ETV Bharat / city

নাম ভাঁড়িয়ে কুকীর্তি, দক্ষিণ কলকাতায় সারোগেট প্রতারণার পর্দাফাঁস

author img

By

Published : Feb 26, 2020, 3:57 AM IST

মোটা টাকা নিয়ে সারোগেট মা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা । গ্রেপ্তার দক্ষিণ 24 পরগনার মহিলা । তদন্তে নেমে বড়সড় সারোগেট প্রতারণার পর্দাফাঁস করল নিউ আলিপুর থানার পুলিশ ।

surrogacy fraud case
সারোগেট প্রতারণা

কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি : মোটা টাকা নিয়ে সারোগেট মা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । করেছিলেন চুক্তি । গর্ভে স্থাপিত হয় ভ্রূণ । কিছুদিন সব ঠিকঠাক ছিল । তারপর রীতিমতো ভ্যানিশ হয়ে যান । পুলিশের তৎপরতায় 20 ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয় ওই মহিলা । কিন্তু, বহু জিজ্ঞাসাবাদেও ভ্রুণ রহস্যের সমাধান হচ্ছিল না । রীতিমতো নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ । আর তাতেই পর্দা ফাঁস হল বড়সড় প্রতারণার ।

সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন দম্পতি । তাঁরা দু'জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত । দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় থাকেন । বহুদিন ধরেই নিউ আলিপুরের একটি নামী ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সাহায্য নিচ্ছিলেন ওই দম্পতি । অবশেষে শহরের নামী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ঠিক হয়, 'ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন' করার । সেইমতো একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয় । ওই দম্পতির পাশাপাশি চুক্তিতে সই করেন ক্লিনিকের ম্যানেজমেন্ট এবং সারোগেট মাদার হতে চাওয়া কাশ্মীরা মোল্লা । কাশ্মীরা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের দহখণ্ডের বাসিন্দা । মোট 8 লাখ টাকার চুক্তি হয় । 3 লাখ 75 হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই দম্পতির জাইগোট থেকে তৈরি ভ্রুণ গত বছর 7 জুলাই স্থাপন করা হয় কাশ্মীরার শরীরে । তারপর থেকে ওই দম্পতি প্রায় রোজই সারোগেট হাউজ়ে কাশ্মীরার সঙ্গে দেখা করতেন । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু 10 ডিসেম্বর কাউকে কিছু না বলে সারোগেট হাউজ় থেকে পালিয়ে যায় সে । ওই দম্পতি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করেন । কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি । তারপরেই তাঁরা নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ।

তদন্তে নেমে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ কাশ্মীরের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে । দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে তার টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় । কিন্তু, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আর কোনওভাবেই কাশ্মীরার ফোন কাজ করছিল না । এবার শুরু হয় হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের কাজ । কাশ্মীরার নতুন নম্বর জোগাড় করা হয় । সেই সূত্র ধরে 20 ফেব্রুয়ারি SSKM হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরাকে ।

তদন্ত শেষ করার জন্য ভ্রূণের হদিশ পাওয়ার দরকার ছিল তদন্তকারীদের । শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ । কাশ্মীরা জানায়, সারোগেট হোম থেকে সোজা মথুরাপুরের বাড়িতে চলে যায় সে । সেখানে পড়ে গিয়ে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায় । তখন সেই ভ্রুণ সে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয় । বারবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে একই তত্ত্ব আওড়াতে থাকে কাশ্মীরা ।

এরপর আবার নিজেদের মতো করে খোঁজখবর করা শুরু করে পুলিশ । তৈরি করা হয় চারটি টিম । পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সল্টলেক সেক্টর ফাইভে নাম ভাড়িয়ে ঠিকাদারির কাজ করত কাশ্মীরা । সেখানে গিয়ে জানা যায়, 20 জানুয়ারি থেকে কাজ করছিল সে । পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায়, যা হওয়ার হয়েছে 10 ডিসেম্বর থেকে 20 জানুয়ারির মধ্যে । সেই সময়ের মধ্যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ নিতে শুরু করে পুলিশ । তার টাওয়ার লোকেশনে বোঝা যায়, 14 থেকে 17 ডিসেম্বর পর্যন্ত সে মন্দিরবাজার-মথুরাপুর এইসব এলাকাতেই ছিল । 17 ডিসেম্বর রাত থেকে 19 ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার টাউনে তার টাওয়ার লোকেশন ছিল । পুলিশের দু'টি দল ডায়মন্ড হারবারের সমস্ত হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের রেকর্ড খতিয়ে দেখে ।

এরপর পাওয়া যায় রবিউল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির খোঁজ । শওহরের মৃত্যুর পর রবিউল হয়ে উঠেছিল কাশ্মীরার বিশেষ বন্ধু । সেই রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাশ্মীরার মা এবং তার দুই বোনের খোঁজ মেলে । পুলিশ জানতে পারে, মন্দিরবাজার এলাকায় থাকে কাশ্মীরের মা আম্বিয়া বিবি । পুলিশ তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে । কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি । এরপর আম্বিয়া বিবির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ । দেখা যায়, 17 থেকে 19 ডিসেম্বর পর্যন্ত আম্বিয়া বিবিও ছিল ডায়মন্ড হারবারে । আরও একবার ডায়মন্ড হারবারের সব হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে খোঁজ শুরু করে পুলিশ ।

জানা যায়, 17 ডিসেম্বর রাতে আম্বিয়া বিবি ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেছিল জনৈক মিনা হালদারকে । হাসপাতাল কর্মীদের কাশ্মীরার ছবি দেখাতে তাঁরা নিশ্চিত করেন যে, কাশ্মীরা আর মিনা একই মহিলা । ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করে কাশ্মীরা । সবটা জানাজানির পর পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে কাশ্মীরা ।

এখন প্রশ্ন, সারোগেট হাউজ়ে সঠিক সুপারভিশনে থাকার পরেও মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ওই ভ্রুণের মৃত্যু হল কীভাবে? ভূমিষ্ঠ হতে চলা ওই সন্তানকে কি তবে গর্ভেই মেরে ফেলল কাশ্মীরা? উত্তর খুঁজছে পুলিশ ।

কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি : মোটা টাকা নিয়ে সারোগেট মা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । করেছিলেন চুক্তি । গর্ভে স্থাপিত হয় ভ্রূণ । কিছুদিন সব ঠিকঠাক ছিল । তারপর রীতিমতো ভ্যানিশ হয়ে যান । পুলিশের তৎপরতায় 20 ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয় ওই মহিলা । কিন্তু, বহু জিজ্ঞাসাবাদেও ভ্রুণ রহস্যের সমাধান হচ্ছিল না । রীতিমতো নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ । আর তাতেই পর্দা ফাঁস হল বড়সড় প্রতারণার ।

সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন দম্পতি । তাঁরা দু'জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত । দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় থাকেন । বহুদিন ধরেই নিউ আলিপুরের একটি নামী ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সাহায্য নিচ্ছিলেন ওই দম্পতি । অবশেষে শহরের নামী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ঠিক হয়, 'ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন' করার । সেইমতো একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয় । ওই দম্পতির পাশাপাশি চুক্তিতে সই করেন ক্লিনিকের ম্যানেজমেন্ট এবং সারোগেট মাদার হতে চাওয়া কাশ্মীরা মোল্লা । কাশ্মীরা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের দহখণ্ডের বাসিন্দা । মোট 8 লাখ টাকার চুক্তি হয় । 3 লাখ 75 হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই দম্পতির জাইগোট থেকে তৈরি ভ্রুণ গত বছর 7 জুলাই স্থাপন করা হয় কাশ্মীরার শরীরে । তারপর থেকে ওই দম্পতি প্রায় রোজই সারোগেট হাউজ়ে কাশ্মীরার সঙ্গে দেখা করতেন । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু 10 ডিসেম্বর কাউকে কিছু না বলে সারোগেট হাউজ় থেকে পালিয়ে যায় সে । ওই দম্পতি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করেন । কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি । তারপরেই তাঁরা নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ।

তদন্তে নেমে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ কাশ্মীরের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে । দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে তার টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় । কিন্তু, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আর কোনওভাবেই কাশ্মীরার ফোন কাজ করছিল না । এবার শুরু হয় হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের কাজ । কাশ্মীরার নতুন নম্বর জোগাড় করা হয় । সেই সূত্র ধরে 20 ফেব্রুয়ারি SSKM হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরাকে ।

তদন্ত শেষ করার জন্য ভ্রূণের হদিশ পাওয়ার দরকার ছিল তদন্তকারীদের । শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ । কাশ্মীরা জানায়, সারোগেট হোম থেকে সোজা মথুরাপুরের বাড়িতে চলে যায় সে । সেখানে পড়ে গিয়ে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায় । তখন সেই ভ্রুণ সে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয় । বারবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে একই তত্ত্ব আওড়াতে থাকে কাশ্মীরা ।

এরপর আবার নিজেদের মতো করে খোঁজখবর করা শুরু করে পুলিশ । তৈরি করা হয় চারটি টিম । পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সল্টলেক সেক্টর ফাইভে নাম ভাড়িয়ে ঠিকাদারির কাজ করত কাশ্মীরা । সেখানে গিয়ে জানা যায়, 20 জানুয়ারি থেকে কাজ করছিল সে । পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায়, যা হওয়ার হয়েছে 10 ডিসেম্বর থেকে 20 জানুয়ারির মধ্যে । সেই সময়ের মধ্যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ নিতে শুরু করে পুলিশ । তার টাওয়ার লোকেশনে বোঝা যায়, 14 থেকে 17 ডিসেম্বর পর্যন্ত সে মন্দিরবাজার-মথুরাপুর এইসব এলাকাতেই ছিল । 17 ডিসেম্বর রাত থেকে 19 ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার টাউনে তার টাওয়ার লোকেশন ছিল । পুলিশের দু'টি দল ডায়মন্ড হারবারের সমস্ত হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের রেকর্ড খতিয়ে দেখে ।

এরপর পাওয়া যায় রবিউল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির খোঁজ । শওহরের মৃত্যুর পর রবিউল হয়ে উঠেছিল কাশ্মীরার বিশেষ বন্ধু । সেই রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাশ্মীরার মা এবং তার দুই বোনের খোঁজ মেলে । পুলিশ জানতে পারে, মন্দিরবাজার এলাকায় থাকে কাশ্মীরের মা আম্বিয়া বিবি । পুলিশ তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে । কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি । এরপর আম্বিয়া বিবির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ । দেখা যায়, 17 থেকে 19 ডিসেম্বর পর্যন্ত আম্বিয়া বিবিও ছিল ডায়মন্ড হারবারে । আরও একবার ডায়মন্ড হারবারের সব হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে খোঁজ শুরু করে পুলিশ ।

জানা যায়, 17 ডিসেম্বর রাতে আম্বিয়া বিবি ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেছিল জনৈক মিনা হালদারকে । হাসপাতাল কর্মীদের কাশ্মীরার ছবি দেখাতে তাঁরা নিশ্চিত করেন যে, কাশ্মীরা আর মিনা একই মহিলা । ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করে কাশ্মীরা । সবটা জানাজানির পর পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে কাশ্মীরা ।

এখন প্রশ্ন, সারোগেট হাউজ়ে সঠিক সুপারভিশনে থাকার পরেও মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ওই ভ্রুণের মৃত্যু হল কীভাবে? ভূমিষ্ঠ হতে চলা ওই সন্তানকে কি তবে গর্ভেই মেরে ফেলল কাশ্মীরা? উত্তর খুঁজছে পুলিশ ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.