কলকাতা, 21 মে : শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতার নামের আগে অপরাজিত শব্দটি ব্যবহার করা একেবারে যথাযথ ৷ কারণ, নির্বাচনী রাজনীতিতে কখনও তাঁর ভরাডুবি হয়নি ৷ 1991 সাল থেকে যতবার ভোটের ময়দানে নেমেছেন, ততবারই জিতেছেন ৷ সে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হোন বা তৃণমূল কংগ্রেসের ৷
নির্বাচনী রাজনীতিতে না হারলেও দলের প্রতি আনুগত্য থেকে জিতে আসা আসন হেলায় ছেড়ে দেওয়ার নজিরও তিনি দেখাতে পেরেছেন ৷ একবার নয়, দু’বার তিনি এই নজির তৈরি করলেন ৷ প্রথমবার করেছিলেন 1998 সালে ৷ তার পর আবার আজ, শুক্রবার তিনি আবার একই কাজ করলেন ৷
1991 সালে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ সেবার বারুইপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছিলেন ৷ 1996 সালেও বজায় ছিল সেই জয়ের ধারা ৷ কিন্তু 1998 সালে বারুইপুরের বিধায়ক পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন ৷ আর রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে লড়েন ৷ সেবারই তিনি প্রথম ঘাসফুল প্রতীকে ভোটে লড়েন ৷
তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেবারও দলের নির্দেশ মেনে তিনি বারুইপুর থেকে সরে এসে রাসবিহারী থেকে লড়াই করেছিলেন ৷ দল ও কেন্দ্র বদলে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামলেও হারের মুখ দেখতে হয়নি তাঁকে ৷ বরং সেই থেকে তিনি রাসবিহারীর বিধায়ক ছিলেন ৷ তিনিই তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জেতা প্রথম বিধায়ক ৷
সেই শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্র বদল করেন ৷ সেটাও দলের নির্দেশে ৷ রাসবিহারী ছেড়ে তিনি প্রার্থী হন ভবানীপুরে ৷ যে কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার নন্দীগ্রামে ভোটে লড়তে যাওয়ার জন্য ভবানীপুরে শোভনদেবকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল ৷
কিন্তু শুক্রবার ভবানীপুরের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন প্রাক্তন এই বক্সার ৷ এদিন বিধানসভায় পদত্যাগ করার পর তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ভবানীপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে উপনির্বাচনে লড়াই করতে পারেন ৷ তাই তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন ৷
তিনি যে দল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সে কথা ফেসবুকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন তাঁর ছেলে সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ কিন্তু তাঁকে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার কৃষিমন্ত্রী করেছেন ৷ ছ’মাসের মধ্যে কোনও কেন্দ্র থেকে জিততে না পারলে তো তাঁকে সেই পদ হারাতে হতে পারে ৷ এই নিয়ে অবশ্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও কিছু স্পষ্ট করেননি ৷
আরও পড়ুন : বিধায়ক পদে ইস্তফা শোভনদেবের, ভবানীপুরে প্রার্থী হচ্ছেন মমতা
তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, আগেরবারের মতো এবার তাঁকে উপনির্বাচনে লড়তে হবে ৷ আর সেই কেন্দ্র সম্ভবত হতে যাচ্ছে খড়দহ ৷ কারণ, ওই কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা ভোট পর্ব শেষ হওয়ার আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৷
এখন দেখার শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবারও অপরাজিত থাকতে পারেন কি না !