মালদা, 6 মার্চ: ভোররাতের এক ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে দফারফা মালদার আমচাষের ৷ বৃষ্টিতে আমের ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছে আমচাষিরা ৷ ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়েছে জেলা উদ্যানপালন দপ্তরও ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দপ্তরের পক্ষ থেকে আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ তবে এখনও দপ্তরের আশা, তেমন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার জেলায় আমের রেকর্ড ফলন হতে পারে ৷
আজ ভোরে জেলা জুড়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় ৷ এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে সেই বৃষ্টিপাত ৷ বৃষ্টিতে জেলার অনেক আমবাগানে জল জমেছে ৷ সবচেয়ে বড় বিষয়, দীর্ঘকালীন শীতের জন্য এবার এই জেলার বাগানগুলিতে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল ৷ এই সময় মুকুলে ফুল ফুটতে শুরু করেছিল ৷ বৃষ্টিতে সেই ফুল ঝরে গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, বৃষ্টির জলে মুকুলে লেগে থাকা ফুলের পাঁপড়ি পচে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে ৷ পুরাতন মালদার সাহাপুরের আমচাষি সুব্রত ঘোষ বলেন, “এই সময় 80 শতাংশ মুকুলে ফুল ফুটে গিয়েছে ৷ এমনিতেই বৃষ্টির জলে মুকুলের ক্ষতি হয় ৷ বৃষ্টির জল শুষে নেওয়া মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে ৷ ধীরে ধীরে কালো হয়ে ঝরে যাবে ৷ এখনও যতটুকু মুকুল টিকে রয়েছে, তাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ভালো ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে ৷ প্রত্যেক আমচাষিরই এটা করা উচিত৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলিতে ভালো মুকুল এসেছিল ৷ কিন্তু আজকের বৃষ্টিতে মুকুলের ভালো ক্ষতি করে দিল ৷ এরপর শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখি তো বাকিই আছে ৷ তবে প্রকৃতির উপর আমাদের কারোর হাত নেই ৷ তেমন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর না হলে আম হয়তো হবে, কিন্তু একটা বড় ক্ষতি হয়েই গেল ৷”
জেলা উদ্যানপালন দপ্তরও স্বীকার করছে, আজ ভোরের বৃষ্টিতে জেলার আমচাষে বেশ ভালো ক্ষতি হয়েছে ৷ দপ্তরের উপ অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, “এক সপ্তাহ আগে থেকেই জেলায় মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৷ তবে প্রথমদিকের হালকা বৃষ্টিতে আমের কোনও ক্ষতি হয়নি ৷ বরং আমচাষে উপকার হয়েছে ৷ তাতে গাছের পাতা পরিষ্কার হয়ে যায়, সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার গতি বেড়ে যায় ৷ তাছাড়া যেসব গাছে আগাম মুকুল এসেছিল, সেই গাছগুলিতে গুটি চলে আসায় বৃষ্টিতে গুটি শক্ত হবে ৷ কিন্তু আজ সকালে ব্যাপক হারে বৃষ্টি নামায় মুকুলের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায় । যদিও আজ বৃষ্টির পরেই রোদ উঠেছে ৷ এটা আমচাষের পক্ষে ভালো ৷ এমনিতেই জেলার আমচাষিরা গাছে প্রচুর স্প্রে করছেন ৷ আমরা এই মুহূর্তে রোগ পোকা না দেখে তাঁদের আর স্প্রে করতে বলছি না ৷ অতিরিক্ত স্প্রে হলে মৌমাছি কিংবা অন্যান্য কীটপতঙ্গ পরাগমিলন করতে পারে না ৷ তাই গুটি ধরার আগে আমরা আর স্প্রে না করারই পরামর্শ দিচ্ছি ৷ সম্ভব হলে কোনও ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে ৷ এখনও পর্যন্ত এই জেলার আমগাছগুলিতে সেভাবে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি ৷ আমরা আশাবাদী, আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবার এই জেলায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে ৷ মনে রাখতে হবে, এখনও জেলার প্রায় 15-20 শতাংশ গাছে মুকুল আসেনি ৷”