মালদা, 11 মে : কাঁচা রাস্তা পাকা হওয়ার কথা ছিল । তার জন্য 100 দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছিল 33 লক্ষের বেশি টাকা । ঢাকঢোল বাজিয়ে কাজের ফলকও লাগানো হয়েছিল । গ্রামবাসীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন । বৃষ্টির মধ্যে আর কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হবে না । এভাবেই পেরিয়েছে প্রায় তিনটি বছর । কাজের ফলক মাটিতে মিশে যাওয়ার দশা । রাস্তায় এখনও ওড়ে ধুলো, জমে কাদা । কিন্তু সরকারি বরাদ্দের টাকা কোথায় গেল ? গ্রামবাসীরা আঙুল তুলছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আর প্রধানের দিকে । এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আবার পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা । তাঁর সাফ কথা, এবারও বর্ষায় ভুগতে হবে গ্রামবাসীদের । রাস্তা এখনই হচ্ছে না । কবে হবে, সেটাও জানা নেই । তবে সরকারি বরাদ্দের বিষয় নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি (Bad road condition of Jhanjhra village in Malda)।
ঘটনাস্থল পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাঁঝরা গ্রাম । 2019-20 অর্থবর্ষে গ্রামে শ’দেড়েক মিটার ঢালাই রাস্তার কাজ 100 দিন প্রকল্পে বরাদ্দ হয় । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সেই কাজের জন্য সিমেন্ট-পাথর-বালিও পড়েছিল । কিন্তু কোনও অজানা কারণে সেসব ফের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় । রাস্তার জন্য তাঁরা বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধানের কাছে দরবার করেছেন । গ্রামে আয়োজিত 'পাড়ায় সমাধান' বৈঠকেও তাঁরা বিষয়টি তোলার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেন । এত কিছু হয়েছে । শুধু রাস্তাটাই পাকা হয়নি ।
গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মাল বলছেন, "পঞ্চায়েত সদস্যের লোক রাজু দত্ত বলেছিল, গ্রামে ঢালাই রাস্তা হবে । আমরা তাঁর সঙ্গে সবসময় ছিলাম । যেখানে ডাকত, যেতাম । কিন্তু সে অর্ধেক রাস্তা করলেও বাকিটা করেনি । সম্প্রতি বিডিও যখন গ্রামে বৈঠক করতে বসলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু রাজু দত্ত আমাদের মুখ বন্ধ করে দেয় । কিছু বলতে দিল না । বরাদ্দ টাকার কী হয়েছে জানি না । তবে দেখেছি, রাস্তার জন্য পাথর, সিমেন্ট, বালি সবই পড়েছিল । কিন্তু সেসব নিয়ে চলে যাওয়া হল জলঙ্গা গ্রামে । আমরা এই রাস্তা চাই । রাস্তা না থাকায় আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে ।" অপর গ্রামবাসী পাঞ্ছি রায় বলেন, "মেম্বার আর প্রধান এই রাস্তার টাকা খেয়ে নিয়েছে । তাই রাস্তা ঢালাই করছে না । ভোটের সময় এরা সব দৌড়ে আসে । নানা সম্বোধন করে । এবার ভোটের সময় আসলে এদের ঝাঁটাপেটা করব । রাস্তার কাজের বোর্ড লাগিয়েছিল । সেটা মাটির নীচে চলে গিয়েছে । বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা জমে যায় । আমরা শুধু এই রাস্তাটা চাইছি । আর কিছু চাই না ।"
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তথা মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা গৌতম দাসের বক্তব্য, "2019-20 অর্থবর্ষে আমি 100 দিন প্রকল্পে যে কাজ পেয়েছিলাম, তার মধ্যে ঝাঁঝরা গ্রামে দুটি রাস্তা দিয়েছিলাম । কাজের টেন্ডার হয়েছিল । ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের ওয়ার্ক অর্ডারও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল । সম্প্রতি পাড়ায় সমাধান প্রকল্পে ঝাঁঝরা ও ঝিমুলি গ্রাম কয়েকশো মিটারের একটি রাস্তা পায় । আমি কথা বলে ঝাঁঝরা গ্রামের ওই রাস্তাটাকে এই প্রকল্পে ঢুকিয়ে দিই । সেখানে 90 শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে । কিন্তু একটি গলি রাস্তা বাকি থেকে গিয়েছে । অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সি কোডে ওই রাস্তাটা আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সেকারণে এই কাজ করা যাচ্ছে না । এনিয়ে আমি বিডিওর সঙ্গেও কথা বলেছি । এবার বর্ষায় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যা পোহাতে হবে । আমি চেষ্টা করছি, চলতি অর্থবর্ষে যেন কাজটি করে ফেলা যায় ।"
আরও পড়ুন : Flood Relief Scam : বন্যা ত্রাণের টাকা বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ, জানাজানি হতেই টাকা ফেরতের হিড়িক !
পঞ্চায়েত প্রধান রুলেখা বিবি বলেন, "এই কাজ যখন বরাদ্দ হয় তখন আমি প্রধান ছিলাম না । তবে আমি জানতে পেরেছি, এই রাস্তাটির কাজ বাকি থেকে গিয়েছে । রাস্তাটি ঢালাই করা যায় কি না, তা দেখছি ।"