মালদা, 2 ফেব্রুয়ারি: গণবিবাহের আসরকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পুরাতন মালদার আটমাইল এলাকায় ৷ ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে আয়োজকদের ৷ ঘটনাস্থানে গিয়ে পাথরের আঘাতে জখম হন এক পুলিশকর্মী ৷
আজ বিশ্বহিন্দু পরিষদের ধর্মপ্রসার বিভাগ মালদা জেলা শাখার তরফে পুরানো মালদার আটমাইল ধূমাদিঘি হাটে ও খেড়িবাড়ি গ্রামে গণবিবাহের আয়োজন করা হয় ৷ ধূমাদিঘি হাটে প্রায় 133 যুগল গণবিবাহে অংশ নেয় ৷ সেখানে যান পুরানো মালদার BDO ইরফান হাবিব ৷ কিছুক্ষণ থেকে সেখান থেকে চলে যান তিনি ৷ রীতি অনুযায়ী সকালে শোভাযাত্রা সহকারে ঘটে জল ভরা হয় ৷ এরপর গণবিবাহের কাজ শুরু হয়৷ কিন্তু, অনুষ্ঠান শুরুর পর আটমাইল স্ট্যান্ডে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির নেতৃত্বে সশস্ত্র আদিবাসীরা জমায়েত হতে থাকে৷ সেই খবর পেয়ে পুলিশ ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ৷ ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির সদস্যদের অভিযোগ, আদিবাসীদের জোর করে বিয়ে দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে৷ সেই অভিযোগ পেয়েই পুলিশ গণবিবাহ আয়োজকদের ডেকে পাঠায় ৷ আয়োজকরা বোঝানোর চেষ্টা করে, আদিবাসী রীতি মেনেই বিয়ে হচ্ছে ৷ তারা শুধু আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে ৷ যদিও আয়োজকদের কোনও কথা শুনতে রাজি হয়নি আদিবাসীরা ৷ প্রতিবাদে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা । অনুষ্ঠানস্থলেও ঢুকে পড়ে কয়েকজন ৷ আয়োজকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে পাত্রপাত্রী সহ অন্যরা ৷ মণ্ডপেও ভাঙচুর চালানো হয় ৷
এরপর গণবিবাহের উদ্যোক্তারা ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির সদস্যদের তাড়া করে ৷ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে ৷ পাথরের আঘাতে গুরুতর জখম হন এক পুলিশকর্মী৷ পরে মালদা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷
ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির রাজ্য সহ সভাপতি মোহন হাঁসদা বলেন, “আজ পুরাতন মালদার আট মাইল হাটে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গণবিবাহের আয়োজন করে ৷ সেখানে আদিবাসীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল ৷ হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জানিয়েছে হিন্দু রীতি অনুযায়ী এই বিয়ে হবে ৷ এর থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আদিবাসীদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে ৷ যাঁরা এই গণবিবাহের আসরে বিয়ে করবেন তাঁদের 12 হাজার টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ৷ অর্থের লোভ দেখিয়ে আদিবাসীদের গণবিবাহের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করার ছক কষেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ৷ হিন্দু পুরোহিত দিয়ে রীতি অনুযায়ী বিয়ে করানো হচ্ছে ৷ সেই কারণেই আদিবাসী সমাজ থেকে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে বিয়ে বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছি ৷ আদিবাসী সমাজের প্রতি যদি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মায়া থাকে তবে গ্রামে গিয়ে মোড়লের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে বিবাহ দিক ৷ কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কার্ড ছাপিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়কে অপমান করেছে ৷”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম প্রসার বিভাগের জেলা সভাপতি মলয় মুখার্জি বলেন, “আদিবাসীদের আমরা বনবাসী ভাই বলে থাকি৷ আদিবাসীরা হিন্দু সমাজের মূল অঙ্গ ৷ আর্থিক কারণে কিংবা সামাজিক কিছু বাধ্যবাধকতায় সামাজিক বিয়ের অনুষ্ঠান আদিবাসীরা করে উঠতে পারে না ৷ হিন্দু সমাজের প্রতি কর্তব্য অনুযায়ী আমরা এই আদিবাসী ভাই-বোনদের বিয়ের আয়োজন করেছি ৷ সারণা ধর্মকে এড়িয়ে গিয়ে আদিবাসীদের কার্যত হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার যে অভিযোগ আদিবাসীরা এনেছে তা ভিত্তিহীন ৷”