কলকাতা, 26 জুন : কেন্দ্র সরকারের নীতি 'এক দেশ এক রেশন কার্ড'। আরও অনেক বিষয়ের মতো এতেও রাজি নয়রাজ্য সরকার। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, হরিয়ানা, রাজস্থানের মত 12 টি রাজ্য ইতিমধ্যেই এক দেশ, এক রেশন কার্ড নীতি গ্রহণ করে কাজশুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এই নীতির ফলে গ্রাহকদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলেধরে, এইনীতিতে পা মেলাতে রাজি হয়নি পশ্চিমবঙ্গ। সেই সূত্রে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীরামবিলাস পাসোয়ান একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকে সমর্থন জানানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজ্যসরকার তার সিদ্ধান্তে অনড়। ওই নীতি গ্রহণ করলে রাজ্যের বহু গ্রাহক বঞ্চিত হবেন।এমন তত্ত্ব তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আরও একবার জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গ ওই প্রকল্পে যোগ দেবে না।একই কথা জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকবিশ্বম্ভর বসু।
জুনমাস থেকেই এক দেশ 'এক রেশনকার্ড' নীতিচালু করতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে লকডাউনের সময় গত 14 মে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলাসীতারামন 'এক দেশএক রেশন' কার্ডচালুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন দেশবাসীকে। অগাস্ট মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা দেশে চালুহয়ে যাবে বলে জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী 2021 সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশেরব্যবস্থা সম্পূর্ণ বদল করে ফেলা হবে। এর ফলে দেশের 23 টি রাজ্যের 67 কোটি মানুষ প্রকৃত হবেন। পাবলিকডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এর 83% এরআওতায় এসে পড়বে। এতে উপকৃত হবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তারা দেশের যেকোনো প্রান্তথেকে রেশন তুলতে পারবেন। এর আগে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাশওয়ানমুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন, 'ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন কার্ডে'র জন্য আলাদা করে কোনও কার্ড করতে হবেনা। রাজ্যের দায়িত্ব কেবল আধারের সঙ্গে রেশন কার্ডের সংযোগ করা। NIC অর্থাৎ ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারগোটা দেশে এই কাজ করবে। প্রতিটি রেশন দোকানে থাকবে e-passbook মেশিন। সেখানেকার ছোঁয়ালেই বোঝা যাবেকোথা থেকে কত রেশন তুলেছে গ্রাহক। কিন্তু এই গোটা প্রকল্পে নারাজ পশ্চিমবঙ্গসরকার। কারণ জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন মোতাবেক কেবলমাত্র প্রায়োরিটি হাউজহোল্ডেইসস্তায় চাল-গম দানাশস্য পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে মূলত BPL কার্ড হোল্ডারদের জন্য নেওয়া আছেবিশেষ ব্যবস্থা। রাজ্য সরকার BPL তালিকাভুক্ত ছাড়াও রাজ্যের কয়েক লাখ গ্রাহককে দেওয়া হয়দু'টাকাকেজি দরে চালের মত পরিষেবা। তার মধ্যে রয়েছেন জঙ্গলমহলের মানুষজন, সুন্দরবনের অধিবাসী ও সিঙ্গুরেরঅনিচ্ছুক কৃষকরা। কেন্দ্রের নীতি মানলে এই সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হবেন। এই কারণদেখেই কেন্দ্রীয় নীতিতে যেতে চাইছে না রাজ্য সরকার।
কিন্তুরাজ্যের এই যুক্তির খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক। তাদের পালটা দাবিএতে আখেরে সুবিধাই হবে রাজ্যবাসীর। এ রাজ্য থেকে অনেকেই ভিন রাজ্যে কাজের জন্যযান। সেখানেও তারা রেশনের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। যদিও রাজ্যমনে করছে এতে স্টক মেন্টেন করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে। রাজ্যের খাদ্য দপ্তরজানিয়েছে, পরিযায়ীশ্রমিকদের জন্য ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে রেশন ব্যবস্থা। এ রাজ্যে ফিরে আসাপরিযায়ী শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই রেশন পেতে শুরু করেছেন। আবার এরাজ্যে আটকে থাকা ভিনরাজ্যের শ্রমিকরাও সেই রেশন পাচ্ছেন। খাদ্য দপ্তর জেলাশাসককে সঙ্গে কথা বলেস্পেশাল কুপন তৈরি করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা সেই কুপন দেখালেই রেশন দোকান থেকেপাবেন খাদ্য সামগ্রী। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দেওয়া হচ্ছে মাথাপিছু 5 কেজি চাল এবং 1 কেজি গোটা ছোলা।
এপ্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ আমরা সবাইকে রেশন দিচ্ছি। কঠিন এইপরিস্থিতিতে সবাই খেয়ে বাঁচুক। অন্য রাজ্যের মতো আমরা কাউকে জোর করে নিজেদেররাজ্যে ফেরত পাঠাইনি। ভিন রাজ্যের বহু শ্রমিক এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে রয়েছেন।তাদের জন্যও রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট 60 লাখ শ্রমিক এতে উপকৃত হবেন। আসলে কাজকরতে চাইলেই করা যায়। আমাদের রাজ্যের মতো কোনও রাজ্যে সব মানুষকে বিনা পয়সায়রেশন দেওয়া হচ্ছে না। এক দেশ এক রেশন কার্ড চালু করলে কেবলমাত্র প্রায়োরিটিহাউজহোল্ডের মানুষ উপকৃত হবেন। আমরা রাজ্যের সব মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতেচাই। সেই কারণে এ রাজ্যে এক দেশ এক রেশন কার্ড চালু হবে না।"
ওয়েস্টবেঙ্গল রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, “ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এক দেশ এক রেশনকার্ড প্রকল্প চালু সম্ভব নয়। কারণ দেশের মধ্যে একমাত্র রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গেখাদ্যসাথী প্রকল্প চালু রয়েছে। এই প্রকল্পে চার কোটি মানুষ উপকৃত হন। যারা SKSY 1 বা 2 কার্ডের মাধ্যমে রেশন পান তাদেরদায়ভার কেন্দ্র নেয় না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সকলের জন্য খাদ্য, সকলের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।কেন্দ্রের নীতিতে শুধুমাত্র খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা মানুষজন সুবিধাপাবেন। আমাদের রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের আওতায় না আসায় এ রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যেযাওয়া মানুষজন সেই রাজ্যে রেশন পাবেন না। আবার আমাদের রাজ্যে যে সমস্ত ভিনরাজ্যের মানুষ যারা আছেন তারা যদি NFS-এর তালিকাভুক্ত থাকে তবেই রেশন পাবেন।কেন্দ্রের নীতি মানতে হলে স্টক নিয়েও সমস্যা হবে। ধরে নিন হঠাৎ যদি 500 লোক গিয়ে কোনও এক ডিলারের কাছে রেশনদাবি করেন তিনি হঠাৎ সেই স্টক পাবেন কোথা থেকে? এমন অনেক টেকনিক্যাল ত্রুটি আছেকেন্দ্রের প্রকল্পে। এটা একটা মানুষের সামনে ললিপপ ঝোলানো হয়েছে। এর পেছনে রয়েছেশুধুই রাজনীতি।"