মালদা, 24 মে : মালদা থেকে কলকাতার দূরত্বটা কম নয়, প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের পথ । কিন্তু এই পথই এবার সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করতে চলেছে মালদার আট বছর বয়সি সায়ন্তিকা দাস (8 year old Malda girl cycles her way to meet CM Mamata Banerjee)।
ছোট্ট মেয়েটার ইচ্ছে, সে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে । কিন্তু তার জন্য তাকে আসতে হবে মালদা থেকে কলকাতায় ৷ সায়ন্তিকার ইচ্ছে মমতা দিদির সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি থেকে কলকাতা যাবে সে তাও আবার সাইকেল চালিয়ে । মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবে মালদার আমসত্ত্ব আর গোলাপজাম । নিজের ইচ্ছের কথা লিখিতভাবে সে জানিয়েছে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে ।
কিন্তু সে সাইকেল চালাতে পারে না ৷ তাই এখন সাইকেল চালানোর অনুশীলনই নিচ্ছে ছোট্ট সায়ন্তিকা । কারণ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে গেলে তাকে চারদিন এক নাগাড়ে সাইকেল চালাতে হবে । পাড়ি দিতে হবে মালদা থেকে কলকাতা ৷ আগামী বৃহস্পতিবারই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে সায়ন্তিকা ।
মালদা শহরের মনস্কামনা পল্লিতে বাড়ি তাদের । স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে । বাবা প্রদীপ দাস পেশায় গাড়িচালক । মা উমা দাস সংসার সামলান । সায়ন্তিকার এক দিদি কলেজের ও আরেক দিদি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । আর্থিক অনটনে একসময় দুই দিদির পড়াশোনাই প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল । সেই সময় তারা পায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্প । ওই প্রকল্প পেয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সায়ন্তিকার দুই দিদি । সেকথা ভোলেনি ছোট্ট সায়ন্তিকা । তখন থেকেই সে মমতা দিদির ফ্যান ।
সায়ন্তিকা জানায়, "মমতা দিদি মেয়েদের শিক্ষার জন্য এত ব্যবস্থা করেছেন । আমাদের বিনা পয়সায় শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন । আমাদের সাইকেল দিচ্ছেন, পোশাক দিচ্ছেন, জুতোও দিচ্ছেন । তাই তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে আমি সাইকেল চালিয়ে তাঁর কাছে যাচ্ছি । তাঁকে আমসত্ত্ব আর গোলাপজাম দেব। আমি কখনও তাঁকে সামনাসামনি দেখিনি । তবে টিভিতে দেখেছি । সাইকেল চালিয়ে তাঁর কাছে যেতে আমার চারদিন লাগবে ।"
সায়ন্তিকার মা উমা দাস বলেন, "আমি ছোট থেকে অভাবি সংসারে মানুষ হয়েছি । অর্থের অভাবে আমার বেশি দূর পড়াশোনা হয়নি । অল্প বয়সেই আমাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় । আমার তিন মেয়ে । বড় দুই মেয়ে যখন পড়াশোনা করছিল, তখনও আমাদের চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাতে হচ্ছিল । তাদের কতদূর পড়াতে পারব তা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের শিক্ষার জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেন ।
কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্প চালু হয় । এসব প্রকল্পের সুবিধে পেয়ে আমার বড় দুই মেয়ের একজন কলেজে পড়ছে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । ছোট থেকেই সেসব দেখেছে আমার ছোট মেয়ে । তাই সে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জেদ ধরেছে । সায়ন্তিকা সাইকেল চালিয়ে কলকাতা যেতে চায় । প্রথমে ভয় হচ্ছিল । অত ছোট মেয়ে সাইকেল চালিয়ে কলকাতা যেতে পারবে কি না । তবে আমরা সঙ্গে থাকব । আরও অনেকে থাকবে । খুব ইচ্ছে ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে মালদার আম উপহার দেওয়া । কিন্তু রাস্তায় চারদিনে আম নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তাই আমসত্ত্ব-সহ আরও কিছু উপহার তাঁর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে ।"
আরও পড়ুন : Chhana Traders of Malda : মূল্যবৃদ্ধির যুগে কমছে ছানার দাম, সংকটে মালদার ব্যবসায়ীরা
মনস্কামনা পল্লি ইংরেজবাজার পৌরসভার 27 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূজা দাস বলেন, "আট বছরের একটি মেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য এই চিন্তাভাবনা করেছে বা উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য আমরা গর্বিত ৷ শুধু ওই মেয়েটি নয়, ওর দুই দিদিও মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে । তা দেখেই ছোট্ট মেয়েটি মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয় । এলাকার কাউন্সিলর হিসাবে আমি সবসময় ওই মেয়ে এবং তার পরিবারের পাশে রয়েছি ।"