কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গিয়েছে ৷ উৎসবের আমেজে মেতেছে বাঙালি ৷ তবে এবারের পুজো (Durga Puja 2022) যেন আরও স্পেশাল ৷ সৌজন্যে প্রখ্যাত বাঙালি ঐতিহাসিক তপতী গুহ ঠাকুরতা (Tapati Guha Thakurta) ৷ তপতী এবং তাঁর সহকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই সদ্য ইউনেসকো (UNESCO)-র কাছ থেকে 'অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য়'-এর (Intangible Cultural Heritage) স্বীকৃতি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো (Kolkata Durga Puja) ৷ যদিও এই ঘটনার পরই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক ৷ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের কৃতিত্ব নিতে রীতিমতো লড়াই শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য়ের মধ্যে ৷
তপতী নিজে অবশ্য কোনও বিতর্কের অংশীদার হতে নারাজ ৷ তিনি মনে করেন, কলকাতার দুর্গাপুজো তার প্রাপ্য স্বীকৃতিই পেয়েছে ৷ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে তপতী জানিয়েছেন, এই সাফল্য শুধুমাত্র তাঁর বা তাঁর সহকর্মীদের নয় ৷ বরং সংশ্লিষ্ট সকলেই এর সমান ভাগিদার ৷
তপতী নিজে এই স্বীকৃতির কৃতিত্ব সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলেও তিনি যখন কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন, তখন কিন্তু সেটা ছিল তাঁর একার লড়াই ৷ কলকাতার দুর্গাপুজোকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে গত বছরের 15 ডিসেম্বর ৷ তপতী তাঁর গবষেণা শুরু করেছিলেন এর প্রায় দুই দশক আগে ৷ সেই সময় দুর্গাপুজোর প্রতি তাঁর আবেগই ছিল প্রধান পাথেয় ৷ সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সহকর্মী ৷
আরও পড়ুন: মহালয়া আর কুমারটুলির এই রেডিয়ো ম্য়ানের নিবিড় সম্পর্ক
কলকাতার দুর্গাপুজোর খুঁটিনাটি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন তপতী ৷ 2012 সালে প্রথমবার কলকাতা দুর্গাপুজোর প্রাপ্য স্বীকৃতি আদায়ে ইউনেসকোর দ্বারস্থ হয়েছিলেন এই বাঙালি ইতিহাসবিদ ৷ কিন্তু সেবার তাঁদের আবেদন বাতিল হয়ে যায় ৷ 2015 সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে এই সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে আসে ৷ বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রের ৷ 2018 সালের অগস্ট মাসে কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে তপতীকে একটি দলিল প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ৷ 2019 সালের মধ্য়ে সেই কাজ সম্পন্ন করেন তপতী ও তাঁর সহকর্মীরা ৷ 2020 সালে তাতে কিছু সংশোধন করা হয় ৷ তারপর 2021 সালে সেই দলিল পাঠানো হয় ইউনেসকোকে ৷ স্বীকৃতি মেলে বছর শেষ হওয়ার আগেই ৷
এই ঘটনা জানাজানি হতেই সোশ্য়াল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়, তপতী গুহ ঠাকুরতাকে তাঁর কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিচ্ছে না রাজ্যের সরকার ৷ তপতী নিজে এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন ৷ এমনকী, পরবর্তীতে প্রকাশ্য মঞ্চে তাঁকে তাঁর অবদানের জন্য সংবর্ধনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ কিন্তু তারপরও রাজনীতির দড়ি টানাটানি থামেনি ৷ বন্ধ হয়নি সমালোচকদের মুখ ৷
তপতী এখনও এ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন ৷ আদ্যন্ত বাঙালি এই মানুষটির জন্ম হয় 1957 সালের 27 সেপ্টেম্বর ৷ কলকাতার মেয়ে তপতী কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী ৷ শতাব্দী প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দু'টি থেকেই ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করেছেন তিনি ৷ পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্য়ালয়ে ভর্তি হন এই বঙ্গতনয়া ৷