৷
পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক মাস তিনেক আগে তেলাঙ্গানার হায়দরাবাদে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ লকডাউনে সেখানেই আটকে পড়েন তিনি ৷ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্গে থাকা টাকাপয়সাও শেষ হয়ে আসছিল৷ শেষমেশ ১২ দিন আগে হায়দরাবাদ থেকে বেরিয়ে পড়েন৷ বিভিন্ন উপায়ে গতকাল রাতে এসে পৌঁছায় নিজের গ্রামে৷ তবে সরকারি নির্দেশিকা মেনে প্রশাসনের চালু করা গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাসের কোয়ারানটিন সেন্টারে না গিয়ে রাতের অন্ধকারে ঢুকে পড়ে নিজের বাড়িতে৷ আজ সকালে সেইকথা জানতে পারে গ্রামবাসীরা৷ এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়৷ খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে ৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ একপ্রকার জোর করেই ওই শ্রমিককে অ্যাম্বুলেন্সে পাঠানো হয় স্থানীয় যদুপুর হাইস্কুলের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টারে৷
এরপরেই এলাকা স্যানিটাইজ করার কাজে নেমে পড়েন গ্রামবাসীরা৷ ডেটল জলে গুলে ধোয়া হয় এলাকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাড়িঘরের দেওয়ালও৷ অন্যদিকে ওই শ্রমিকের মা বলেন, “ছেলে হায়দরাবাদে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন৷ গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে এসেছেন৷ ১২ দিন আগে সে হায়দরাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন বাড়ির উদ্দেশে৷ আজ সকাল থেকে গ্রামবাসীরা আমাকে বলতে থাকেন, কেন ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দিলাম৷ আমরা ওকে আগেই বলেছিলাম সরাসরি বাড়িতে যেন না আসে৷ প্রয়োজনে গ্রামের কাছে এসে যেন আমাদের ফোন করে৷ আমরাই ব্যবস্থা করব৷ কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি৷ বাড়িতে আসলেও আমরা ছেলের সংস্পর্শে আসিনি৷ ওকে কিছু করতেও দিইনি৷ আজ পঞ্চায়েত সদস্য এসে ছেলেকে কোয়ারানটিন সেন্টারে নিয়ে গিয়েছে৷”
এক স্থানীয় বাসিন্দা দয়াল ঘোষ বলেন, “গতকাল রাতে বৃষ্টির মধ্যে ওই ছেলেটি হায়দরাবাদ থেকে বাড়িতে আসে৷ তাঁর ফোন সুইচ অফ থাকায় সে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি৷ রাত হয়ে যাওয়ায় বাড়ির লোকজনও কিছু করতে পারেনি ৷ আজ সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই পড়শিরা ছেলেটিকে গালাগালি করে ৷ খবর দেওয়া হয় পঞ্চায়েত সদস্যকে৷ তাঁর উদ্যোগেই ওই শ্রমিককে সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে পাঠানো হয়৷ এরপরই কোরোনা আতঙ্কে এলাকার লোকজনেরা গোটা গ্রাম ডেটল দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে৷”