কলকাতা, 15 জুলাই : ওয়াকিটকি৷ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক সার্জেন্টরা যা ব্যবহার করেন মূলত যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ৷ কিন্তু ওয়াকিটকির প্রযুক্তিগত ত্রুটিকে হাতিয়ার করে সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অনেক সময় ৷ আবার প্রযুক্তিগত ত্রুটিই সার্জেন্টদের স্বাভাবিক দায়িত্বপালনে ব্যাঘাতও ঘটায় বলে অভিযোগ ৷ এবার সেই ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ নয়া এই উদ্যোগে ফাঁকিবাজি যেমন আটকানো যাবে, তেমনই অন্য়ান্য সমস্যাও মিটবে বলে জানা গিয়েছে ৷
কীভাবে হয় এই কাজে ফাঁকি ? কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র বলছে যে ধরা যাক, পাইকপাড়া মোড়ে একটি পণ্যবাহী গাড়ি বিকল হয়ে গেল ৷ স্বাভাবিকভাবেই যানজট বাড়তে শুরু করল ওই অংশে ৷ তখন পরিস্থিতির কথা শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট আরজি কর রোডে কর্তব্যরত কোনও ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে জানালেন ৷ কিন্তু ওই সার্জেন্ট শুনেও ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেন ৷ এতে শেষপর্যন্ত রাস্তায় সেই সময় থাকা মানুষের ভোগান্তি বাড়ল ৷
আরও পড়ুন : জেএমবি সদস্য সন্দেহে বারাসত থেকে গ্রেফতার আরও 1
স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে যে যাঁদের যান নিয়ন্ত্রণ করে সুষ্ঠুভাবে মানুষকে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া কর্তব্য, তাঁদের এমন গাফলিতিতে শাস্তি হওয়া হয় না কেন ? কিন্তু শাস্তি হবে কী করে ! ওয়াকিটকির মাধ্যমে কে কার সঙ্গে কথা বলছেন তার কোনও রেকর্ড রাখতে পারে না লালবাজার । আর সেটা জানেন বলেই এই প্রযুক্তিগত ত্রুটিকেই অনেকে হাতিয়ার করেন বলে অভিযোগ ৷
কিন্তু অনেকক্ষেত্রে অন্য প্রান্ত থেকে আসা বার্তা বুঝতেও অসুবিধা হয় ৷ তাতে নানা সমস্যা তৈরি হয় ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেন্টের কথায়, ওয়াকিটকিতে কথা বলতে সমস্যা হয় । বেশিরভাগ ওয়াকিটকিই আর ব্যবহারযোগ্য নয় । আবার উত্তর কলকাতার ট্র্যাফিক গার্ডের একজন অফিসার ইনচার্জের কথায়, ওয়াকিটকির ব্যাটারি অনেক সময়ে ডাউন থাকে । ফলে ঠিকমত চার্জে বসানো হয় না এবং বিভিন্ন যে সার্কিটগুলি থাকে, তা কাজ করাও বন্ধ করে দেয় ।
আরও পড়ুন : রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া বাগবাজারে, বাড়িতে বৃদ্ধের পচাগলা দেহ আগলে স্ত্রী-মেয়ে
সেই কারণেই ওয়াকিটকির খোলনলচে বদলাতে চায় কলকাতা পুলিশ ৷ আধুনিকভাবে সাজাতে চায় ওয়াকিটকিকে । তাই এতে সংযুক্ত হতে চলেছে একাধিক আধুনিক ফিচার । রেকর্ড সিস্টেম । ফলে কে কার সঙ্গে কথা বললেন, সেটার রেকর্ড থাকছে ৷ এতে কাজে গাফিলতি হলে সহজেই ধরা যাবে ৷ এড়ানো যাবে প্রযুক্তিগত অন্য সমস্যাও ৷
কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিল্ডিং সূত্রের খবর, ওয়াকিটকির যাবতীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং সমস্ত কিছুই পরিবর্তন হবে । তার জন্য একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে কথাও বলেছে লালবাজার । পাশাপাশি পুলিশকর্মীরা যাতে একে অন্যের সঙ্গে যানচলাচল এবং প্রশাসনিক ব্যাপারে কথাবার্তা বলেন এবং সেগুলি যাতে রেকর্ড করা যায়, সেই মাধ্যমটির উপরও জোর দিতে চাইছে কলকাতা পুলিশ ।
আরও পড়ুন : প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে আক্রান্ত যুবক
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কলকাতা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সার্জেন্টদের হাতে একটি কালো রঙের মোবাইল ফোনের আকারের বস্তু থাকে । যে যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁরা একজন অন্যজনের সঙ্গে কথা বলেন যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৷ একেই ওয়াকিটকি বলে ৷ এটি শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশের যোগাযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি ঐতিহ্য বটে । কিন্তু এই ঐতিহ্যের প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছিল লালবাজারে ৷ তার পরই ঐতিহ্যের আমূল পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷