মালদা, 7 ডিসেম্বর : তিন বছরের শিশুরাও রাজ্যে আজ আর সুরক্ষিত নয়৷ তাদেরও ধর্ষণ করতে পিছপা হচ্ছে না অপরাধীরা ৷ মালদা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন হরিশ্চন্দ্রপুরের তিন বছরের নির্যাতিত শিশুকন্যাকে দেখার পর আজ এই মন্তব্য করেন BJP-র রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ একইসঙ্গে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার যথাযথ শাস্তি হবে কি না তা নিয়ে তাঁর যথেষ্ট সংশয় রয়েছে ৷ সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আজ মালদা শহরে একটি প্রতিবাদ মিছিলও করেন লকেট ৷
সাতদিন আগে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 ব্লকের একটি গ্রামে তিনবছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনার তিনদিনের মাথায় শিশুকন্যাকে মালদা মেডিকেলে ভরতি করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ এখনও মেডিকেলের মাতৃ-মা বিভাগে চিকিৎসাধীন সে ৷ আজ তাকে দেখতে হাসপাতালে যান BJP এই সাংসদ ৷ শিশুকন্যাকে দেখে বেরোনোর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “7-8 দিন আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে তিন বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয় ৷ আমি দিল্লিতেই সেই খবর পেয়েছিলাম৷ পশ্চিমবঙ্গে তিন বছরের বাচ্চার উপর অত্যাচার করতেও ছাড়ছে না অপরাধীরা৷ ওই বাচ্চাটির অবস্থা এখনও খুব খারাপ ৷ মায়ের কোলে রয়েছে ৷ সে নিজেও জানে না তার সঙ্গে কী ঘটেছে ৷ শুনেছি, দোষী ধরা পড়েছে ৷ কিন্তু জানি না, দোষীকে সেই শাস্তি দেওয়া হবে কি না ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ওই ধর্ষককে যথাযথ শাস্তি দেবেন কি না কেউ জানে না ৷ এদের কঠোরতম শাস্তি না দেওয়া হলে এই ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে ৷ যেভাবে হায়দরাবাদে গণধর্ষণকাণ্ডে গোটা দেশ ফুঁসে উঠেছে, এই রাজ্যের ঘটনার জন্য যদি সেভাবেই দেশবাসী ফুঁসে ওঠে, তাহলে নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর লোকসান হয়ে যাবে ৷ সেই কারণেই এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে ৷ আজ আমরা সবাইকে রাজনৈতিক রং ভুলে এমন ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার আবেদন জানাচ্ছি ৷ মালদার ঘটনার প্রতিবাদে গোটা দেশ যেন গর্জে ওঠে ৷ এসব ঘটনা নিয়ে এখানকার বাসিন্দা, রাজ্য মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন কী বলেছেন আমি জানি না ৷ কিন্তু রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ৷ যারা দোষী, তারা কিছুদিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে কলার তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ কামদুনি থেকে আরও অনেক ঘটনায় তা আমরা দেখেছি ৷ তাই প্রশাসনের উপর আমরা আর ভরসা করতে পারছি না ৷ আমরা মানুষের রায় নিয়ে বাঁচতে চাই ৷ গণতন্ত্রের রায় নিয়ে বাঁচতে চাই ৷ আমাদের প্রশ্ন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হয়েও মহিলাদের যদি সুরক্ষা না দিতে পারেন তবে সব মহিলা তাঁর উপর থেকে আস্থা হারাবে ৷ আর এভাবে আস্থা হারানোর জন্যই 2021-এ BJP এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে ৷ কারণ, BJP প্রত্যেক মহিলা থেকে শুরু করে বাচ্চাদের সঙ্গেও রয়েছে ৷ হায়দরাবাদে এনকাউন্টারে চার ধর্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় সেখানকার পুলিশ আইনগত বিবৃতি দিয়েছে ৷ কিন্তু এই ঘটনায় সারা দেশ খুশি ৷ এদেশে গণতন্ত্রই শেষ কথা বলে ৷ মানুষই মুখ্যমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে পদে বসায় ৷ মানুষের দাবি, ধর্ষকদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে ৷ এই এনকাউন্টার মানুষের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে ৷ এক মহিলা হিসাবে আমি বলতে পারি, হায়দরাবাদে নির্যাতিতার পরিবার এই ঘটনায় শান্তি পেয়েছে৷ মহিলারাও এই ঘটনায় শান্তি পেয়েছে ৷”
হায়দরাবাদ পুলিশের ভূমিকায় লকেট চট্টোপাধ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও অনেকেই তা মেনে নিতে পারেনি ৷ অনেকে আবার এই ঘটনাকে ঢাল করে দেশের অন্যত্র এনকাউন্টারের অপপ্রয়োগ হতে পারে বলেও মনে করছে৷ হায়দরাবাদে পুলিশের গুলিতে মৃত এক অভিযুক্তের স্ত্রী গোটা ঘটনাকে পরিকল্পিত খুন বলে মন্তব্য করেছেন৷ এসব প্রশ্ন নিয়ে ETV ভারতকে লকেট বলেন, “হায়দরাবাদ পুলিশ এই এনকাউন্টার নিয়ে বয়ান দিয়েছে ৷ সেই বয়ানের প্রেক্ষিতে আমি বলতে পারি, আমরাও চাই, এমন ঘটনায় দোষীদের খুব তাড়াতাড়ি সাজা ঘোষণা করা হোক ৷ তার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এদের বিচার করা হোক ৷ যাতে অল্পদিনের মধ্যেই অপরাধীরা সাজা পায় ৷ হায়দরাবাদ পুলিশ এই বিচার প্রক্রিয়াকে বেশিদিন ধরে টেনে নিয়ে যায়নি ৷ তার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ দেব ৷ মহিলা সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন ৷ তাঁর এই চিন্তাকে আমরা সবাই স্বাগত জানাই ৷ আর হায়দরাবাদে মৃত এক অপরাধীর স্ত্রী যে অভিযোগ তুলেছেন, তা পুলিশের বিচার্য বিষয়৷ আমরা শুধু বলতে চাই, যে অপরাধ করেছে তার দ্রুত সাজা হোক ৷”