কলকাতা, 13 জানুয়ারি: সোমবার শিক্ষকদের নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হয়েছিল । অভিযানের মাঝপথে পুলিশের বাধা পেয়ে ফের শহিদ মিনারের অবস্থান মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা । বিকেলেই শুরু হয়ে যায় অনশন । তারপর গতকাল আবার শিক্ষকদের সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ধর্মতলায় । আবারও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল করতে চেয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। করতে চেয়েছিলেন লালবাজার অভিযান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিছিল করেননি তাঁরা।
শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের ডাকে পার্শ্বশিক্ষক, ভোকেশনাল শিক্ষক, উচ্চমাধ্যমিকের আংশিক সময়ের শিক্ষক, SSK, MSK, স্পেশাল এডুকেটর, চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকদের মতো মোট দশটি স্তরের পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষক এসে জমায়েত করেন শহিদ মিনারের ময়দানে। নবান্ন অভিযানে হাইকোর্টের অনুমতি না থাকলেও হঠাৎই নবান্নের উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু করে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। পুলিশ প্রস্তুত ছিল না। তাই মেয়ো রোড হয়ে লেডি ডাফরিন রোড পর্যন্ত মিছিলকে বারবার বিভিন্ন উপায়ে আটকানোর চেষ্টা করেন পুলিশকর্মীরা । আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় তাঁদের। এমনকী ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা পুলিশের উপরেও চড়াও হয়েছিল । অবশেষে রেড রোড ও লেডি ডাফরিন রোড ক্রশিংয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। সেখানেই কিছুক্ষণ অবস্থান করে ফের শহিদ মিনারের ময়দানে অবস্থান মঞ্চে ফিরে যান বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা।
ওইদিনই বিকেল পাঁচটায় সমকাজে সমবেতন, অবসরকালে পেনশনের মতো বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের প্রায় 20 দফা দাবি আদায়ে শুরু হয় অনশন। হাইকোর্টের অনুমতিক্রমে মোট তিনদিন এই অবস্থান-অনশন চালিয়ে যেতে পারবেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল ছিল তাঁদের অবস্থান-অনশনের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও উত্তেজনা তৈরি হয় ধর্মতলায়। এবার নবান্নের পরিবর্তে লালবাজার অভিযান ঘিরে।
গতকাল সকাল থেকেই লালবাজার অভিযানের ঘোষণা করা হচ্ছিল। মূলত, সোমবার নবান্ন অভিযানের সময় পুলিশকর্মীরা শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয় । সেই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল অর্ধনগ্ন হয়ে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চ। কিন্তু, আজ প্রস্তুত ছিল পুলিশ। অভিযানের কথা জানতে পেরেই একে একে শহিদ মিনারের ময়দানে ঢোকা-বেরোনোর সবকটি গেট ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় তারা । পাশাপাশি, প্রস্তুত ছিল পুলিশও। পুলিশের থেকে বাধা পেয়ে প্রথমে প্রেস ক্লাবের দিকের গেটটিতে থাকা ব্যারিকেড ভাঙতে ছুটে আসেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা। সেটি ভাঙতেও সফল হন তাঁরা। তবে সেখান থেকে না বেরিয়ে কয়েকশো আন্দোলনকারী মেয়ো রোডের দিকের গেটে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেখানে পুলিশ দ্বিস্তরীয় ব্যারিকেড করে রেখেছিল।
আরও পড়ুন :চাকরির দাবিতে নবান্ন অভিযান, পুলিশের বাধা পেয়ে মেয়ো রোডে অবস্থান যুবকদের
ব্যারিকেড ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ধাক্কাধাক্কি করে প্রথম স্তরের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন তাঁরা। চেষ্টা করেন দ্বিতীয় স্তরের ব্যারিকেড ভাঙারও। কিন্তু, দ্বিতীয় স্তরের ব্যারিকেড ভাঙার আগেই অবস্থান মঞ্চ থেকে নেতৃত্ব তাঁদের ফিরে আসতে বলায় ফিরে যান আন্দোলনকারীরা। ব্যারিকেড ভাঙার সময় একজন আহত হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ব্যারিকেড ভাঙতে আসা শিক্ষকদের একাংশের যুক্তি ছিল, তাঁদের রক্তদান কর্মসূচি চলছে। বই বিক্রি হচ্ছে। তাই বাইরের মানুষদের ভিতরে আসতে দিতে হবে। ঢোকা-বেরোনোর পথ বন্ধ রাখা যাবে না। আজ আবারও একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।