কলকাতা, 5 অগস্ট : সাবেকি পুরনো উত্তর কলকাতাকে চিনতে চান ? জানতে চান উত্তর কলকাতার না জানা, অচেনা কাহিনী ? তাহলে একবার অন্তত আসতে হবে উত্তর কলকাতার বড়তলা থানায় । কি, শুনতে অবাক লাগছে তো ! আচমকাই উত্তর কলকাতাকে চিনতে, তার সম্পর্কে জানতে, থানায় যেতে বলা হচ্ছে কেন ? থানায় তো শুধুই চোর-পুলিশের খেলা । তাহলে থানায় গিয়ে কিভাবে উত্তর কলকাতা সম্পর্কে জানা যায় ?
হ্যাঁ ! এবার থেকে বড়তলা থানায় (Baratala police station) গেলে মিলবে সে কালের সাবেকি উত্তর কলকাতার বাইজি সংস্কৃতি থেকে শুরু করে বাবু সংস্কৃতি, এসবের তথ্য । গোটা পরিকল্পনার নেপথ্যে লালবাজারের একটি বড় ভূমিকা থাকলেও, মুখ্যভূমিকা পালন করেছেন বড়তলা থানার ওসি দেবাশিস দত্ত ৷ থানায় গেলে কেমন একটা ভয় ভয় অনুভূতি হয় । যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নোংরার স্তুপ । পাশাপাশি দেওয়ালে পানের পিকের দাগ থেকে শুরু করে এলাকার মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের ছবি। কিন্তু সেদিক থেকে এক অনন্য নজির গড়েছে উত্তর কলকাতার বড়তলা থানা ৷
থানার বাইরের দেওয়ালে রয়েছে নাট্যকার গিরীশ ঘোষ থেকে শুরু করে, সেকালের একাধিক নামজাদা বাইজিদের ছবি । এর পর ধীরে ধীরে থানার ভিতরে গেলে চোখে পড়বে বিখ্যাত উত্তর কলকাতার ছাতুবাবুর চড়ক মেলা । সেই সময় এলাকার একটি দৈত্যাকার বটগাছকে কেন্দ্র করে বসত ছাতুবাবুর চড়ক মেলা (Chatubabus Charak Mela) । সেই ছবি দেখে আচমকাই ফিরে যেতে হয় ইংরেজ আমলে ৷ আর সেখান থেকে একটু ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে সেই সময়কার পরিবহণ ব্যবস্থায় কিভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করত পালকি । থানার ঠিক সামনের দেওয়ালে রয়েছে ইংরেজ আমলের বিখ্যাত বাইজি নিখির ছবি । ইতিহাসে রয়েছে, আঠারো শতকের সময়ে ওই নিখি বাইজি একটি সন্ধ্যায় নাচের জন্য 1 হাজার টাকা নিতেন । সেই সময় গোটা উত্তর কলকাতায় বাইজি নিখিকে নিয়ে চাঁদের হাট বসত ৷
পাশাপাশি তৎকালীন হাওড়া-শিয়ালদা স্টেশনে কীভাবে বাণিজ্যযাত্রা বসত, সেই ছবিও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে । রয়েছে ইস্টার্ন কমান্ডের ইতিহাস । এই সমস্ত ছবি আঁকতে সাহায্য করেছেন কলকাতা আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ । ফলে এখন থানার সামনেই বাংলার ইতিহাসের ছবিকে সাক্ষী রেখে চলছে দেদার সেলফি তোলার রমরমা । এই বিষয় পুলিশের একাংশের মন্তব্য, এভাবেও যে থানাকে চেনা যায়, তা হয়তো এখন বোঝা যাচ্ছে । পুলিশকেও অন্যভাবে চিনতে শিখছে নতুন প্রজন্ম ৷