মালদা, ১৭ মে : রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অমিত মালব্য, এমনটাই অভিযোগ করলেন BJP সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, ‘‘কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের চণ্ডীপুর গ্রামে কয়েকদিন আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’ তবে সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷
কোরোনা আতঙ্কের জেরে দুই গোষ্ঠীর বিবাদে গত ১০ মে রাতে প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার চণ্ডীপুর এলাকায় ৷ একটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয় ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই বিশাল পুলিশবাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স এলাকায় টহলদারি চালায়৷ আলোচনার মাধ্যমে দুই গোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার আর্জি জানান হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এর বিডিও ও স্থানীয় থানার আইসি ৷
এই ঘটনা নিয়ে টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও ৷ এরপরই এই ঘটনা নিয়ে টুইট করেন BJP-র দুই শীর্ষনেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অমিত মালব্য৷ টুইটের প্রেক্ষিতে ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে গত ১২ ও ১৩ মে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মালদা শহরের পিরোজপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হক৷ তিনি নিজের অভিযোগপত্রে জানান, ‘‘এই দুই BJP নেতা একটি ভুল খবরের ভিত্তিতে টুইট করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন৷’’ BJP-র এই দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানান পুলিশের কাছে ৷
তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ইংরেজবাজার সাইবার ক্রাইম থানা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে৷ বর্তমানে ওই মামলা জেলা আদালতে বিচারাধীন৷ তবে অভিযোগকারী সাজ্জাদ হকের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ৷
আজ উত্তর মালদার BJP সাংসদ খগেন মুর্মু এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জানান, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনাটি সামনে আসার পরই আমরা জেলা নেতৃত্বের তরফে ওই গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করি৷ ওই ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল৷ কিন্তু কনটেইনমেন্ট জোন থাকায় আমাদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি৷ আমরাও প্রশাসনের আবেদনে সাড়া দিয়ে ফিরে এসেছি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ আমাদের এই দেশে সকলের বসবাস করার অধিকার আছে৷ কিন্তু কিছু মানুষ এই দেশের বৈচিত্রের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে ৷ যারা এইসব কাজ করছে, তারা কোনও জাতি কিংবা ধর্মের নয়৷ এই সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে৷’’
মুখ্যমন্ত্রীকে পরোক্ষে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে থেকেও কোথাও কোথাও মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ একজন যা বলবেন, এখানে সেটাই আমাকে বলতে হবে৷ আমি চাই যারা এই ঘটনায় দোষী, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক৷ আর যারা এনিয়ে কিছু বলতে চাইছে, তাদের বলতে দেওয়া হোক৷ দলের দুই শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা এখন আদালতের বিচারাধীন৷ আদালতই অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে৷ তবে এটা নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র৷ এই রাজ্যে সবই রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে হয়৷ রাজ্যে যত ঘটনা ঘটে, প্রতিটির পিছনেই রাজনীতি জড়িয়ে রয়েছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্নভাবে এসব ঘটনা ঘটায়৷ আর টুইটারে কে কী পোস্ট করবে, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়৷ টুইটারে পোস্ট করা যেকোনও বিষয়কেই রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়৷”
কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনাটি বর্তমানে বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় সাংসদ খগেন মুর্মুর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর৷