ETV Bharat / city

আগাছা লাগিয়ে ফলন বৃদ্ধি সম্ভব, গবেষণায় দিশা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের

অল্প জায়গায় কম সংখ্যক আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগিয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট করা সম্ভব । ফুলের রং ও গঠনের উপর গবেষণা করে তাঁরা বের করে এনেছেন গাছের কম্বিনেশন যা সবথেকে বেশি সংখ্যায় এই ধরনের পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে পারে । কৃষিজমিতে, বিশেষত ক্ষুদ্র চাষিরা এই গবেষণার তথ্যের প্রয়োগ করলে বাড়বে ফলন ।

ফলন বাড়াতে আগাছা নিয়ে গবেষণা
author img

By

Published : Sep 18, 2019, 8:01 AM IST

Updated : Sep 18, 2019, 8:08 AM IST

কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : কৃষিজমিতে আগাছা লাগিয়ে ফলন বৃদ্ধি সম্ভব । কিন্তু, ভারতে প্রান্তিক চাষির সংখ্যা বেশি হওয়ায় চাষের জায়গা নষ্ট করে আগাছা লাগানো সম্ভব হয় না চাষিদের পক্ষে । অথচ, এই আগাছা কেটে ফেলায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ কমে যাচ্ছে ৷ অথচ এইসব পতঙ্গ পরাগমিলনের মাধ্যমে ফলন বাড়াতে সহায়তা করে ৷ এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিটের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান উঠে এসেছে । যাতে গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, অল্প জায়গায় কম সংখ্যক আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগিয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট করা সম্ভব । ফুলের রং ও গঠনের উপর গবেষণা করে তাঁরা বের করে এনেছেন গাছের কম্বিনেশন যা সবথেকে বেশি সংখ্যায় এই ধরনের পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে পারে । কৃষিজমিতে, বিশেষত ক্ষুদ্র চাষিরা এই গবেষণার তথ্যের প্রয়োগ করলে বাড়বে ফলন । এই গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই একটি জার্নালে প্রকাশ হয়েছে ৷

এই ধরনের কম্বিনেশন বা কোন ধরনের গাছ পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে তা নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলিতে তালিকা থাকলেও ভারত বা ট্রপিকাল দেশগুলিতে এই ধরনের কোনও তালিকা নেই । সেই তালিকা তৈরির চেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । এর জন্যই তাঁরা এই গবেষণা করেছেন বলে জানালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজ়ের অধ্যাপক পার্থিব বসু ।

ecology
চলছে গবেষণার কাজ

এই গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, "সারা পৃথিবীতে পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে যাওয়াতে উদ্বেগ বেড়েছে এবং বাড়ছে । এই ধরনের পতঙ্গের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সাংঘাতিক প্রভাব পড়ছে ৷ এবং আরও পড়বে আমাদের খাদ্য উৎপাদনের উপরে । কারণ, পৃথিবীর প্রায় 80 শতাংশ ফসল উৎপাদন নির্ভর করে এই পরাগমিলন এবং পরাগমিলনকারী পতঙ্গের উপর । তারাই পরাগ আদান প্রদান করে থাকে । আমরা দেখছি, এখন আমাদের দেশেও এই পরাগমিলনের সংকট রয়েছে । এই মুহূর্তে আমরা সেই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । আমাদের বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে এবং ভারতবর্ষের আরও দুই একটি জায়গায় যে গবেষক বন্ধুরা কাজ করছেন তাঁদের গবেষণাতেও এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ।"

এই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিটে । পরাগমিলনের সমস্যা নিয়ে পার্থিব বসু বলেন, "সমস্যাটা তো রয়েছে বুঝতে পারছি । এবার এর থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় দরকার । কী করে এই পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাই নিয়ে গবেষণা ৷ আমরা আমাদের গবেষণায় আগেও দেখিয়েছি, কীটনাশকের সাংঘাতিক কুপ্রভাব পড়ছে এদের উপরে । এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে এই কীটনাশক । এর পাশাপাশি আরেকটা বিষয় রয়েছে । সেটা হল এদের উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করা । দীর্ঘদিন ধরে আমাদের যে পদ্ধতিতে চাষের নিবিড়িকরণ হয়ে এসেছে, নিবিড় কৃষি ব্যবস্থা, তাতে কৃষিক্ষেত্র থেকে এদের বাসস্থান উধাও হয়ে গেছে । অ-ফসল জাতীয় গাছপালাকে অনেক সময় আগাছা বলে কেটে দেওয়া হয়, ছোটোখাটো ঝোপঝাড়, বন-জঙ্গল এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে । এগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে এদের বাসস্থান । ফলে এই বাসস্থানগুলো ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে ।"

ভিডিয়োয় শুনুন অধ্যাপকের বক্তব্য

কৃষি জমিতে আগাছা রেখে পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান তৈরির কথা ভাবলেও, যেখানে ভারতবর্ষে অধিকাংশই ক্ষুদ্র কৃষক, সেখানে এই আগাছা গাছ লাগানোর জন্য তাঁরা কতটা জায়গা দিতে রাজি হবেন বা দিতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । সেই কথা মাথায় রেখেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান নিয়ে গবেষণা করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । পার্থিব বসু বলেন, "পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পশ্চিমের দেশের তুলনায় আমাদের একটু সীমাবদ্ধতা আছে । পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই তারা প্রচুর ব্যবস্থা নিয়েছে । কৃষকরা চাষের জমি ছেড়ে দিয়ে পর্যন্ত ফুলের গাছ লাগাচ্ছে এই পরাগ মিলনকারী পতঙ্গদের ডেকে আনার জন্য ৷ তারা মোটামুটি একটি প্রজাতির তালিকা তৈরি করেছে যে, কোন ধরনের ফুলের গাছ লাগালে পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে ওই চাষের ক্ষেতে আসবে । আমাদের দেশে যে সমস্ত ছোটোখাটো চাষি আছেন তাঁরা তো চাষের জমি নষ্ট করে ওই গাছ লাগাবেন না ৷ যাদের বড় বড় জমি তাঁরা খানিকটা ছেড়ে রাখতে পারেন এই সমস্ত ফুল গাছ লাগানোর জন্য । এমন যদি করা যায় যে, চাষের বাঁধ বা আলের উপরে যদি এই সমস্ত গাছপালা লাগানো যায় । সেক্ষেত্রে আমাদের গাছ লাগানোর জায়গাটা খুবই অল্প । তাই আমাদের এমন প্রজাতির গাছ বেছে আনতে হবে, যে প্রজাতির গাছ লাগালে এই সমস্ত পতঙ্গরা প্রবল সংখ্যায় আকৃষ্ট হয়ে ওই চাষের জমিতে আসবে । কিন্তু, আমাদের দেশে এমন কোনও তালিকা নেই । আমরা কাজটা শুরু করি এই ধরনের একটি তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে । এই কাজটা আমরা ওড়িশাতে করেছি । আরও কাজ চলছে ।"

ecology
গবেষণার কাজে ওড়িশায়

কী ভাবে কম জমিতে আগাছা বা দেশি ফুলগাছ লাগিয়ে সবথেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গকে চাষের জমিতে আকৃষ্ট করা সম্ভব? পার্থিব বসু বলেন, "আমরা বিভিন্ন রকমের গাছ, বিভিন্ন বিন্যাসের গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছি ৷ দেখেছি কোন গাছের সঙ্গে কোন গাছ রাখলে সবথেকে বেশি মৌমাছি বা অন্যান্য পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে আসে ।" প্রাথমিকভাবে ফুলের রং ও বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে দেখা হয়েছে যে কোন ধরনের আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগালে সব থেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট হয় । এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজ়ের গবেষক সুপ্রতিম লাহা বলেন, "আমাদের গবেষণায় সাম্প্রতিক যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা হল, চাষের জমিতে কী ভাবে আমরা আগাছাকে সংরক্ষণ করতে পারি ৷ এবং খুব কম সংখ্যক আগাছাকে লাগিয়ে সেটার দ্বারা বেশি সংখ্যক মৌমাছিকে কী করে আমরা চাষের জমিতে আনতে পারি ও তার থেকে ফলন বাড়াতে পারি । সেটা দেখার জন্য আমরা প্রধান যে গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম সেগুলো আমাদের দেশীয় গাছ । সেই গাছগুলোকে আমরা সাধারণত আগাছা বলে নষ্ট করে দিই, কেটে দিই । কিন্তু, সেই গাছগুলোর গুরুত্বটা আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে ।"

গবেষণার পদ্ধতি ও তার থেকে উঠে আসা ফলাফল নিয়ে সুপ্রতিম লাহা বলেন, "প্রথমত আমরা গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম রঙের ভিত্তিতে । সেই আগাছাগুলোর যে ফুলের রং তার মধ্যে আমরা পাঁচরকমের রং থেকে দুই রকমের রং বেছে নিয়েছি । হলুদ ও নীল । এই দুটি রঙের ফুলের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই রকমের ফুলের প্রজাতিকে আমরা আবার বেছে নিয়েছি । এক রকম প্রজাতির পুংকেশর ও গর্ভকেশর উন্মুক্তভাবে থাকে, আর এক রকম প্রজাতির ফুল যাদের এই রিপ্রোডাক্টিভ পার্টগুলো লুকোনো থাকে । রং এবং গঠনগত এই যে দুই রকমের বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন কম্বিনেশনের মাধ্যমে আমরা এই পরীক্ষাটা করেছি । এই পরীক্ষাটা আমরা ওড়িশার একটা মাঠের মধ্যে করেছি । সেখানে দেখেছি বিভিন্ন রকমের কম্বিনেশনে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছি আসছে । কিন্তু তার মধ্যে যেটা সবথেকে উল্লেখযোগ্য, নীল রঙের ফুলে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে মৌমাছি । সেই নীল ফুলের মধ্যেও যে ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর লুকোনো থাকে সেই ফুলগুলোতে সব থেকে বেশি মৌমাছি আসছে । আমরা এটাও দেখেছি, যে হলুদ ফুল উন্মুক্ত নয় সেই ফুলগুলোতেও বেশি মৌমাছি এসেছে । তবে, নীল ফুলে মৌমাছির সংখ্যা ও প্রকারভেদ বেশি দেখা গেছে ।"

তাঁদের গবেষণা থেকে উঠে আসা এই তথ্য প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে দাবি গবেষকদের । সুপ্রতিম লাহা বলেন, "আমাদের দেশের প্রান্তিক চাষিদের কাছে খুব কম পরিমাণ জায়গা থাকে । সেই অল্প জায়গাতেই এই কিছু বেছে নেওয়া গাছকে লাগিয়ে, দেশি আগাছাকে লাগিয়ে, আমরা ফলন বাড়াতে পারি । আর আমার মনে হয় আমাদের এই যে পরীক্ষামূলক স্টাডিগুলো থেকে যে তথ্য উঠে আসছে, তা সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থাগুলো চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে । এই গাছগুলোর বীজ সরবরাহ করে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা দিয়ে কোনওভাবে সাহায্য করলে আমার মনে হয় চাষিদের উপকারের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করা যাবে । সর্বোপরি, আমাদের যে ফুড সিকিউরিটি সেটাও বাড়বে ।"

কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : কৃষিজমিতে আগাছা লাগিয়ে ফলন বৃদ্ধি সম্ভব । কিন্তু, ভারতে প্রান্তিক চাষির সংখ্যা বেশি হওয়ায় চাষের জায়গা নষ্ট করে আগাছা লাগানো সম্ভব হয় না চাষিদের পক্ষে । অথচ, এই আগাছা কেটে ফেলায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ কমে যাচ্ছে ৷ অথচ এইসব পতঙ্গ পরাগমিলনের মাধ্যমে ফলন বাড়াতে সহায়তা করে ৷ এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিটের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান উঠে এসেছে । যাতে গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, অল্প জায়গায় কম সংখ্যক আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগিয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট করা সম্ভব । ফুলের রং ও গঠনের উপর গবেষণা করে তাঁরা বের করে এনেছেন গাছের কম্বিনেশন যা সবথেকে বেশি সংখ্যায় এই ধরনের পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে পারে । কৃষিজমিতে, বিশেষত ক্ষুদ্র চাষিরা এই গবেষণার তথ্যের প্রয়োগ করলে বাড়বে ফলন । এই গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই একটি জার্নালে প্রকাশ হয়েছে ৷

এই ধরনের কম্বিনেশন বা কোন ধরনের গাছ পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে তা নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলিতে তালিকা থাকলেও ভারত বা ট্রপিকাল দেশগুলিতে এই ধরনের কোনও তালিকা নেই । সেই তালিকা তৈরির চেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । এর জন্যই তাঁরা এই গবেষণা করেছেন বলে জানালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজ়ের অধ্যাপক পার্থিব বসু ।

ecology
চলছে গবেষণার কাজ

এই গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, "সারা পৃথিবীতে পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে যাওয়াতে উদ্বেগ বেড়েছে এবং বাড়ছে । এই ধরনের পতঙ্গের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সাংঘাতিক প্রভাব পড়ছে ৷ এবং আরও পড়বে আমাদের খাদ্য উৎপাদনের উপরে । কারণ, পৃথিবীর প্রায় 80 শতাংশ ফসল উৎপাদন নির্ভর করে এই পরাগমিলন এবং পরাগমিলনকারী পতঙ্গের উপর । তারাই পরাগ আদান প্রদান করে থাকে । আমরা দেখছি, এখন আমাদের দেশেও এই পরাগমিলনের সংকট রয়েছে । এই মুহূর্তে আমরা সেই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । আমাদের বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে এবং ভারতবর্ষের আরও দুই একটি জায়গায় যে গবেষক বন্ধুরা কাজ করছেন তাঁদের গবেষণাতেও এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ।"

এই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিটে । পরাগমিলনের সমস্যা নিয়ে পার্থিব বসু বলেন, "সমস্যাটা তো রয়েছে বুঝতে পারছি । এবার এর থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় দরকার । কী করে এই পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাই নিয়ে গবেষণা ৷ আমরা আমাদের গবেষণায় আগেও দেখিয়েছি, কীটনাশকের সাংঘাতিক কুপ্রভাব পড়ছে এদের উপরে । এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে এই কীটনাশক । এর পাশাপাশি আরেকটা বিষয় রয়েছে । সেটা হল এদের উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করা । দীর্ঘদিন ধরে আমাদের যে পদ্ধতিতে চাষের নিবিড়িকরণ হয়ে এসেছে, নিবিড় কৃষি ব্যবস্থা, তাতে কৃষিক্ষেত্র থেকে এদের বাসস্থান উধাও হয়ে গেছে । অ-ফসল জাতীয় গাছপালাকে অনেক সময় আগাছা বলে কেটে দেওয়া হয়, ছোটোখাটো ঝোপঝাড়, বন-জঙ্গল এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে । এগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে এদের বাসস্থান । ফলে এই বাসস্থানগুলো ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে ।"

ভিডিয়োয় শুনুন অধ্যাপকের বক্তব্য

কৃষি জমিতে আগাছা রেখে পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান তৈরির কথা ভাবলেও, যেখানে ভারতবর্ষে অধিকাংশই ক্ষুদ্র কৃষক, সেখানে এই আগাছা গাছ লাগানোর জন্য তাঁরা কতটা জায়গা দিতে রাজি হবেন বা দিতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । সেই কথা মাথায় রেখেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান নিয়ে গবেষণা করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । পার্থিব বসু বলেন, "পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পশ্চিমের দেশের তুলনায় আমাদের একটু সীমাবদ্ধতা আছে । পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই তারা প্রচুর ব্যবস্থা নিয়েছে । কৃষকরা চাষের জমি ছেড়ে দিয়ে পর্যন্ত ফুলের গাছ লাগাচ্ছে এই পরাগ মিলনকারী পতঙ্গদের ডেকে আনার জন্য ৷ তারা মোটামুটি একটি প্রজাতির তালিকা তৈরি করেছে যে, কোন ধরনের ফুলের গাছ লাগালে পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে ওই চাষের ক্ষেতে আসবে । আমাদের দেশে যে সমস্ত ছোটোখাটো চাষি আছেন তাঁরা তো চাষের জমি নষ্ট করে ওই গাছ লাগাবেন না ৷ যাদের বড় বড় জমি তাঁরা খানিকটা ছেড়ে রাখতে পারেন এই সমস্ত ফুল গাছ লাগানোর জন্য । এমন যদি করা যায় যে, চাষের বাঁধ বা আলের উপরে যদি এই সমস্ত গাছপালা লাগানো যায় । সেক্ষেত্রে আমাদের গাছ লাগানোর জায়গাটা খুবই অল্প । তাই আমাদের এমন প্রজাতির গাছ বেছে আনতে হবে, যে প্রজাতির গাছ লাগালে এই সমস্ত পতঙ্গরা প্রবল সংখ্যায় আকৃষ্ট হয়ে ওই চাষের জমিতে আসবে । কিন্তু, আমাদের দেশে এমন কোনও তালিকা নেই । আমরা কাজটা শুরু করি এই ধরনের একটি তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে । এই কাজটা আমরা ওড়িশাতে করেছি । আরও কাজ চলছে ।"

ecology
গবেষণার কাজে ওড়িশায়

কী ভাবে কম জমিতে আগাছা বা দেশি ফুলগাছ লাগিয়ে সবথেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গকে চাষের জমিতে আকৃষ্ট করা সম্ভব? পার্থিব বসু বলেন, "আমরা বিভিন্ন রকমের গাছ, বিভিন্ন বিন্যাসের গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছি ৷ দেখেছি কোন গাছের সঙ্গে কোন গাছ রাখলে সবথেকে বেশি মৌমাছি বা অন্যান্য পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে আসে ।" প্রাথমিকভাবে ফুলের রং ও বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে দেখা হয়েছে যে কোন ধরনের আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগালে সব থেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট হয় । এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজ়ের গবেষক সুপ্রতিম লাহা বলেন, "আমাদের গবেষণায় সাম্প্রতিক যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা হল, চাষের জমিতে কী ভাবে আমরা আগাছাকে সংরক্ষণ করতে পারি ৷ এবং খুব কম সংখ্যক আগাছাকে লাগিয়ে সেটার দ্বারা বেশি সংখ্যক মৌমাছিকে কী করে আমরা চাষের জমিতে আনতে পারি ও তার থেকে ফলন বাড়াতে পারি । সেটা দেখার জন্য আমরা প্রধান যে গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম সেগুলো আমাদের দেশীয় গাছ । সেই গাছগুলোকে আমরা সাধারণত আগাছা বলে নষ্ট করে দিই, কেটে দিই । কিন্তু, সেই গাছগুলোর গুরুত্বটা আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে ।"

গবেষণার পদ্ধতি ও তার থেকে উঠে আসা ফলাফল নিয়ে সুপ্রতিম লাহা বলেন, "প্রথমত আমরা গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম রঙের ভিত্তিতে । সেই আগাছাগুলোর যে ফুলের রং তার মধ্যে আমরা পাঁচরকমের রং থেকে দুই রকমের রং বেছে নিয়েছি । হলুদ ও নীল । এই দুটি রঙের ফুলের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই রকমের ফুলের প্রজাতিকে আমরা আবার বেছে নিয়েছি । এক রকম প্রজাতির পুংকেশর ও গর্ভকেশর উন্মুক্তভাবে থাকে, আর এক রকম প্রজাতির ফুল যাদের এই রিপ্রোডাক্টিভ পার্টগুলো লুকোনো থাকে । রং এবং গঠনগত এই যে দুই রকমের বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন কম্বিনেশনের মাধ্যমে আমরা এই পরীক্ষাটা করেছি । এই পরীক্ষাটা আমরা ওড়িশার একটা মাঠের মধ্যে করেছি । সেখানে দেখেছি বিভিন্ন রকমের কম্বিনেশনে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছি আসছে । কিন্তু তার মধ্যে যেটা সবথেকে উল্লেখযোগ্য, নীল রঙের ফুলে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে মৌমাছি । সেই নীল ফুলের মধ্যেও যে ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর লুকোনো থাকে সেই ফুলগুলোতে সব থেকে বেশি মৌমাছি আসছে । আমরা এটাও দেখেছি, যে হলুদ ফুল উন্মুক্ত নয় সেই ফুলগুলোতেও বেশি মৌমাছি এসেছে । তবে, নীল ফুলে মৌমাছির সংখ্যা ও প্রকারভেদ বেশি দেখা গেছে ।"

তাঁদের গবেষণা থেকে উঠে আসা এই তথ্য প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে দাবি গবেষকদের । সুপ্রতিম লাহা বলেন, "আমাদের দেশের প্রান্তিক চাষিদের কাছে খুব কম পরিমাণ জায়গা থাকে । সেই অল্প জায়গাতেই এই কিছু বেছে নেওয়া গাছকে লাগিয়ে, দেশি আগাছাকে লাগিয়ে, আমরা ফলন বাড়াতে পারি । আর আমার মনে হয় আমাদের এই যে পরীক্ষামূলক স্টাডিগুলো থেকে যে তথ্য উঠে আসছে, তা সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থাগুলো চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে । এই গাছগুলোর বীজ সরবরাহ করে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা দিয়ে কোনওভাবে সাহায্য করলে আমার মনে হয় চাষিদের উপকারের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করা যাবে । সর্বোপরি, আমাদের যে ফুড সিকিউরিটি সেটাও বাড়বে ।"

Intro:কলকাতা, 15 সেপ্টেম্বর: কৃষিক্ষেত্রে আগাছা লাগিয়ে সম্ভব ফলন বৃদ্ধি। কিন্তু, ভারতবর্ষের মতো দেশ যেখানে ক্ষুদ্র চাষীর আধিক‍্য রয়েছে, সেখানে চাষের জায়গা নষ্ট করে আগাছা লাগানো সম্ভব হয় না চাষীদের পক্ষে। অথচ, এই আগাছা কেটে ফেলা পরাগমিলনকারী পতঙ্গ, যারা পরাগমিলনের মাধ‍্যমে ফলন বাড়াতে সহায়তা করে তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার বর্তমান যে বিশ্বব‍্যাপী সমস‍্যা তার অন‍্যতম কারণ। এই সমস‍্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলোজি রিসার্চ ইউনিটের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এই সমস‍্যার কিছুটা হলেও সমাধান উঠে এসেছে। যাতে গবেষকরা পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ‍্যমে তুলে ধরেছেন, অল্প জায়গায় কম সংখ্যক আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগিয়ে অনেক বেশি সংখ‍্যায় পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট করা সম্ভব। ফুলের রং ও গঠন উপর গবেষণা করে তাঁরা বের করে এনেছেন গাছের কম্বিনেশন যা সবথেকে বেশি সংখ‍্যায় এই ধরনের পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে, বিশেষত ক্ষুদ্র চাষীরা এই গবেষণার তথ‍্যের প্রয়োগ করলে বাড়বে ফলন। এই গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই 'প্রসিডিংস অফ দ‍্য জুলজিক‍্যাল সোসাইটি, কলকাতা' নামের জার্নালে প্রকাশ হয়ে গেছে।


Body:এই ধরনের কম্বিনেশন বা কোন ধরনের গাছ পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে তা নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলিতে তালিকা থাকলেও ভারতবর্ষ বা ট্রপিক্যাল দেশগুলিতে এই ধরনের কোনও তালিকা নেই। সেই তালিকা তৈরির চেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এর জন‍্যই তাঁরা এই গবেষণা করেছেন বলে জানাচ্ছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলোজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজের অধ‍্যাপক পার্থিব বসু। এই গবেষণার উদ্দেশ‍্য নিয়ে তিনি বলেন, "সারা পৃথিবীতে পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে যাওয়াতে উদ্বেগ বেড়েছে এবং বাড়ছে। এই ধরনের পতঙ্গের সংখ্যা কমে গেলে এর সাংঘাতিক প্রভাব পড়ছে এবং আরো পড়বে আমাদের খাদ্য উৎপাদনের উপরে। কারণ, পৃথিবীর প্রায় 80 শতাংশ ফসল উৎপাদন নির্ভর করে এই পরাগমিলন এবং পরাগমিলনকারী পতঙ্গের উপর। তারাই পরাগ আদান প্রদান করে থাকে। আমরা দেখছি, এখন আমাদের দেশেও এই পরাগমিলনের সংকট রয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা সেই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে এবং ভারতবর্ষের আরো দুই একটি জায়গায় যে গবেষক বন্ধুরা কাজ করছেন তাঁদের গবেষণাতেও এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।"

এই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলোজি রিসার্চ ইউনিটে। পরাগমিলনের সমস‍্যা নিয়ে পার্থিব বসু বলেন, "সমস্যাটা তো রয়েছে বুঝতে পারছি। এবার এর থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় দরকার। কী করে আমরা এই পরাগমিলনকারী পতঙ্গের সংখ্যা এবং তারা যে পরিষেবাটি দেয় আমাদের কৃষক বন্ধুদের, যারা ছোট চাষী তাঁরা এই পরিষেবাটি পায় বিনামূল্যে এই পতঙ্গদের কাছ থেকে, কী করে তাদের ফিরিয়ে আনা যায়। আমরা আমাদের গবেষণায় আগেও দেখিয়েছি, কীটনাশকের সাংঘাতিক কুপ্রভাব পড়ছে এদের উপরে। এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে এই কীটনাশক। এর পাশাপাশি আরেকটা বিষয় রয়েছে। সেটা হল এদের উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করা। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের যে পদ্ধতিতে চাষের নিবিড়িকরণ হয়ে এসেছে, নিবিড় কৃষি ব্যবস্থা, তাতে কৃষিক্ষেত্র থেকে এদের বাসস্থান উধাও হয়ে গেছে। অ-ফসল জাতীয় গাছপালাকে অনেক সময় আগাছা বলে কেটে দেওয়া হয়, ছোটখাটো ঝোপঝাড়, বন-জঙ্গল এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে হারিয়ে গেছে এদের বাসস্থান। ফলে এই বাসস্থানগুলো ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে।"

কিন্তু, কৃষি জমিতে আগাছা রেখে পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান তৈরির কথা ভাবলেও, যেখানে ভারতবর্ষে অধিকাংশই ক্ষুদ্র কৃষক, সেখানে এই আগাছা গাছ লাগানোর জন্য তাঁরা কতটা জায়গা দিতে রাজি হবেন বা দিতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের বাসস্থান নিয়ে গবেষণা করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পার্বথি বসু বলেন, "পরাগমিলনকারী পতঙ্গদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পশ্চিমের দেশের তুলনায় আমাদের একটু সীমাবদ্ধতা আছে। পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচুর তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা এমন এমন ফুলের গাছ লাগাচ্ছে কৃষি ভূমিতে, কৃষকরা চাষের জমি ছেড়ে দিয়ে পর্যন্ত ফুলের গাছ লাগাচ্ছে এই পরাগ মিলনকারী পতঙ্গদের ডেকে আনার জন্য এবং তাঁরা মোটামুটি একটি প্রজাতির তালিকা তৈরি করেছে যে, কোন ধরনের ফুলের গাছ লাগালে পরাগমিলনকারী পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে ওই চাষের ক্ষেতে আসবে। আমাদের দেশে যে সমস্ত ছোট খাটো চাষী আছেন তাঁরা তো চাষের জমি নষ্ট করে লাগাবেন না, যাদের বড় বড় জমি তারা খানিকটা ছেড়ে রাখতে পারেন এই সমস্ত ফুল গাছ লাগানোর জন্য। এমন যদি করা যায় যে, চাষের বাঁধ বা আলের উপরে যদি এই সমস্ত গাছপালা লাগানো যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের লাগানোর জায়গাটা খুবই অল্প। তাই আমাদের এমন প্রজাতির গাছ বেছে আনতে হবে, যে প্রজাতির গাছ লাগালে এই সমস্ত পতঙ্গরা প্রবল সংখ্যায় আকৃষ্ট হয়ে আমার ওই চাষের জমিতে আসবে। কিন্তু, আমাদের দেশে এমন কোনো তালিকা নেই। আমরা কাজটা শুরু করি এই ধরনের একটি তালিকা তৈরীর উদ্দেশ্যে। এই কাজটা আমরা ওড়িশাতে করেছি। আরও কাজ চলছে।"

কীভাবে কম জমিতে আগাছা বা দেশি ফুলগাছ লাগিয়ে সবথেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গকে চাষের জমিতে আকৃষ্ট করা সম্ভব? পার্থিব বসু বলেন, "আমরা বিভিন্ন রকমের গাছ, বিভিন্ন বিন‍্যাসের গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছি যে, কোন গাছের সঙ্গে কোন গাছ রাখলে সবথেকে বেশি মৌমাছি বা অন্যান্য পরাগমিলন কারি পতঙ্গরা আকৃষ্ট হয়ে আসে।" প্রাথমিকভাবে ফুলের রং ও বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে দেখা হয়েছে যে কোন ধরনের আগাছা বা অ-ফসল গাছ লাগালে সব থেকে বেশি পরাগমিলনকারী পতঙ্গ আকৃষ্ট হয়। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলোজি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর পলিনেশন স্টাডিজের গবেষক সুপ্রতিম লাহা বলেন, "আমাদের গবেষণায় সাম্প্রতিক যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা হল, চাষের জমিতে কিভাবে আমরা আগাছাকে সংরক্ষণ করতে পারি এবং খুব কম সংখ্যক আগাছাকে লাগিয়ে সেটার দ্বারা বেশি সংখ্যক মৌমাছিকে কী করে আমরা চাষের জমিতে আনতে পারি ও তার থেকে ফলন বাড়াতে পারি। সেটা দেখার জন্য আমরা প্রধান যে গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম সেগুলো আমাদের দেশীয় গাছ। সেই গাছগুলোকে আমরা সাধারণত আগাছা বলে নষ্ট করে দিই, কেটে দিই। কিন্তু, সেই গাছগুলোর গুরুত্বটা আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে।"

গবেষণার পদ্ধতি ও তার থেকে উঠে আসা ফলাফল নিয়ে সুপ্রতিম লাহা বলেন, "প্রথমত আমরা গাছগুলোকে নির্বাচন করেছিলাম রঙের ভিত্তিতে। সেই আগাছাগুলোর যে ফুলের রং তার মধ্যে আমরা পাঁচ রকমের রং থেকে দুই রকমের রং বেছে নিয়েছি। হলুদ ও নীল। এই দুটি রঙের ফুলের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই রকমের ফুলের প্রজাতিকে আমরা আবার বেছে নিয়েছি। এক রকম প্রজাতির পুংকেশর ও গর্ভকেশর উণ্মুক্তভাবে থাকে, আরেক রকম প্রজাতির ফুল যাদের এই রিপ্রোডাক্টিভ পার্টগুলো লুকোনো থাকে। রং এবং গঠনগত এই যে দুই রকমের বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন কম্বিনেশনের মাধ্যমে আমরা এই পরীক্ষাটা করেছি। এই পরীক্ষাটা আমরা ওড়িশার একটা মাঠের মধ্যে করেছি। সেখানে দেখেছি বিভিন্ন রকমের কম্বিনেশনে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছি আসছে। কিন্তু তার মধ্যে যেটা সবথেকে উল্লেখযোগ্য, নীল রঙের ফুলে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে মৌমাছি। সেই নীল ফুলের মধ্যেও যে ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর লুকোনো থাকে সেই ফুলগুলোতে সব থেকে বেশি মৌমাছি আসছে। আমরা এটাও দেখেছি, যে হলুদ ফুল উন্মুক্ত নয় সেই ফুলগুলোতেও বেশি মৌমাছি এসেছে। তবে, নীল ফুলে মৌমাছির সংখ্যা ও প্রকারভেদ বেশি দেখা গেছে।"

তাঁদের গবেষণা থেকে উঠে আসা এই তথ্য ক্ষুদ্র চাষীদের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে দাবি গবেষকদের। সুপ্রতিম লাহা বলেন, "এটাকে আমরা কাজে লাগিয়ে যেটা করতে পারি, আমাদের যে ভারতীয় ক্ষুদ্র চাষী তাঁদের কাছে খুব কম পরিমান জায়গা থাকে। সেই অল্প জায়গাতেই এই কিছু বেছে নেওয়া গাছকে লাগিয়ে, দেশি আগাছাকে লাগিয়ে, আমরা তাদের চাষেতে ফলন বাড়াতে পারি। আর আমার মনে হয় আমাদের এই যে পরীক্ষামূলক স্টাডিগুলো থেকে যে তথ্য উঠে আসছে, সেগুলো বিভিন্ন সংস্থা, সেটা সরকারি-বেসরকারি দুইই হতে পারে, তাঁরা এই ধরনের গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্যগুলো চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এই গাছগুলোর বীজ সরবরাহ করে, এই গাছগুলোকে কনসার্ভ করার জন্য যদি টাকা দিয়ে কোনওভাবে সাহায্য করলে আমার মনে হয় চাষীদের উপকারের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। সর্বোপরি, আমাদের যে ফুড সিকিউরিটি সেটাও বাড়বে।"


Conclusion:
Last Updated : Sep 18, 2019, 8:08 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.