কলকাতা, 30 মে : বিধানসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রবীর ঘোষাল ৷ উত্তরপাড়া থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়ে ভোটে হারার পর তিনি প্রাক্তন দলের দুই শীর্ষ নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন ৷ তার পর সময় যত এগিয়েছে, দলত্যাগীদের তৃণমূলে ফেরার তাগিদ তত বেড়েছে ৷ সোনালি গুহর মতো কেউ কেউ বিজেপিতে যোগদানকে ‘চরম ভুল’ বলে উল্লেখ করে সরাসরি তৃণমূলে ফেরার আর্জি জানিয়েছেন ৷ চিঠি লিখেছেন দীপেন্দু বিশ্বাসও ৷ আবার কেউ কেউ ঠারেঠোরে তৃণমূলের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন ৷ যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ শুভ্রাংশু রায় ৷
গতকাল, শনিবার সন্ধ্যায় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন মুকুল রায়ের পুত্র ৷ সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘জনগণের সমর্থন নিয়ে আসা সরকারের সমালোচনা করার আগে, আত্মসমালোচনা করে বেশি প্রয়োজন ৷’’ তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে দু’বছর বিজেপিতে কাটানোর পর তাঁরও কি মোহভঙ্গ হল ? তিনিও কি এবার তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন ?
যদিও এখনও সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর মেলেনি ৷ তবে একুশের ভোটের আগে যেভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবার পুরনো দলে ফিরতে পারবেন ? এই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ৷
আরও পড়ুন : আত্মসমালোচনা প্রয়োজন, ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট শুভ্রাংশুর
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ যদিও এই দলবদলুদের এখনই গ্রহণ করতে রাজি নন । সৌগত রায় ও কুণাল ঘোষর মতো তৃণমূল মুখপাত্রদের গলায় মূলত সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে । তবে সোনালি গুহ, অমল আচার্য, সরলা মুর্মু, দিব্যেন্দু বিশ্বাসরা তাঁদের মতো করে দলনেত্রীকে খুশি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন । রাজনৈতিক মহলের মতে, তার প্রমাণ গত 25 মে পাওয়া গিয়েছে ৷ সেদিন ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান ৷ সেখানে হাজির হয়েছিলেন সোনালি গুহ ৷
তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি অতীতের ঘটনাবলি ভুলিয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে এই দলত্যাগীদের ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা । কুণাল ঘোষের মতো তৃণমূল নেতারা যারা বিগত দিনে বলছিলেন, এই মুহূর্তে আবার দলত্যাগীদের ফিরিয়ে নিলে যাঁরা সমস্ত প্রলোভন উপেক্ষা করে একুশের নির্বাচনে দলের জন্য জীবনপাত করলেন, তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে । দল কি সেসব উপেক্ষা করেই এঁদের গ্রহণ করবে ? উঠছে এই প্রশ্নও ৷
তৃণমূল সূত্রের খবর, এখনও দলত্যাগীদের বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি । সবচেয়ে বড় কথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না । তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই এই বিষয়গুলি নিয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন । যতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে, মুখ্যমন্ত্রী গোটা বিষয়টি আগামী 5 জুনের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে তুলতে পারেন ।
আরও পড়ুন : রাজনীতিতে অনীহা ? শুভ্রাংশুর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে গুঞ্জন
শাসক দলের ওই সূত্র জানাচ্ছে, দলের মধ্যে থেকে যারা একুশের নির্বাচনে বিজেপিকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । অন্তত এর থেকেই স্পষ্ট তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান । এই অবস্থায় সোনালি গুহ, সরলা মর্মু বা অমল আচার্যের মতো তৃণমূলত্যাগী নেতাদের ফিরে আসা সহজ হবে না ।