মালদা, ১৩ ফেব্রুয়ারি : আর কয়েক মাস পর লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্র থেকে BJP-কে সরাতে দেশের বিরোধী শক্তিগুলিকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক ব্রিগেডে সেই ছবি তুলে ধরেছেন তিনি। ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড করে বামফ্রন্টও বার্তা দিয়েছে, রাজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগিয়ে চলেছে গেরুয়া শিবিরও। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে BJP-কে সরাতে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোট করবেন না তাঁরা। বরং বামেদের সঙ্গে জোটে আগ্রহী। সম্প্রতি CPI(M)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে, এই দুই দলের জোট হলে ভোটে তার কতটা প্রভাব পড়তে পারে তা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই দেখা গেছে। সেবার বাম-কংগ্রেসের জোটের প্রভাবে মালদার ১২টি আসনের মধ্যে কোথাও জায়গা করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। দুই দলের জোট হলে এবার কী হবে, তা জানতে মালদা জেলার দুই শিবিরের কান্ডারির সঙ্গে কথা বলে ETV ভারত।
মালদা জেলা একসময় কংগ্রেসের গড় হিসাবেই পরিচিত ছিল। অন্তত লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় কংগ্রেসই শেষ কথা বলে এসেছে। তবে এই জেলার ভোটের ছবিটা একটু ভিন্ন। বিভিন্ন ভোটে সেই ছবি পরিবর্তিত হয়। পঞ্চায়েত কিংবা পৌরভোটের সঙ্গে বিধানসভা আর লোকসভা ভোটের ছবি মেলে না। একসময় গাজোল, হবিবপুর ও পুরাতন মালদায় বামেদের ভালো প্রভাব ছিল। তাদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল মানিকচক, হরিশ্চন্দ্রপুর কিংবা রতুয়াতেও। তবে ২০১১ সালের পর থেকে গোটা রাজ্যের সঙ্গে মালদাতেও বামেদের প্রভাব কমতে শুরু করে। ছবিটা একটু পালটে যায় ২০১৬ সালে। প্রবল তৃণমূল হাওয়াতেও সেবারের বিধানসভা নির্বাচনে মালদা জেলার ১২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮টি, CPI(M) ২টি, BJP একটি ও বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী একটি আসনে জয় পায়। বেশিরভাগ আসনেই অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। মনে রাখতে হবে, সেবার বাম ও কংগ্রেস জোট করে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল। সেবারের ভোটে বাম-কংগ্রেসের জোট এই জেলায় অবশ্য ওই দুই দলের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল, উত্তর মালদা কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোট একধাক্কায় ১৪.৩৭ শতাংশ কমে গেছে। বামেদের ভোট কমেছে ১৩.৪৮ শতাংশ। তৃণমূল সেখানে ভোট বাড়িয়েছে ১৬.৯৭ শতাংশ। BJP-ও সেখানে নিজেদের ভোট ৮.৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলে। অন্যদিকে দক্ষিণ মালদায় কংগ্রেসের ভোট কমে ১৮.৬৪ শতাংশ। CPI(M)-র ভোট কমে ১৭.৮৪ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে ১৪.৪৯ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে BJP এখানে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। তবে এই কেন্দ্রে তৃণমূল সেবারই প্রথম প্রার্থী দিয়েছিল। ভোট পেয়েছিল ১৭.৬৩ শতাংশ। ফলে সেবারই জেলার বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল, বিধানসভা ভোটে জোট ছাড়া তৃণমূলকে আটকানো অসম্ভব। সেই ভোটের ফলই ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোটের রাস্তা প্রশস্ত করে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম ETV ভারতকে বলেন, "বামেদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হবে কি না তা নিয়ে এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তবে এই জেলায় এখনও বামেদের নির্দিষ্ট ক্যাডার রয়েছে। কমিটেড ভোটও আছে। এটা উপেক্ষা করা যায় না। জোট হলে লোকবল বাড়বে। ২০১৪-তে মালদার দুটি লোকসভা আসনই কংগ্রেস জিতেছিল। তাই জোট হলেও আমরা জেলার দুটি আসনেই নিজেদের প্রার্থী দেব।" তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রামগঞ্জে যেভাবে তৃণমূলের দিক থেকে মানুষ মুখ সরিয়ে নিচ্ছে, তাতে তাঁরা নিশ্চিত, এবারও দুটি আসনেই তাঁরা জিততে চলেছেন। তবে বামেদের সঙ্গে জোটের বিষয়টি দুই দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বই ঠিক করবে।
CPI(M)-র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করে বামফ্রন্ট ভালো ফল করেছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ মালদায় তাঁদের ফল খারাপ হলেও উত্তর মালদায় তাঁদের ভালো ফল হয়েছিল। তবে ২০১৬ সালে কংগ্রেস বা বামেদের ভোট প্রাপ্তি সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। ওই ভোটে তাঁরা জোট বেঁধে লড়েছিলেন। জোটের জন্য এই জেলার ১১টি আসনে জোট প্রার্থীরা জয়ী হন। এবার কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের জোট হবে কি না তা তিনি জানেন না। এটা দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটি ঠিক করবে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল আর BJP ১৯৯৮ সাল থেকেই একে অন্যের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছে। যাইহোক না কেন, নিজেদের অভিমুখ ঠিক করে তাঁরা ভোটের ময়দানে নামতে প্রস্তুত।
মালদায় দুই দলের নিচুতলার কর্মীরা লোকসভা নির্বাচনে জোটের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মোস্তাক সাহেব কিংবা অম্বরবাবু, দুজনেই বলছেন তাঁরা এখনই এনিয়ে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ, জোটকে কর্মীদের অনেকে সমর্থন করলেও অনেকে তা করেন না। তাই গলায় জোটের সমর্থনে প্রচ্ছন্ন সুর থাকলেও আপাতত তাঁরা হাইকম্যান্ড আর পলিটবিওরোর দিকে তাকিয়ে।