কলকাতা, 7 অগাস্ট : কলকাতায় প্রায়দিন ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে উঠে আসছে মানসিক অবসাদ । বৃহস্পতিবার কলকাতায় ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হল তিনজনের দেহ । এই তিনজনের মধ্যে দু'জনের বয়স 35-এর কোঠায় । একে লকডাউনের কুপ্রভাব বলে ব্যাখ্যা করছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের প্রধান কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ গিরিশ পার্ক থানা এলাকায় তারক প্রামাণিক রোডের একটি বাড়ি থেকে ফোন যায় পুলিশে । বলা হয়, বাড়িতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে । পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় গলায় গামছা জড়িয়ে ঘরের সিলিংয়ের সঙ্গে চলছে 34 বছরের পার্থ ভট্টাচার্য । গলার ফাঁস কেটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতালে । সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । পার্থর ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি । তবে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, লকডাউনে কাজ হারিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই যুবক ।
পরের ঘটনা সকাল সাড়ে সাতটার । এবার এন্টালি থানা এলাকায় । পটারি রোডের একটি দোতলা বাড়ির একতলায় গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ঝুলছিলেন সুবীর কর । পরিবারের সদস্যরা ওইভাবে দেখতে পায় তাঁকে । দ্রুত খবর দেওয়া হয় পুলিশে । পুলিশ সুবীরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । চিকিৎসকরা 35 বছরের ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন । তাঁর ঘর থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ । সুইসাইড নোটের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও সূত্র জানাচ্ছে এক্ষেত্রেও সুইসাইডের কারণ মানসিক অবসাদ।
গত 24 ঘণ্টায় তৃতীয় সুইসাইডের ঘটনা চেতলা লক গেট এলাকায়। গতরাতে 75 বছরের দুলালচন্দ্র দাসকে গলায় লাইলন দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলতে দেখেন পরিবারের লোকজন । ঘটনায় বস্তিতে শোরগোল পড়ে যায় । খবর দেওয়া হয় চেতলা থানায় । পুলিশ এসে গলার ফাঁস খুলে দুলালবাবুকে নিয়ে যায় SSKM হাসপাতালে । সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন দুলালবাবু। কারণ তাঁর শরীরে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন প্রাথমিকভাবে দেখা যায়নি । কিন্তু কেন আত্মহত্যা করলেন 75 বছরের বৃদ্ধ? পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কি তাঁর কোনও অশান্তি হয়েছিল? পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ । তাঁর দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য ।
পাশাপাশি কলকাতায় উদ্ধার হয়েছে দুটি দেহ। গতরাতে উলটোডাঙা থানা এলাকায় যদু মিত্র লেনে একটি কারখানায় উদ্ধার হয় মাঝবয়সি ব্যক্তির দেহ । তাঁর নাম উৎপল মণ্ডল । বাড়ি দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকা সরিষায় । উৎপল হিন্দুস্তানে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক নামে একটি লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ করতেন । সেখানেই থাকতেন তিনি । সম্প্রতি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন উৎপল । এদিকে এই এলাকায় রয়েছে কোরোনার প্রভাব । প্রাথমিকভাবে ওই এলাকায় রটে যায় কোরোনাতে মৃত্যু হয়েছে উৎপলবাবুর। যদিও তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি । পুলিশ তাঁর দেহ উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য ।
অন্য ঘটনায় বালিগঞ্জ স্টেশন রোডের একটি চারতলা বিল্ডিংয়ের উপরের তলায় বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শংকর ভট্টাচার্য নামে একজনকে। তাঁর বয়স 80 বছর । ঘরের বিছানায় নিশ্চল অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি । গড়িয়াহাট থানার পুলিশ শংকরবাবুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় SSKM হাসপাতালে । সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । প্রাথমিকভাবে বৃদ্ধের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি । কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল তাঁর? বিষয়টি জানতে তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । এই পাঁচটি ঘটনাতেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।