ETV Bharat / city

বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুই কি তৃণমূলকে সরানোর মূল কান্ডারি ?

শুভেন্দু যে তৃণমূল শাসনের অবসানের জন্য একান্তই জরুরি সেটা হাড়ে-হাড়ে বুঝছেন BJP-র রাজ্য নেতৃত্ব । তাই শুভেন্দু নিজে কিছু না বললেও দু-হাত বাড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে আছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়া থেকে দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা ।

Shubhendu
Shubhendu
author img

By

Published : Nov 28, 2020, 7:38 PM IST

Updated : Nov 28, 2020, 7:56 PM IST

কলকাতা, 28 নভেম্বর : তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর পাকাপাকি বিচ্ছেদ শুধুমাত্র এখন সময়ের অপেক্ষা । দুটি প্রশ্ন এখন বাংলার রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মাথার উপর থেকে সরে গেলে কি তিনি বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটভূমিকা থেকে ? নাকি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুই হয়ে উঠবেন তৃণমূলের ক্ষমতা থেকে অপসারণের মূল কান্ডারি ।

নিছক অঙ্ক কিন্তু বলে যে দ্বিতীয় সম্ভাবনার পাল্লা ভারি ।

তিন পার্শ্ববর্তী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের মধ্যে শেষ দুটি ইতিমধ্যেই তৃণমূলের হাতছাড়া 2019-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে । পূর্ব মেদিনীপুরে গড় 2019-এ অটুট ছিল মূলত শুভেন্দু অধিকারী বা বলা ভালো অধিকারী পরিবারের দাপটে । শুভেন্দুর বাবা এবং কাঁথি লোকসভার সদস্য শিশির অধিকারী এই মুহূর্তে লোকসভায় তৃণমূলের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্য । শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভার নির্বাচিত সদস্য । আর এক ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি পৌরনিগমের চেয়ারম্যান ।

আর কথিত আছে, আজকাল অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক অভিমুখ হয় শুভেন্দু অধিকারী যেদিকে যায় সেদিকেই । সুতরাং শুভেন্দু-প্রস্থানের পর যদি সেই একই পথে চলেন পিতা আর দুই ভাই, তাহলে পূর্ব মেদিনীপুরের 16টি আসনের মধ্যে বেশিরভাই যে তৃণমূলের হাতছাড়া হতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ এই জেলার মানুষের এক বিরাট অংশের উপর অধিকারী পরিবারের প্রভাব আজও অটুট ।

তার চেয়েও বড় কথা যে নন্দীগ্রাম, যেখানকার আন্দোলনের মাধ্যমেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 2011-তে ক্ষমতায় আসা, সেই নন্দীগ্রামেই তৃণমূল ভিত নড়ে যাবে, যেটা সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই তৃণমূলের পক্ষে হবে এক ভয়ানক অশনি সংকেত । এখানে মনে রাখতে হবে, যে হুগলি জেলার সিঙ্গুর, যেখানকার আন্দোলনও একইরকম ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিল ক্ষমতায় আসীন হতে, সেই সিঙ্গুর কিন্তু ইতিমধ্যেই তৃণমূলের হাতছাড়া 2019-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে ।

পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও আরও অন্তত পাঁচটি জেলা যেমন বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব এবং সাধারণ কর্মীদের উপর শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব অসীম । গত কয়েক মাস ধরেই এই জেলাগুলি ছেয়ে গেছে "আমরা দাদার অনুগামী" এই পোস্টারে । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে অন্তত 40 থেকে 45টি বিধানসভা আসনে শুভেন্দুর প্রভাব তৃণমূলের বাড়া ভাতে ছাই ফেলবার জন্য যথেষ্ট ।

মুখে সরাসরি স্বীকার না করলেও, শুভেন্দুর প্রস্থান যে দলের পক্ষে এক অশনি সংকেত তা আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই । তৃণমূলের দমদম লোকসভার সদস্য, সৌগত রায় বলেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও যেহেতু এখনো শুভেন্দু দলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন নি, তাই উনি আশা করেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি দলের সঙ্গ ছাড়বেন না ।

শুভেন্দুর প্রভাব যে দলের পক্ষে যে একান্তই গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝেছেন, দলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও । তাই তাঁর নির্দেশই প্রশান্ত কিশোর নিজে গিয়েছিলেন শুভেন্দুর বাড়িতে । শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা না হলেও পিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আলোচনা করেন শিশির অধিকারীর সঙ্গে । জল গলে নি। জানা যায়, এক অনুগামীর মাধ্যমে শুভেন্দু দলে থাকবার জন্য এমন কিছু শর্ত আরোপ করেছিলেন যেটা মেনে নেওয়া একরকম অসম্ভব ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে ।

অপরদিকে, শুভেন্দু যে তৃণমূল শাসনের অবসানের জন্য একান্তই জরুরি সেটা হাড়ে-হাড়ে বুঝছেন BJP-র রাজ্য নেতৃত্ব । তাই শুভেন্দু নিজে কিছু না বললেও দু-হাত বাড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে আছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা । এখন আগামীদিনে শুভেন্দুর পদক্ষেপ কী হয় সেই দিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল ।

কলকাতা, 28 নভেম্বর : তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর পাকাপাকি বিচ্ছেদ শুধুমাত্র এখন সময়ের অপেক্ষা । দুটি প্রশ্ন এখন বাংলার রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মাথার উপর থেকে সরে গেলে কি তিনি বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটভূমিকা থেকে ? নাকি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুই হয়ে উঠবেন তৃণমূলের ক্ষমতা থেকে অপসারণের মূল কান্ডারি ।

নিছক অঙ্ক কিন্তু বলে যে দ্বিতীয় সম্ভাবনার পাল্লা ভারি ।

তিন পার্শ্ববর্তী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের মধ্যে শেষ দুটি ইতিমধ্যেই তৃণমূলের হাতছাড়া 2019-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে । পূর্ব মেদিনীপুরে গড় 2019-এ অটুট ছিল মূলত শুভেন্দু অধিকারী বা বলা ভালো অধিকারী পরিবারের দাপটে । শুভেন্দুর বাবা এবং কাঁথি লোকসভার সদস্য শিশির অধিকারী এই মুহূর্তে লোকসভায় তৃণমূলের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্য । শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভার নির্বাচিত সদস্য । আর এক ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি পৌরনিগমের চেয়ারম্যান ।

আর কথিত আছে, আজকাল অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক অভিমুখ হয় শুভেন্দু অধিকারী যেদিকে যায় সেদিকেই । সুতরাং শুভেন্দু-প্রস্থানের পর যদি সেই একই পথে চলেন পিতা আর দুই ভাই, তাহলে পূর্ব মেদিনীপুরের 16টি আসনের মধ্যে বেশিরভাই যে তৃণমূলের হাতছাড়া হতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ এই জেলার মানুষের এক বিরাট অংশের উপর অধিকারী পরিবারের প্রভাব আজও অটুট ।

তার চেয়েও বড় কথা যে নন্দীগ্রাম, যেখানকার আন্দোলনের মাধ্যমেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 2011-তে ক্ষমতায় আসা, সেই নন্দীগ্রামেই তৃণমূল ভিত নড়ে যাবে, যেটা সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই তৃণমূলের পক্ষে হবে এক ভয়ানক অশনি সংকেত । এখানে মনে রাখতে হবে, যে হুগলি জেলার সিঙ্গুর, যেখানকার আন্দোলনও একইরকম ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিল ক্ষমতায় আসীন হতে, সেই সিঙ্গুর কিন্তু ইতিমধ্যেই তৃণমূলের হাতছাড়া 2019-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে ।

পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও আরও অন্তত পাঁচটি জেলা যেমন বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব এবং সাধারণ কর্মীদের উপর শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব অসীম । গত কয়েক মাস ধরেই এই জেলাগুলি ছেয়ে গেছে "আমরা দাদার অনুগামী" এই পোস্টারে । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে অন্তত 40 থেকে 45টি বিধানসভা আসনে শুভেন্দুর প্রভাব তৃণমূলের বাড়া ভাতে ছাই ফেলবার জন্য যথেষ্ট ।

মুখে সরাসরি স্বীকার না করলেও, শুভেন্দুর প্রস্থান যে দলের পক্ষে এক অশনি সংকেত তা আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই । তৃণমূলের দমদম লোকসভার সদস্য, সৌগত রায় বলেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও যেহেতু এখনো শুভেন্দু দলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন নি, তাই উনি আশা করেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি দলের সঙ্গ ছাড়বেন না ।

শুভেন্দুর প্রভাব যে দলের পক্ষে যে একান্তই গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝেছেন, দলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও । তাই তাঁর নির্দেশই প্রশান্ত কিশোর নিজে গিয়েছিলেন শুভেন্দুর বাড়িতে । শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা না হলেও পিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আলোচনা করেন শিশির অধিকারীর সঙ্গে । জল গলে নি। জানা যায়, এক অনুগামীর মাধ্যমে শুভেন্দু দলে থাকবার জন্য এমন কিছু শর্ত আরোপ করেছিলেন যেটা মেনে নেওয়া একরকম অসম্ভব ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে ।

অপরদিকে, শুভেন্দু যে তৃণমূল শাসনের অবসানের জন্য একান্তই জরুরি সেটা হাড়ে-হাড়ে বুঝছেন BJP-র রাজ্য নেতৃত্ব । তাই শুভেন্দু নিজে কিছু না বললেও দু-হাত বাড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে আছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে দিলীপ ঘোষের মতো নেতারা । এখন আগামীদিনে শুভেন্দুর পদক্ষেপ কী হয় সেই দিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল ।

Last Updated : Nov 28, 2020, 7:56 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.