ETV Bharat / city

সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী "আইওয়াশ", বলছেন চিকিৎসকরা

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এতদিন বছরে এক লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের সুবিধা এবার থেকে সব পরিবার পাবে। বছরে পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্য মিলিয়ে 1500 হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা, সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হয়েছে।

swasthya_sathi_for_all_but_health_is_not_for_all_said_doctors
সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী, তবে সকলের জন্য স্বাস্থ্য নয়, বলেছন চিকিৎসকরা
author img

By

Published : Nov 30, 2020, 9:53 PM IST

কলকাতা, 30 নভেম্বর : সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্য়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ৷ সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হচ্ছে। তা হলে সরকারি হাসপাতালে কি ফ্রি এবং জটিল রোগের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না? চিকিৎসকদের কোনও অংশের তরফে যেমন বলা হচ্ছে, এটা "আইওয়াশ" ৷ তেমনই কোনও অংশের তরফে বলা হচ্ছে, "সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী" হয়েছে। কিন্তু, "সকলের জন্য স্বাস্থ্য" হয়নি।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবার পিছু বছরে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে। এই বিষয়ে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা তথা, চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (WBDF)-এর আহ্বায়ক চিকিৎসক পুণ‍্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘বিষয়টি এমন হয়েছে যে, 'সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী' কিন্তু, 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য' নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় চিকিৎসার খরচ পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু, আউটডোরের চিকিৎসার জন্য কনসালটেশন ফি, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্রের খরচ এই কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যাবে না। অথচ, আমরা জানি, চিকিৎসার খরচের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ হয় আউটডোরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।’’ চিকিৎসক পুণ‍্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন সকলের স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করবেই, তখন সেই খরচ বেসরকারি বিমা সংস্থার প্রিমিয়ামের জন্য না করে, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য খরচ করুন, যাতে রাজ্যবাসী সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন।’’



মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের সুবিধা এবার থেকে সব পরিবার পাবে। এই ঘোষণা অনুযায়ী, বছরে পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্য মিলিয়ে 1500 হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা, সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি জানানো হয়েছে, 7.5 কোটি থেকে বেড়ে পশ্চিমবঙ্গে এখন 10 কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এ রাজ‍্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোট নার্সিংহোমগুলিতে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পেতে দেখা যায়। বড় কর্পোরেট হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পেতে খুব একটা দেখা যায় না। ফলে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে ছোট মাপের নার্সিংহোমে কিছু চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন সাধারণ মানুষ।’’ তিনি বলেন, ‘‘এক বছরের জন্য গোটা পরিবারের ক্ষেত্রে এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এক লাখ টাকার কভারেজ পাওয়া যায়। বড় কোনও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক লাখ টাকায় সেভাবে এখন আর কিছু হয় না। এ সব লিমিটেশনের ফলে স্বাস্থ্যসাথী তেমন কার্যকর নয়। কারণ, এই কার্ডের মাধ্যমে কিছু মানুষ হয়তো সামান্য চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন। তবে, সার্বিকভাবে বড় কোনও সুবিধা এই কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।’’



মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মাধ্যমে সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হয়েছে। তা হলে সরকারি হাসপাতালে কি ফ্রিতে চিকিৎসা হচ্ছে না, জটিল কোনও রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না? চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে ফ্রি চিকিৎসার বিষয়টি সংকুচিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী হোক বা আয়ুষ্মান ভারত, কোনওটিই কিন্তু ফ্রি চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার বিকল্প নয়। ফ্রি চিকিৎসা মানে ফ্রি চিকিৎসা। এই ধরনের কার্ডের মাধ্যমে মানুষকে গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দেওয়া হল। মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার কমে গেল।’’ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এতদিন এক লাখ টাকার বিমার কথা বলা হয়েছে, আসলে এর মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলিকে আরও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বিমা সংস্থাগুলি ব‍্যবসা করে নিচ্ছে। কোথাও পাঁচ হাজার টাকার বিল হলে দেখা গেল 50 হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, মুহুর্তের মধ্যে 50 হাজার টাকা বেরিয়ে গেল। এর ফলে, সারা বছর পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে কী হবে? এই প্রশ্ন তুলে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর এই এক লাখ টাকার বদলে আয়ুষ্মান ভারতে পাঁচ লাখ টাকা পাওয়া যায়, তাতেও যে তেমন ভালো কিছু হচ্ছে, তা নয়। এখনকার দিনে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা তেমন কিছু নয়। কাজেই ফ্রি চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এখানে কোনও কার্ডের বিষয় থাকা উচিত নয়। যে মানুষ যে সমস্যা নিয়ে আসবেন, তাঁর চিকিৎসা করতে হবে। এটা না করে স্বাস্থ্যসাথী হোক বা আয়ুষ্মান ভারত, সবগুলিই আইওয়াশ ৷’’



সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকার কভারেজ পাওয়া যাবে, এটা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য কাগজে-কলমে আমরা এখনও দেখতে পাইনি। তবে, এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে এক লাখ টাকার বদলে পাঁচ লাখ টাকা হল, এদিক থেকে এটা ভালো। কিন্তু, পাঁচ লাখ টাকা এখনকার দিনে বড় কোনও অঙ্কের টাকা নয়। এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ জন সদস্য রয়েছেন, এমন পরিবারের কোনও একজনের যদি বছরে বড় কোনও অসুখ করে, তা হলে পাঁচ লাখ টাকার অনেক বেশি খরচ হবে। সব টাকা চলে গেলে তাঁর পরের চিকিৎসার কী হবে, ওই পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? অর্থাৎ, এই ধরনের ব‍্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়টির নিশ্চয়তা নেই।’’


চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি হাসপাতালে তা হলে কি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না? তাহলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা কি বন্ধ করে দেওয়া হবে?" তিনি বলেন, ‘‘ফ্রি চিকিৎসা মানে সম্পূর্ণ বিনামূল্য়ে চিকিৎসা। এখানে কোনও কার্ডের ব্যাপার থাকবে না। যে কোনও মানুষ চিকিৎসা পাবেন। যতদূর পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার কথা ততদূর পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা পাবেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে সকলের জন্য স্বাস্থ্য, এই বিষয়টি হবে না। এই কার্ডের মাধ্যমে কিছু চিকিৎসা হয়ত হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যের অধিকার বা সকলের জন্য চিকিৎসা সম্ভব হবে না।"

কলকাতা, 30 নভেম্বর : সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্য়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ৷ সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হচ্ছে। তা হলে সরকারি হাসপাতালে কি ফ্রি এবং জটিল রোগের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না? চিকিৎসকদের কোনও অংশের তরফে যেমন বলা হচ্ছে, এটা "আইওয়াশ" ৷ তেমনই কোনও অংশের তরফে বলা হচ্ছে, "সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী" হয়েছে। কিন্তু, "সকলের জন্য স্বাস্থ্য" হয়নি।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবার পিছু বছরে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে। এই বিষয়ে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা তথা, চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (WBDF)-এর আহ্বায়ক চিকিৎসক পুণ‍্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘বিষয়টি এমন হয়েছে যে, 'সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী' কিন্তু, 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য' নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় চিকিৎসার খরচ পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু, আউটডোরের চিকিৎসার জন্য কনসালটেশন ফি, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্রের খরচ এই কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যাবে না। অথচ, আমরা জানি, চিকিৎসার খরচের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ হয় আউটডোরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।’’ চিকিৎসক পুণ‍্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন সকলের স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করবেই, তখন সেই খরচ বেসরকারি বিমা সংস্থার প্রিমিয়ামের জন্য না করে, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য খরচ করুন, যাতে রাজ্যবাসী সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন।’’



মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের সুবিধা এবার থেকে সব পরিবার পাবে। এই ঘোষণা অনুযায়ী, বছরে পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্য মিলিয়ে 1500 হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা, সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি জানানো হয়েছে, 7.5 কোটি থেকে বেড়ে পশ্চিমবঙ্গে এখন 10 কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এ রাজ‍্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোট নার্সিংহোমগুলিতে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পেতে দেখা যায়। বড় কর্পোরেট হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পেতে খুব একটা দেখা যায় না। ফলে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে ছোট মাপের নার্সিংহোমে কিছু চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন সাধারণ মানুষ।’’ তিনি বলেন, ‘‘এক বছরের জন্য গোটা পরিবারের ক্ষেত্রে এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এক লাখ টাকার কভারেজ পাওয়া যায়। বড় কোনও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক লাখ টাকায় সেভাবে এখন আর কিছু হয় না। এ সব লিমিটেশনের ফলে স্বাস্থ্যসাথী তেমন কার্যকর নয়। কারণ, এই কার্ডের মাধ্যমে কিছু মানুষ হয়তো সামান্য চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন। তবে, সার্বিকভাবে বড় কোনও সুবিধা এই কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।’’



মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মাধ্যমে সব জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে এবং ক্যাশলেসের কথা বলা হয়েছে। তা হলে সরকারি হাসপাতালে কি ফ্রিতে চিকিৎসা হচ্ছে না, জটিল কোনও রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না? চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে ফ্রি চিকিৎসার বিষয়টি সংকুচিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী হোক বা আয়ুষ্মান ভারত, কোনওটিই কিন্তু ফ্রি চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার বিকল্প নয়। ফ্রি চিকিৎসা মানে ফ্রি চিকিৎসা। এই ধরনের কার্ডের মাধ্যমে মানুষকে গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দেওয়া হল। মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার কমে গেল।’’ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এতদিন এক লাখ টাকার বিমার কথা বলা হয়েছে, আসলে এর মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলিকে আরও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বিমা সংস্থাগুলি ব‍্যবসা করে নিচ্ছে। কোথাও পাঁচ হাজার টাকার বিল হলে দেখা গেল 50 হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, মুহুর্তের মধ্যে 50 হাজার টাকা বেরিয়ে গেল। এর ফলে, সারা বছর পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে কী হবে? এই প্রশ্ন তুলে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর এই এক লাখ টাকার বদলে আয়ুষ্মান ভারতে পাঁচ লাখ টাকা পাওয়া যায়, তাতেও যে তেমন ভালো কিছু হচ্ছে, তা নয়। এখনকার দিনে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা তেমন কিছু নয়। কাজেই ফ্রি চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এখানে কোনও কার্ডের বিষয় থাকা উচিত নয়। যে মানুষ যে সমস্যা নিয়ে আসবেন, তাঁর চিকিৎসা করতে হবে। এটা না করে স্বাস্থ্যসাথী হোক বা আয়ুষ্মান ভারত, সবগুলিই আইওয়াশ ৷’’



সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকার কভারেজ পাওয়া যাবে, এটা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য কাগজে-কলমে আমরা এখনও দেখতে পাইনি। তবে, এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে এক লাখ টাকার বদলে পাঁচ লাখ টাকা হল, এদিক থেকে এটা ভালো। কিন্তু, পাঁচ লাখ টাকা এখনকার দিনে বড় কোনও অঙ্কের টাকা নয়। এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ জন সদস্য রয়েছেন, এমন পরিবারের কোনও একজনের যদি বছরে বড় কোনও অসুখ করে, তা হলে পাঁচ লাখ টাকার অনেক বেশি খরচ হবে। সব টাকা চলে গেলে তাঁর পরের চিকিৎসার কী হবে, ওই পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? অর্থাৎ, এই ধরনের ব‍্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়টির নিশ্চয়তা নেই।’’


চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি হাসপাতালে তা হলে কি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না? তাহলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা কি বন্ধ করে দেওয়া হবে?" তিনি বলেন, ‘‘ফ্রি চিকিৎসা মানে সম্পূর্ণ বিনামূল্য়ে চিকিৎসা। এখানে কোনও কার্ডের ব্যাপার থাকবে না। যে কোনও মানুষ চিকিৎসা পাবেন। যতদূর পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার কথা ততদূর পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা পাবেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে সকলের জন্য স্বাস্থ্য, এই বিষয়টি হবে না। এই কার্ডের মাধ্যমে কিছু চিকিৎসা হয়ত হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যের অধিকার বা সকলের জন্য চিকিৎসা সম্ভব হবে না।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.