ETV Bharat / city

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে খাদি এখন আন্তর্জাতিক বাজারে

author img

By

Published : Aug 15, 2019, 4:45 PM IST

Updated : Aug 18, 2019, 7:46 PM IST

শিল্পীদের তৈরি মসলিন সহ অন্যন্য সামগ্রী কিনতে উৎসাহিত করতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের তরফে ।

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে খাদি এখন আন্তর্জাতিক বাজারে

কলকাতা, 15 অগাস্ট : খাদি বলতে একসময় লোকে বুঝতো শুধু জামা-কাপড় । এখন কিন্তু খাদি মানে কেবল জামা-কাপড় নয় । বাঁকুড়ার বালুচরির পাশাপাশি খাদি বলতে বাঁকুড়ার পাথরের কাজ, মধু, ডোকরা ও শালপাতার হস্তশিল্পকেও বোঝায় । আর এই খাদি শিল্প এখন পৌঁছে গেছে কলকাতার ও দেশের বিভিন্ন শপিং মলে । তন্তুজ, মঞ্জুষার পণ্যকে ক্রেতাদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার । এর ফলে তাদের শোরুম এখন কোয়েস্ট ও সাউথ সিটির মতো মলে । মানুষের কাছে তন্তুজ ও মঞ্জুষার পণ্যকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার । দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌরী শঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন, ঢেলে সাজানো হচ্ছে তন্তুজ ও মঞ্জুষাকে ।

এক সময় শোনা যেত আঙ্গুলের আংটির ভিতর দিয়ে ঢাকাই মসলিন শাড়ি ঢুকে যেত । সেই শাড়ি যে সত্যি তৈরি করা সম্ভব তা এখন দেখাচ্ছেন খাদির শিল্পীরা । খাদিতে এখন পাওয়া যাবে মসলিন শাড়ি । গ্রাম বাংলার শিল্পীরাই তৈরি করছেন সেই শাড়ি । আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলো থেকে সুতো বের করে মসলিন শাড়ি তৈরি করছে খাদি গ্রামোদ্যোগ । আর ক্রেতাদের সেই শিল্পীদের তৈরি মসলিন সহ অন্যন্য সামগ্রী কিনতে উৎসাহিত করতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে । বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, মালদা সহ সাত-আটটি জেলায় একগুচ্ছ কারিগর তৈরি করছেন মসলিন শাড়ি । ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলার মসলিন ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি হচ্ছে মসলিন শাড়ি । তবে শুধু মসলিন শাড়ি নয় । ঝাড়গ্রামের শালপাতার সামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে খাদির শোরুমগুলিতে । শালপাতা সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার কিনে নিচ্ছে । IIT খড়গপুরের সহযোগিতায় রাজ্য সরকার শালপাতা থেকে আকর্ষণীয় সামগ্রী তৈরি করছে । স্বনির্ভর সংস্থার মহিলারা তৈরি করছেন শালপাতার থালা ।

চিরাচরিত ধারণা ছিল, সুতো থেকে কাপড় কেটে খাদির সামগ্রী তৈরি হয় । এবার তার বাইরে নলেন গুড় ও মধু মিলছে খাদি উদ্যোগের মাধ্যমে । ডোকরা, কাঠের কাজ, সবংয়ের মাদুর তৈরি হচ্ছে খাদিতেই । প্রতি জেলায় এরকম বিভিন্ন খাদি সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খাদির নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত । শুধুমাত্র পরিধান সামগ্রী নয়, টিউবে পাওয়া যাচ্ছে নলেন গুড়, যার মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী । পাশাপাশি মধুও আনা হয়েছে বাজারে । ডাবরের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা করে বাজারে এখন টিকে থাকাটাই তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান । খাদির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে খাদি উদ্যোগের দৌলতে ।

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, "তন্তুজ একসময় রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ছিল ।" আগের বাম সরকারের উপর দায়ভার চাপিয়ে তিনি বলেন, "তনুশ্রীর মতো (বাম সরকার) গুটিয়ে দিতে চেয়েছিল তন্তুজকে । কিন্তু বর্তমান সরকার সে কাজ করতে দেয়নি । বর্তমান সরকার আসার আগে 149 কোটি টাকা দেনা ছিল তন্তুজের । তবে সে সব পিছনে ফেলে তন্তুজ এখন লাভের মুখ দেখছে । 2018-19 আর্থিক বর্ষে 14 কোটি 16 লাখ টাকা লাভ করেছে তন্তুজ । পাশাপাশি তন্তুজের কোনও ব্যাংক ঋণও নেই বর্তমানে । যদিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে এখনও এক বছর সময় লাগবে । ইতিমধ্যেই অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্টের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা তন্তুজ সামগ্রী কিনে বিক্রি করছে বিশ্বব্যাপী ।"

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের তরফে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের তরফে

স্বপন দেবনাথ বলেন, "আমাদের রাজ্যের কাপড় যাচ্ছে অন্য রাজ্যে । বিনিময় প্রথার মাধ্যমে অন্য রাজ্যের কাপড় এই বাংলায় বিক্রি করা হচ্ছে তন্তুজের মাধ্যমে । সারা বছর তন্তুজের সমস্ত সামগ্রীতে ছাড় পাওয়া যায় । আলোছায়া, রোদ বৃষ্টি, নামে নতুন দুটি শাড়ি তৈরি করেছিল তন্তুজ । প্রচুর মানুষ সেই শাড়ি কিনেছেন । ভালো বিক্রি হয়েছে । বিদেশও বিক্রি হচ্ছে তন্তুজের শাড়ি । তন্তুজের শোরুমগুলিকে সাজানো হয়েছে । বাংলার তাঁতের শাড়ির সঙ্গে অন্য রাজ্যের কাপড় বিক্রি হচ্ছে সেখানে । নতুন নতুন নকশায় তৈরি হচ্ছে আধুনিক প্রজন্মের মনের মতো শাড়ি । তন্তুজ ভালো অবস্থায় আছে । খাদি মানে তুলো সুতো নয় । এখন খাদিতে নিত্যনতুন জিনিস পাওয়া যায় । বাতাসা, মিছরি, নকুলদানা এমন কী দুলালের তাল মিছরি খাদির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে । রাখি শিল্পীরাও তাদের রাখি বিক্রি করে অর্থের মুখ দেখতে পাচ্ছেন । 260 জন কর্মীর স্থায়ী চাকরি হয়েছে রাখি শিল্পী হিসাবে । মসলিন শাড়ি তৈরির শিল্পে প্রায় 700 জন শিল্পী কাজ করছেন । তন্তুজ, মঞ্জুষা এখন আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় । খাদি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে । কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হচ্ছে ।"

বিরোধীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে স্বপন দেবনাথ বলেন, "এই মেলাতেই তো গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায় । বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের কাঠ শিল্পের সামগ্রী সল্টলেকের মেলায় বিক্রি হয় । কোনওদিনও গরিব শিল্পীরা ভাবেনি তাদের হাতের কাজের কদর শহরে এ ভাবে দেবে । গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায় । গ্রামের পণ্য শহরে আসে । তন্তুজে তৃণমূলস্তরের মানুষ কাজ করছে । আধুনিক ডিজ়াইন দেখেই রাজ্য সরকারের তন্তুজ গ্রামীণ শিল্পীদের কাছ থেকে কাপড় কেনে । গরিবের শাড়ির ক্ষেত্রে 99 টাকা সরকার ভর্তুকি দেয় । এর ফলে মাত্র 6 টাকায় গরিবের শাড়ি পাওয়া যায় তন্তুজ থেকেই । শহরের বিভিন্ন রেশন দোকান সেই শাড়ি বিক্রি করছে গরিব মানুষের জন্য ।"

কলকাতা, 15 অগাস্ট : খাদি বলতে একসময় লোকে বুঝতো শুধু জামা-কাপড় । এখন কিন্তু খাদি মানে কেবল জামা-কাপড় নয় । বাঁকুড়ার বালুচরির পাশাপাশি খাদি বলতে বাঁকুড়ার পাথরের কাজ, মধু, ডোকরা ও শালপাতার হস্তশিল্পকেও বোঝায় । আর এই খাদি শিল্প এখন পৌঁছে গেছে কলকাতার ও দেশের বিভিন্ন শপিং মলে । তন্তুজ, মঞ্জুষার পণ্যকে ক্রেতাদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার । এর ফলে তাদের শোরুম এখন কোয়েস্ট ও সাউথ সিটির মতো মলে । মানুষের কাছে তন্তুজ ও মঞ্জুষার পণ্যকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার । দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌরী শঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন, ঢেলে সাজানো হচ্ছে তন্তুজ ও মঞ্জুষাকে ।

এক সময় শোনা যেত আঙ্গুলের আংটির ভিতর দিয়ে ঢাকাই মসলিন শাড়ি ঢুকে যেত । সেই শাড়ি যে সত্যি তৈরি করা সম্ভব তা এখন দেখাচ্ছেন খাদির শিল্পীরা । খাদিতে এখন পাওয়া যাবে মসলিন শাড়ি । গ্রাম বাংলার শিল্পীরাই তৈরি করছেন সেই শাড়ি । আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলো থেকে সুতো বের করে মসলিন শাড়ি তৈরি করছে খাদি গ্রামোদ্যোগ । আর ক্রেতাদের সেই শিল্পীদের তৈরি মসলিন সহ অন্যন্য সামগ্রী কিনতে উৎসাহিত করতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে । বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, মালদা সহ সাত-আটটি জেলায় একগুচ্ছ কারিগর তৈরি করছেন মসলিন শাড়ি । ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলার মসলিন ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি হচ্ছে মসলিন শাড়ি । তবে শুধু মসলিন শাড়ি নয় । ঝাড়গ্রামের শালপাতার সামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে খাদির শোরুমগুলিতে । শালপাতা সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার কিনে নিচ্ছে । IIT খড়গপুরের সহযোগিতায় রাজ্য সরকার শালপাতা থেকে আকর্ষণীয় সামগ্রী তৈরি করছে । স্বনির্ভর সংস্থার মহিলারা তৈরি করছেন শালপাতার থালা ।

চিরাচরিত ধারণা ছিল, সুতো থেকে কাপড় কেটে খাদির সামগ্রী তৈরি হয় । এবার তার বাইরে নলেন গুড় ও মধু মিলছে খাদি উদ্যোগের মাধ্যমে । ডোকরা, কাঠের কাজ, সবংয়ের মাদুর তৈরি হচ্ছে খাদিতেই । প্রতি জেলায় এরকম বিভিন্ন খাদি সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খাদির নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত । শুধুমাত্র পরিধান সামগ্রী নয়, টিউবে পাওয়া যাচ্ছে নলেন গুড়, যার মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী । পাশাপাশি মধুও আনা হয়েছে বাজারে । ডাবরের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা করে বাজারে এখন টিকে থাকাটাই তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান । খাদির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে খাদি উদ্যোগের দৌলতে ।

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, "তন্তুজ একসময় রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ছিল ।" আগের বাম সরকারের উপর দায়ভার চাপিয়ে তিনি বলেন, "তনুশ্রীর মতো (বাম সরকার) গুটিয়ে দিতে চেয়েছিল তন্তুজকে । কিন্তু বর্তমান সরকার সে কাজ করতে দেয়নি । বর্তমান সরকার আসার আগে 149 কোটি টাকা দেনা ছিল তন্তুজের । তবে সে সব পিছনে ফেলে তন্তুজ এখন লাভের মুখ দেখছে । 2018-19 আর্থিক বর্ষে 14 কোটি 16 লাখ টাকা লাভ করেছে তন্তুজ । পাশাপাশি তন্তুজের কোনও ব্যাংক ঋণও নেই বর্তমানে । যদিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে এখনও এক বছর সময় লাগবে । ইতিমধ্যেই অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্টের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা তন্তুজ সামগ্রী কিনে বিক্রি করছে বিশ্বব্যাপী ।"

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের তরফে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের তরফে

স্বপন দেবনাথ বলেন, "আমাদের রাজ্যের কাপড় যাচ্ছে অন্য রাজ্যে । বিনিময় প্রথার মাধ্যমে অন্য রাজ্যের কাপড় এই বাংলায় বিক্রি করা হচ্ছে তন্তুজের মাধ্যমে । সারা বছর তন্তুজের সমস্ত সামগ্রীতে ছাড় পাওয়া যায় । আলোছায়া, রোদ বৃষ্টি, নামে নতুন দুটি শাড়ি তৈরি করেছিল তন্তুজ । প্রচুর মানুষ সেই শাড়ি কিনেছেন । ভালো বিক্রি হয়েছে । বিদেশও বিক্রি হচ্ছে তন্তুজের শাড়ি । তন্তুজের শোরুমগুলিকে সাজানো হয়েছে । বাংলার তাঁতের শাড়ির সঙ্গে অন্য রাজ্যের কাপড় বিক্রি হচ্ছে সেখানে । নতুন নতুন নকশায় তৈরি হচ্ছে আধুনিক প্রজন্মের মনের মতো শাড়ি । তন্তুজ ভালো অবস্থায় আছে । খাদি মানে তুলো সুতো নয় । এখন খাদিতে নিত্যনতুন জিনিস পাওয়া যায় । বাতাসা, মিছরি, নকুলদানা এমন কী দুলালের তাল মিছরি খাদির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে । রাখি শিল্পীরাও তাদের রাখি বিক্রি করে অর্থের মুখ দেখতে পাচ্ছেন । 260 জন কর্মীর স্থায়ী চাকরি হয়েছে রাখি শিল্পী হিসাবে । মসলিন শাড়ি তৈরির শিল্পে প্রায় 700 জন শিল্পী কাজ করছেন । তন্তুজ, মঞ্জুষা এখন আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় । খাদি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে । কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হচ্ছে ।"

বিরোধীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে স্বপন দেবনাথ বলেন, "এই মেলাতেই তো গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায় । বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের কাঠ শিল্পের সামগ্রী সল্টলেকের মেলায় বিক্রি হয় । কোনওদিনও গরিব শিল্পীরা ভাবেনি তাদের হাতের কাজের কদর শহরে এ ভাবে দেবে । গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায় । গ্রামের পণ্য শহরে আসে । তন্তুজে তৃণমূলস্তরের মানুষ কাজ করছে । আধুনিক ডিজ়াইন দেখেই রাজ্য সরকারের তন্তুজ গ্রামীণ শিল্পীদের কাছ থেকে কাপড় কেনে । গরিবের শাড়ির ক্ষেত্রে 99 টাকা সরকার ভর্তুকি দেয় । এর ফলে মাত্র 6 টাকায় গরিবের শাড়ি পাওয়া যায় তন্তুজ থেকেই । শহরের বিভিন্ন রেশন দোকান সেই শাড়ি বিক্রি করছে গরিব মানুষের জন্য ।"

Intro:তন্তুজ, খাদি মঞ্জুষাকে মানুষের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌরী শঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন ঢেলে সাজানো হচ্ছে তন্তুজ, খাদি এবং মঞ্জুষাকে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন শপিংমলে শোরুম খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তন্তুজ, খাদি এবং মঞ্জুষার তৈরি করা সামগ্রী মানুষের কাছে এখনো যথেষ্ট আকর্ষণীয় বলে মনে করেন দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।


Body:খাদির অনেকগুলো শোরুম কোয়েস্ট মল, সাউথ সিটি মল, এবং স্পেন্সার্সে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। চলতি ধারণা ছিল তুলো থেকে সুতো বার করে খাদির সামগ্রী তৈরি হয়। এখন কিন্তু খাদি বলতে কেবল মাত্র জামা কাপড় নয়। সেখানে বাঁকুড়ার বালুচরীর পাশাপাশি বাঁকুড়ার পাথরের কাজ, মধু এবং ডোকরা, শালপাতার তৈরি নানান আকর্ষণীয় জিনিস মিলবে শহরের শোরুম গুলিতে।
খাদিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে রেডিমেড সামগ্রীতে। এক সময় শোনা যেত আঙ্গুলের আংটির ভিতর দিয়ে মোসলিন শাড়ি ঢুকে যেত। সেটা যে সত্যি সম্ভব তা তৈরি করে দেখাচ্ছে খাদির শিল্পীরা।
খাদিতে এখন পাওয়া যাবে মোসলিন শাড়ি। গ্রাম বাংলার শিল্পীরাই তৈরি করছেন সেই শাড়ি। অভিনব পদ্ধতিতে, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলো থেকে সুতো বার করে মসলিন সারী তৈরি করছে খাদি গ্রামোদ্যোগ। বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, মালদা সহ সাত-আটটি জেলায় একগুচ্ছ কারিগর তৈরি করছেন মসলিন শাড়ি। ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলার মোসলিন।
ঝাড়গ্রামের শাল পাতা সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার কিনে নিচ্ছে। শাল পাতা থেকে আকর্ষণীয় সামগ্রী তৈরি করছে খড়গপুর আইআইটি সহযোগিতায় রাজ্য সরকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় লাগাতার তৈরি হয়ে চলেছে মোসলিন শাড়ি।
ইতিমধ্যেই প্রতি জেলায় উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য খাদির নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান গৌরী শঙ্কর দত্ত। শুধুমাত্র পরিধান সামগ্রী নয়, আধুনিক পদ্ধতিতে টিউবে পাওয়া যাচ্ছে নলেন গুড়, যার মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী। বিদেশে পাঠানো হচ্ছে সেই গুড়। বাংলার নলেনগুড় পৃথিবীতে বিশেষ জায়গা নিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
খাদির ঐতিহ্যকে ধরে রেখে একুশ শতকের চাহিদামত সামগ্রী তারা উৎপাদন করছে বলে জানিয়েছেন গৌরীশংকর। খাদিকে সফল করা গিয়েছে। খাদিকে রুগ্ন শিল্প থেকে বের করে আনা গিয়েছে। খাদি বাংলার একটি অপর নাম। আইন অনুযায়ী অলাভজনক সংস্থা খাদি। কিন্তু খাদি চালাতে কোন সমস্যা নেই। বাজেটেও নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ হয়। সরকারের সাহায্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।
বিষ্ণুপুরের বালুচরীর দায়িত্ব নিচ্ছে খাদি সংস্থা। খাদির বিভিন্ন স্টলে সস্তায় বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ি পাওয়া যাবে। বাঁকুড়ার পাথরের কাজ ইতিমধ্যেই মানুষের নজর কেড়েছে যা তৈরি করছে খাদি। মধু নিয়ে বাজারে নেমেছে খাদি। ডাবরের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা করে বাজারে এখন টিকে থাকাটাই তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। শালপাতার থালা স্বনিযুক্তি সংস্থার মহিলারা তৈরি করছেন। ঝারগ্রাম সহ পাহাড়, কালিম্পঙের বিভিন্ন শিল্পকে খাদির স্টলে রাখা হচ্ছে। মানুষ অকাতরে সেগুলি কিনছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার এক অধিকর্তা।
পাহাড়ি শিল্প এবং জঙ্গলমহলের শিল্পকে খাদির মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়াই সরকারি উদ্যোগ। চিরাচরিত ধারণা ছিল, সুতো থেকে কাপড় কেটে খাদির সামগ্রী তৈরি হয়। এবার তার বাইরে আরো অন্য কিছু সামগ্রী নিয়ে এসছে খাদি। সেখানে নলেন গুড় এবং মধু মিলছে উৎকৃষ্ট স্বাদের, সস্তা মূল্যের। ডোকরা, কাঠের কাজ, সবংয়ের মাদুর তৈরি হচ্ছে খাদিতেই। অত্যন্ত বিখ্যাত সামগ্রীগুলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সরাই ঘাসের উৎপাদিত সামগ্ৰীর চাহিদা রয়েছে রীতিমতো। রাখি, শীতলপাটি বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকার সামগ্রীও মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য এবং ঘর সাজাবার জন্য খাদি বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন খাদির কর্মীরা।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানাচ্ছেন, তন্তুজ একসময় রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ছিল। আগের সরকারের ওপর দায়ভার চাপিয়ে তিনি বলেন তনুশ্রীর মতো গুটিয়ে দিতে চেয়েছিল তন্তুজ কে। কিন্তু বর্তমান সরকার সে কাজ করতে দেয়নি বলে দাবি করেন স্বপন দেবনাথ। ১৪৯ কোটি টাকা দেনা ছিল। তন্তুজ চলতি ১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে ১৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা লাভ করেছে। কোন রকম ভাবেই লোকসানে চলছে না তন্তুজ। তন্তুজের কোন ব্যাংক ঋণ নেই। যদিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে এখনো এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ইতিমধ্যেই আমাজন, ফ্লিপকার্টের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা তন্তুজ সামগ্রী কিনে বিক্রি করছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের রাজ্যের কাপড় যাচ্ছে অন্য রাজ্যে। বিনিময় প্রথার মাধ্যমে অন্য রাজ্যের কাপড় এই বাংলায় বিক্রি করা হচ্ছে তন্তুজের মাধ্যমে।
সারা বছর তন্তুজের সমস্ত সামগ্রীতে ছাড় পাওয়া যায়। আলোছায়া, রোদ বৃষ্টি, নামে নতুন দুটি শাড়ি তৈরি করেছিল তন্তুজ। প্রচুর মানুষ সেই শাড়ি কিনেছেন। ভালো বিক্রি হয়েছে। বিদেশও বিক্রি হচ্ছে তন্তুজের শাড়ি। তন্তুজ এর শোরুম গুলিকে সাজানো হয়েছে। বাংলার তাঁতের শাড়ির সঙ্গে অন্য রাজ্যের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে তন্তুজে। নতুন নতুন নকশায় তৈরি হচ্ছে আধুনিক প্রজন্মের মনের মত শাড়ি। তন্তুজ ভালো অবস্থায় আছে। খাদি মানে তুলো সুতো নয়। এখন খাদিতে নিত্য নতুন জিনিস পাওয়া যায়। বাতাসা, মিশ্রি, নকুলদানা এমনকি দুলালের তাল মিশ্রি খাদির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। রাখি শিল্পীরাও তাদের রাখি বিক্রি করে অর্থের মুখ দেখতে পাচ্ছেন। ২৬০ জন কর্মীর স্থায়ী চাকরি হয়েছে রাখি শিল্পী বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মসলিন শাড়ি শিল্পে প্রায় ৭০০ জন শিল্পী কাজ করছেন। তন্তুজ, খাদি, মঞ্জুষা এখন আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। খাদি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হচ্ছে। রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, আধুনিক প্রজন্মের মনের মতন সামগ্রী উৎপাদন করছে এই তিনটি সংস্থা বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।



Conclusion:মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, বিরোধীরা মেলা-খেলাকে এতটা বিদ্রূপ করেন। কিন্তু এই মেলাতেই তো গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায়। বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের কাঠ শিল্পের কাজ সল্টলেক মেলাতে বিক্রি হয়। কোনদিনও গরিব শিল্পীরা ভাবেনি তাদের হাতের কাজের কদর শহরে এ ভাবে দেবে। গ্রামীণ শিল্পীরা সুবিধা পায়। গ্রামের পণ্য শহরে আসে। তন্তুজে তৃণমূল স্তরের মানুষ কাজ করছে। আধুনিক ডিজাইন দেখেই রাজ্য সরকারের তন্তুজ গ্রামীণ শিল্পীদের কাছ থেকে কাপড় কেনেন। গরিবের শাড়ি ৯৯ টাকা সরকার ভর্তুকি দেয়। মাত্র ৬ টাকায় গরিবের শাড়ি পাওয়া যায় তন্তুজ থেকেই। শহরের বিভিন্ন রেশন দোকান সেই শাড়ি বিক্রি করছে গরিব মানুষের জন্য।
Last Updated : Aug 18, 2019, 7:46 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.