মালদা, 25 অগস্ট : প্রাথমিকে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে একাধিকবার মালদা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ বিক্ষোভ আন্দোলনও করেছিলেন ৷ কিন্তু, তাতে কোনও কাজ হয়নি ৷ এখনও তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও আশ্বাস দিতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ । তাই আজ জেলাশাসকের দ্বারস্থ হলেন মালদা জেলার 2014 সালের প্রাথমিকে টেট উত্তীর্ণ প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা ৷ আজ তাঁরা রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দেন । প্রাথমিকে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ ও মিছিল থেকে খেলা হবে স্লোগানও শোনা যায় ।
2014 সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য শিক্ষা দফতর । সেবছর প্রায় 20 হাজার চাকরিপ্রার্থী টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । কিন্তু, নানা কারণে তাঁদের নিয়োগ আটকে ছিল । বিধানসভা ভোটের মুখে, গত 11 নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, 2014 সালের প্রায় 20 হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে 16 হাজার 500 জনকে 2021 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নিয়োগ করা হবে । বাকিদেরও ধাপে ধাপে নিয়োগ করবে রাজ্য শিক্ষা দফতর । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা ।
আরও পড়ুন : Bratya Basu-Kunal Ghosh : বিষ খাওয়া 3 শিক্ষিকা সঙ্কটজনক, সরকারি সুবিধের খতিয়ান দিলেন ব্রাত্য-কুণাল
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ঘোষণা অনুযায়ী ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হয় । তার ফলও ঘোষিত হয় । কিন্তু প্রায় আট মাস কেটে গেলেও বেশ কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী এখনও নট ইনক্লুডেড তালিকায় থেকে গিয়েছেন । তাঁদের এখনও চাকরি হয়নি । নিজেদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে মালদার চাকরিপ্রার্থীরা এর আগে বেশ কয়েকবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিকে আবেদন জানিয়েছিল । তাঁর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয় । কিন্তু, শুধুমাত্র আশ্বাস ছাড়া আর কিছু জোটেনি । এরই মধ্যে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দেন, 2014 সালের টেট উত্তীর্ণ প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ শেষ হয়ে গিয়েছে । এতেই মাথায় বাজ পড়ে সবার । আজ মালদা জেলার চাকরিপ্রার্থীরা এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Anubrata Mondal : বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে বাড়িতে ঘেরাও করবে অধ্যাপকরা, পাশে তৃণমূল; জানালেন অনুব্রত
চাকরিপ্রার্থীদের তরফে তারকনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা তাদের অবস্থান ঠিকভাবে বুঝতেই পারছি না । নিয়োগের দাবিতে আমরা অনেকবার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতিকে ডেপুটেশন দিয়েছি । কাজ হয়নি । কিছুদিন আগে পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পলাশিপাড়ার একটি রাজনৈতিক পেজে একটি এডিটিং ভিডিও আপলোড করে বার্তা দেন, আমাদের নিয়োগ নাকি শেষ হয়ে গিয়েছে । যিনি নিজে আমাদের সরকারি ওয়েবসাইট দেখার কথা বলেন, তিনি নিজেই রাজনৈতিক পেজ থেকে ভুল বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানির চেষ্টা করেছেন । মানিকবাবু কীভাবে ভুল বার্তা দিচ্ছেন, তা আমরা দিদির কাছে পৌঁছে দিতে চাই । তাই আজ আমরা সবাই জেলাশাসকের কাছে এসেছি । তাঁর মাধ্যমেই আমরা দিদির কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই । সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত প্রায় 12 হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে । তাহলে বাকিরা কোথায় গেল ?”
আরও পড়ুন : সরকারি নিয়ম অমান্য করে চলছে খুদেদের স্কুল
জেলাশাসকের দফতরে আসা আরেক চাকরিপ্রার্থী নাজি মুন্নেশা বলেন, “পর্ষদ কীভাবে কাজ করছে জানি না । মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সবাইকেই নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । কিন্তু প্রায় 12 হাজার নিয়োগের পর পর্ষদ বলছে প্রত্যেককে নিয়োগ করা হয়েছে । যদি সবাইকে নিয়োগ করা হয়ে থাকে, তবে আমরা বাকি আট হাজার কারা ? আজ আমরা নিজেদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে খেলা হবে স্লোগান তুলেছি । কোনও রাজনৈতিক ইস্যু বা কাউকে উদ্দেশ্য করে নয় ৷ নিজেদের দাবির সমর্থনে আমরা সেই স্লোগান তুলেছি ।”
গতকাল বিকাশ ভবনে নিজেদের দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিষপান করেছিলেন পাঁচ শিক্ষিকা । তার জেরে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা রাজ্যে । আজ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভে যেন তেমন কিছু না হয়, তার জন্য প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ । তবে তেমন কিছু কাণ্ড ঘটাননি বিক্ষোভকারীরা । এতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পুলিশকর্মীরা ৷