কলকাতা, 11 ফেব্রুয়ারি : আলটপকা মন্তব্য এবং দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য এবার শোকজ করা হল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে । পৌরভোট ঘোষণার পর থেকেই যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না মদন মিত্রকে । কখনও সৌগত রায়, কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সিরা তাঁর তোপের মুখে পড়ছেন ।
দলের নিষেধের কারণে বেশ কিছুদিন ফেসবুক লাইক থেকে দূরে থাকলেও পৌরভোটের মধ্যে ফের ফেসবুকে সক্রিয় হয়েছেন তিনি । আর সেখানেই দলবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূল বিধায়ক । আর গোটা পরিস্থিতি দলের জন্য এতটাই অস্বস্তিজনক যে, বাধ্য হয়েই কড়া ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি । মদন মিত্রের মতো একজন জনপ্রিয় নেতা দলীয় নীতির বাইরে গিয়ে কথা বলার কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেসের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। আর সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে শোকজের নোটিশ জারি করা হয়েছে (Madan Mitra In Trouble) । তবে এদিন এসব নিয়ে মদন মিত্র তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "সঠিক সময়ে যা উত্তর দেওয়ার আমি দেব ।"
পৌরভোটের মুখে তৃণমূলের সমস্ত নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা এমন কোনও বক্তব্য রাখবেন না যাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় । সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক ঘটনায় মদন মিত্রের যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি । আর সে কারণেই মদন মিত্রের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ৷ প্রসঙ্গত, এর আগেও দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সতর্ক করেছিল । এরপরেও তিনি যেভাবে সৌগত রায় থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন, তা ভালভাবে দেখছে না রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
গতকাল আসানসোলের প্রচারে গিয়ে মদন মিত্র বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনও মুখ নেই । বাকিরা কেউ গোটা, কেউ মোটা, কেউ সোটা ।’’ পরে এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার তো অভিষেকের মুখটা ভাল লাগে । আমার কেমন ওকে মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চা লাগে । আর কার ভাল লাগে আমি কীভাবে বলব ? এই দলে মমতাদির পর অভিষেক ছাড়া আর কারও মুখ আমার ভাল লাগে না । কেউ গোটা, কেউ মোটা, কেউ সোটা ।’’
দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এভাবে নিশানা করাকে ভালভাবে নিচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস । আর সে কারণেই এই শোকজ বলে জানা গিয়েছে । এ দিকে শোকজের পর মদন মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দল তাঁকে শোকজ করলে তিনি অবশ্যই তার উত্তর দেবেন । দলের যেকোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে তিনি তৈরি । তবে তিনি যে দলের বিরোধিতা করছেন এমন নয় । তৃণমূলই তাঁর শক্তি, তৃণমূলই তাঁর দুর্বলতা ।
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
এদিকে মদন মিত্রের শোকজের এই ঘটনাকে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহ বলে এড়িয়ে গিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েনি । বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের অন্দরে ক্ষমতার ভাগ নিয়ে লড়াই চলছে । আর সে কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে । মধুভান্ডের ভাগ কে নেবে তাই এখন দেখার ।’’
অন্যদিকে সিপিএম এই ঘটনাকে আইওয়াশ বলেছে । প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দল নেতা সুজন চক্রবর্তীর বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় যখন বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারছে না, তারা আক্রান্ত হচ্ছে । মিডিয়ার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে কখনও পিসি-ভাইপোর লড়াই, কখনও মদন মিত্রের শোকজ এসব দিয়ে আলোচনায় রাখা হচ্ছে ।’’
আরও পড়ুন : Madan Mitra Slams to TMC MP : নাম না-করে কামারহাটিতে দলীয় সাংসদকে কটাক্ষ মদনের