কলকাতা, 1 জুলাই : রাজ্যের স্বার্থে টাটা গোষ্ঠীর (Tata Group) সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal Government) ৷ টাটার সহযোগিতায় রাজ্যের দু’টি সরকারি হাসপাতালে গড়ে উঠবে ক্যানসারের চিকিৎসার পরিকাঠামো ৷ বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷
আর তার পরই রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন ৷ কারণ, টাটা গোষ্ঠীর নাম সামনে এলে প্রথমেই ভেসে ওঠে হুগলির সিঙ্গুরে টাটার নির্মীয়মাণ ন্যানো কারখানার (Tata Nano Factory) কথা ৷ যে কারখানা রাজ্যের বিনিয়োগের মানচিত্র একেবারে বদলে দেবে বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা ৷ কিন্তু সিঙ্গুরে কৃষিজমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন (Singur Protest) এবং তার পর স্বয়ং রতন টাটার (Ratan Tata) এই রাজ্য থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা সেই স্বপ্ন অকালেই ভেঙে দিয়েছিল ৷
আরও পড়ুন : Post Poll Violence : রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট
নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে সিঙ্গুরের সেই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর আন্দোলনে কারখানা তো গড়ে উঠতে পারেইনি ৷ উপরন্তু তিনি ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক লাভ পেয়েছিল ৷ ওই আন্দোলন কার্যত রাজ্যবাসীর চক্ষুশূল করে তুলেছিল সিপিএম (CPIM) তথা বামফ্রন্টকে (Left Front) ৷ ফলস্বরূপ 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে লাল-জমানার পতন আর মুখ্যমন্ত্রিত্বে অভিষেক মমতার ৷ তার পর কেটে গিয়েছে 10 বছর ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, সেদিন যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভুল ছিল, তা আদালতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ৷ তাই আন্দোলনের তীব্রতা কেন এত বেশি ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না ৷ কিন্তু এর একটা বিরূপ প্রভাবও পড়েছিল ৷ গত 10 বছরে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক বিনিয়োগ এসেছে ৷ কিন্তু ন্যানো কারখানার মতো ওই মাপের বড় বিনিয়োগ হয়নি ৷
আরও পড়ুন : অস্বস্তি বাড়াতে বিধানসভায় শুভেন্দুর পাশের সারিতেই কি মুকুল, তুঙ্গে জল্পনা
যা নিয়ে বিরোধীরা প্রায় বিদ্ধ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে ৷ তাঁর সরকারের ভুল শিল্পনীতির জন্যই এই রাজ্যে বিনিয়োগ আসে না বলে অভিযোগ করেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা ৷ সিপিআইএমের অনেক নেতাও আড়ালে আক্ষেপ করেন যে টাটার কারখানা হলে তাঁদের দলের রাজনৈতিক পরিণতি এতটা করুণ হত না ৷ তাই তাঁরা বরাবর টাটাকে তাড়ানোর দায় মমতার উপর চাপিয়ে এসেছেন ৷
আর সেই কারণেই রাজ্যবাসীর কল্যাণে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলানো মমতার ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে তখনও তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের বেকারদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে কারখানার অনুমতি দিয়েছিলেন ৷ তাতে কি রাজ্যের ভাল হত না ? তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই টাটা বিরোধী ছিলেন না । সিঙ্গুরে এতগুলো মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত ছিল । তাই তিনি বিরোধিতা করেছিলেন জোর করে জমি অধিগ্রহণের । এর অর্থ টাটার বিরোধিতা নয় । বিগত সময়ে টাটার লগ্নিও এসেছে বাংলায় । কাজেই এটা কোনও নতুন বিষয় নয় ।’’
আরও পড়ুন : ক্যানসার চিকিৎসায় টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথভাবে দু’টি হাসপাতাল রাজ্যে, ঘোষণা মমতার
অন্যদিকে কোচবিহারের বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী মনে করছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সবই সম্ভব । এদের নির্দিষ্ট নীতি বলে কিছু নেই । কাজেই এই ঘটনা স্বাভাবিক । মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভুলটা সংশোধন করে নিয়েছেন ভাল কথা । তবে আরও আগে ভুল সংশোধন করলে আজ বাংলার এই অবস্থা হত না ৷"
কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের সময় যা হয়েছে, সেটা উচিত ছিল না । রাজ্যে এই মুহূর্তে বিনিয়োগ প্রয়োজন । নয়া পরিকাঠামো প্রয়োজন । তা যদি টাটাদের হাত ধরে আসে ক্ষতি কী ?’’
আরও পড়ুন : ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের
আর সিঙ্গুরের আন্দোলন ও তার পরবর্তী রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে দলটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সিপিআইএমের অন্যতম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্যের কোনও উন্নয়ন কাজে আমরা বিরোধিতা করতে চাই না । মুখ্যমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন তা তো ভালই । আগেই তা তৈরি হোক । গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দিয়ে কী হবে !"