কলকাতা, 6 জুন : বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারি চালাতে এবার স্বাস্থ্য কমিশনের কায়দায় শিক্ষা কমিশন গড়ার কথা ভাবছে নবান্ন (WB Govt is planning to form Education Commission) ৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নজরদারির জন্য আগেই স্বাস্থ্য কমিশন গড়েছিল রাজ্য সরকার । এবার শিক্ষা কমিশন তৈরির কথা ভাবছে নবান্ন । লক্ষ্য সেই একটাই শিক্ষার মতো বিষয়কে পেশায় পরিণত করা বেসরকারি স্কুলগুলির উপর নজরদারি চালানো যাতে বিষয়টি ব্যবসায় পরিণত না হয় ৷
বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে । কখনও অভিযোগ উঠছে স্কুল ফি নিয়ে, কখনও বা পরিকাঠামো, পঠনপাঠন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে ৷ কিন্তু সাধারণ আইন বলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বশাসনের উপর কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে চায় না রাজ্য সরকার । কিন্তু এই শিক্ষা কমিশন তৈরি হলে, অভিভাবকদের অভিযোগ জানানোর একটা জায়গা হবে সেটি ৷ যদিও এই শিক্ষা কমিশনের চূড়ান্ত রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি ৷ তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে এই কমিশন গঠনের কথা ভাবছে রাজ্য ।
শিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, বেসরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে কোনও বিবাদ দেখা দিলে তার বিহিত করবে এই কমিশন । কমিশনের শীর্ষে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি । শিক্ষামহলের একাংশ মনে করছে, রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিতে পড়ানোর খরচ ক্রমেই অভিভাবকদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে । যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অভিভাবকদেরও । কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইন পঠন-পাঠনের সময়ে বেসরকারি স্কুলের ফি দেওয়া নিয়ে আদালতে কম চাপানউতোর চলেনি । কিন্তু এরপরও বেসরকারি স্কুলগুলির একাংশের ফি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে । বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এইসব গুরুতর বিষয়েই এবার নজরদারি চালাবে রাজ্য সরকার । যাতে শিক্ষার মাধ্যমে বেসরকারি স্কুলগুলি লাগামহীন মুনাফা না করতে পারে এই কমিশন গঠনের চিন্তা ।
আরও পড়ুন : সিলিকন ভ্যালিতে আদানি গোষ্ঠীকে জমি দিচ্ছে রাজ্য
শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের কথায়, গোটা বিষয়টি হবে বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সেতুবন্ধন করার একটা প্রয়াস । আর পরস্পরের প্রতি বোঝাপড়া তৈরি করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখবে শিক্ষা কমিশন । যদিও রাজ্যের এই উদ্যোগকে ভাল চোখে দেখছে না রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি । বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, "রাজ্য সরকার এতদিন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে । পরোক্ষে এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব কায়েমের করার চেষ্টা করছে তারা । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি নিয়ে অভিভাবকদের মনে একটা ক্ষোভ রয়েছে । এটা ঠিক, সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির একাংশে বহু খরচ বেড়েছে । কিন্তু সেই অছিলায় সরকার তার মধ্যে ঢুকে পড়ে নিয়ন্ত্রণ করবে তা হয় না ।
অন্যদিকে অভিভাবকদের তরফে ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি-সহ নানা বিষয়ে বেসরকারি স্কুলের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের কাছে আমরা একাধিকবার আইন প্রণয়ন ও রেগুলেটরি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি । সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আন্দোলনের কারণে সরকার যে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমরা খুশি । এটা একটি বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত । রাজ্য সরকারের উচিত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করা ।"