কলকাতা, 15 জুন : সোমবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ (Suvendu Adhikari) বিজেপির একাধিক বিধায়ক ৷ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা ৷ আর তারপরই মঙ্গলবার দিল্লি উড়ে গেলেন রাজ্যপাল ৷ রাজভবন সূত্রে খবর, দিল্লি সফরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) সঙ্গে দেখা করবেন তিনি ৷ এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (Ramnath Kovind) সঙ্গেও তিনি দেখা করতে পারেন বলে সূত্রের খবর ৷ এই সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে (Mamata Banerjee) কড়া চিঠি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ যার মধ্যে গোপন রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল শিবির ৷
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো তাঁর চিঠিতে রাজ্যপাল অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও রাজ্যে নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা চলছে ৷ একইসঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা, রক্তপাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত ৷ চলছে লাগাতার নারী নির্যাতন এবং বিরোধীদের সম্পত্তি ধ্বংস ৷ অথচ গোটা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী অদ্ভূতভাবে নীরব !
রাজ্যপালের অভিযোগ, বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা করেনি। আক্রান্তদের রক্ষার্থে কোন পদক্ষেপ করা হয়নি ৷ এভাবে মানবাধিকার লংঘন গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার ৷ আইন অনুযায়ী এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ করা উচিত ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আক্রান্তরাই পুলিশ ও প্রশাসনকে ভয় পাচ্ছে ৷ তাই অবিলম্বে রাজ্য মন্ত্রিসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার দাবি তুলেছেন ধনকড় ৷ একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করারও আর্জি জানিয়েছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Jagdeep Dhankar : আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরব রাজ্যপাল, চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রীকে
উল্লেখ্য, সোমবার রাজভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথাগুলিই সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছিলেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার চিঠির আকারে সেটাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন তিনি ৷ পাশাপাশি আরও দু’টি বিষয় এই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ধনকড় ৷
নারদ মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার হেভিওয়েটের জন্য যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়া ছুটে গিয়েছিলেন নিজাম প্যালেসে, এদিন তারও সমালোচনা করেন জগদীপ ধনকড়। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা এবং যশ (Yaas) পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল আশা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে একবার আলোচনা করবেন। কিন্তু সে পথে হাঁটেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর এই ঘটনায় তিনি আশাহত ৷
এদিকে, এদিন রাজ্যপালের এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই তার কড়া নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এদিন জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে যখন রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক পদ মর্যাদাকে লুটিয়ে দিয়ে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন এবং রাজ্যের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেন, তখন থেকেই এই চিত্রনাট্য চলছে ৷ ধনকড়ের বিরুদ্ধে কুণালের অভিযোগ, ‘‘এই মুহূর্তে তিনি রাজ্যপাল নন, তিনি বিজেপির দালাল ৷ আর রাজভবনটা হল বিজেপি পার্টি অফিস ৷’’
কুণাল আরও বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলছি, একটা তালিকা দিন (হিংসা সংক্রান্ত) ৷ কেন তালিকা দিচ্ছেন না রাজ্যপাল ? যখন কেন্দ্র রেমডেসিভির পাঠায় না, ভ্যাকসিন পাঠায় না, তখন রাজ্যপাল কোথায় থাকেন? এখন পরাজয় মেনে নিতে না পেরে পিছন দরজা দিয়ে 355 বা 356 ধারা চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ চক্রান্ত করা হচ্ছে ৷ রাজ্যপাল এই চক্রান্তের শরিক। তিনি দিল্লি সরকারের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এদিনের চিঠিটি সেই ষড়যন্ত্রের চিত্রনাট্যের অংশ ৷’’
আরও পড়ুন : Jagdeep Dhankhar : শুভেন্দুর অভিযোগ পেয়েই দিল্লি যাত্রা ধনকড়ের, সফর নিয়ে জল্পনা
দলের অপর নেতা তথা তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) সরব হয়েছেন এই বিষয়ে ৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম ঘটছে ৷ রাজ্যপাল প্রতিদিন নিয়ম করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই বলছেন ৷ তিনি রাজভবনে বসে বিজেপি নেতাদের মতো আচরণ করছেন ৷ বিজেপি মুখপাত্রের মত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন ৷ কতগুলি অদ্ভূত মনগড়া কথা বলে পশ্চিমবঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন, যা কখনই কাম্য নয় ৷ যেন মনে হচ্ছে এখানে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ হচ্ছে ৷’’
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটা জিনিস তিনি স্পষ্ট করে দেন সুখেন্দুশেখর ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের এহেন আচরণের পিছনে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে ৷ কেন্দ্রের শাসকদলের কোনও ষড়যন্ত্র বা দূরভিসন্ধি রয়েছে ৷ একটা নিহিত গোপন পরিকল্পনা রয়েছে ওঁদের ৷ যেহেতু নির্বাচনের ফল ওঁরা মেনে নিতে পারছেন না, তাই বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে ওঁরা ষড়যন্ত্র করছেন ৷’’