মালদা, 23 মে : বিহার পুলিশের হানায় ভিটেহীন মানুষগুলির পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন (Administration Started Process of Rehabilitating Homeless People After Being Attacked by Bihar police in Malda) ৷ এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় কোনও মন্তব্য না করলেও, এমনটাই জানিয়েছেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি বিহারের কাটিহার জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও দফায় দফায় কথা বলছেন ৷ এই ঘটনা বিহার পুলিশের ভূমিকা যে মালদা জেলা প্রশাসন ভাল চোখে দেখছে না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি ৷ এ দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গৃহহীন মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ৷ একই আশ্বাস দিয়েছেন রেড ভলান্টিয়ারের সদস্যরাও ৷ ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূলের ভূমিকাকে কটাক্ষ করেছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম ৷
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধেয় হঠাৎ করেই বিহার পুলিশ হানা দেয় হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সাদলিচক গ্রামপঞ্চায়েতের সহরা বহরা এলাকায় ৷ সেখানে বাংলা-বিহার সীমানায় একটি রাস্তার ধারে, পশ্চিমবঙ্গের জমিতে বসবাসকারী 20টি পরিবারের ঝুপড়ি ভেঙে দেয় প্রতিবেশী রাজ্যের পুলিশ ৷ বিহার পুলিশ দাবি করে, ওই জমিটি বিহার সরকারের ৷ এ নিয়ে সেখানকার আদালতে একটি মামলা হয়েছিল ৷ সেই মামলার রায়ে বিচারক এইসব অবৈধ নির্মাণ খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আদালতের রায় মেনেই পুলিশ ওই নির্মাণগুলি ভেঙে দিয়েছে ৷ সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ৷ ওই জমিটি আদতে কোন রাজ্যের ? তা খতিয়ে দেখার জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন ৷ জানা গিয়েছে, মাপজোকে জমিটি এ রাজ্যের বলে নিশ্চিত হওয়ার পরেই জেলাশাসক বিষয়টি নিয়ে বিহার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে ৷
এ দিকে, ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও খোলা আকাশের নীচে দিন কাটছে উচ্ছেদ হওয়া ওই 20টি পরিবার ৷ গোটা ঘটনায় তাঁরা এলাকারই এক তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামাণিকের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ৷ কারণ, ওই বাড়িগুলির পিছনে গণেশ প্রামাণিকের জমি ৷ সেই জমির সামনে ভাল করতে তিনি বিহার পুলিশকে কাজে লাগিয়ে এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ৷ আরও অভিযোগ, তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছেন সাদলিচক গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার ৷ বিহার পুলিশের এহেন অনৈতিক কাজের পরেও, বিহার পুলিশ ও গণেশ প্রামাণিক নাকি এই পরিবারগুলিকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ৷ তেমনটাই অভিযোগ এক গৃহহীন চন্দনা দাসের ৷
তিনি বলেন, “গতকালও বিহারের পুলিশ এসে আমাদের হুমকি দিয়ে গিয়েছে ৷ তাঁরা দাবি করেছে, এটা বিহারের জমি ৷ এখানে ত্রিপল টাঙানো যাবে না ৷ গণেশ প্রামাণিক, কার্তিক প্রামাণিকরা বলছেন, তাঁদের জমির পজিশন খালি করে দিতে হবে ৷ নইলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের মেরে ফেলবে ৷ সেদিনের পর থেকেই আমরা খুব কষ্টে আছি ৷ ঠিকমত খেতেও পাচ্ছি না ৷ এখন ধান কাটার সময় ৷ ঘরবাড়িই ঠিক নেই তো ধান কাটতে যাব কীভাবে ?”
আরও পড়ুন : Bihar Police Broke Houses in Malda : রাজ্যের হরিশচন্দ্রপুরে 20টি ঝুপড়ি ভাঙার অভিযোগ বিহার পুলিশের বিরুদ্ধে
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তজমুল হোসেনের বক্তব্য, যে জায়গায় এই পরিবারগুলি দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করছে, সেই জমি হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের খতিয়ানে রয়েছে ৷ তিনি বলেন, “এই জমিটি এক নম্বর খতিয়ানের ৷ এটা এই রাজ্যের জমি ৷ বিহার পুলিশ কীভাবে এই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে এখানকার মানুষজনকে উচ্ছেদ করল ? দুই রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরে আলোচনার পর এদের উচ্ছেদ করার প্রয়োজন থাকলে সেটা আগে জানানো যেত ৷ তাহলে আমরা এই মানুষগুলির জন্য আগেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতাম ৷ আমরা এই মানুষগুলির পাশে আছি ৷ ঘটনাটি রাজ্য নেতৃত্বকেও জানিয়েছি ৷ এদের পুনর্বাসনের জন্য জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে ৷’’
দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেড ভলান্টিয়াররাও ৷ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংগঠনের সদস্য মাসরেকুল আলম বলেন, “জমি নিয়ে কোনও সমস্যা হলে বাংলার পুলিশই তো বিষয়টি দেখবে ! কারণ, এই জমি তো বাংলার ৷ এখানে বিহার পুলিশ কেন আসবে ? ঘটনাটি শুনে আমরা এখানে এসেছি । এসে যা শুনলাম, এই বাড়িগুলির পিছনের জমি এলাকার তৃণমূল নেতার ৷ ওই জমির পজিশন ঠিক করার জন্যই, সেই নেতা বিহার পুলিশের মাধ্যমে এই উচ্ছেদ চালিয়েছেন ৷ এরা 50 বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছেন ৷ এতদিন জমি নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠল না কেন ?’’
আরও পড়ুন : Quarrel Over Pig Rearing Project : বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন পুরাতন মালদার বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী
এই ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূলের ভূমিকাকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক, কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম ৷ তিনি বলেন, “বিহার পুলিশ কীভাবে বাংলার জমি থেকে কাউকে উচ্ছেদ করতে পারে ? আমার প্রশ্ন, এ নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও, বিধায়ক কিংবা সাংসদ কোনও সদর্থক ভূমিকা নিয়েছেন ? এখন সব নাম কিনতে এলাকায় যাচ্ছে ৷ ঘটনার দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে ৷ তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না ৷ শুধু নাটক করলে হবে না ৷ পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷ এই বেআইনি কাজ করার জন্য বিহার পুলিশের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে ৷’’