ETV Bharat / city

সারোগেসি প্রতারণায় নয়া মোড়, টুয়েলভ পাশ "চিকিৎসকের" সাহায্যে ভ্রূণহত্যা

author img

By

Published : Mar 7, 2020, 4:38 PM IST

সারোগেসি প্রতারণার তদন্তে নেমে পুলিশ খোঁজ পেল এক ভুয়ো চিকিৎসকের ৷ 12 বছর ধরে চালাচ্ছিলেন তিনি একটি নার্সিংহোমও ৷ সেখানেই গর্ভপাত করানো হয় পলাতক কাশ্মীরা বিবির ৷

Surrogacy Racket
সারোগেসি প্রতারণা

কলকাতা, 7 মার্চ : ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেছিল কাশ্মীরা বিবি । সেই মৃত সন্তান নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় । অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পুলিশ জানতে পেরেছিল সেটাই। জানা ছিল না, কাহিনি শেষ হয়নি। "কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে"র সন্ধান মিলবে । সারোগেসি প্রতারণার তদন্তের গভীরে গিয়ে পুলিশ সন্ধান পেল এক টুয়েলভ পাশ "ডাক্তার" এবং তার নার্সিংহোমের! অভিযোগ, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সারোগেসির শর্ত মেনে গর্ভদান করা কাশ্মীরা বিবি খুন করে 26 সপ্তাহের সন্তানকে । ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই জাল ডাক্তার এবং তার এক দালালকে । কাশ্মীরার বিরুদ্ধে যোগ করা হয়েছে গর্ভের সন্তানকে খুনের ধারা । সিল করা হয়েছে জাল ডাক্তারের বেআইনি নার্সিংহোম ।

সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন দম্পতি । তাঁরা দু'জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত । দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় থাকেন । নিউ আলিপুরের একটি নামকরা ফার্টিলিটি ক্লিনিকের তাঁরা বহুদিন ধরে সহায়তা নিচ্ছিলেন । শহরের নামি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে অবশেষে ঠিক হয় “ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন" করার। সেইমতো একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। ওই দম্পতির পাশাপাশি চুক্তিতে সই করেন ক্লিনিকের ম্যানেজমেন্ট এবং সারোগেট মাদার হতে চাওয়া কাশ্মীরা মোল্লা । কাশ্মীরা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের দহখণ্ডের বাসিন্দা । মোট 8 লাখ টাকার চুক্তি হয় । 3 লাখ 75 হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই দম্পতির জাইগোট থেকে তৈরি ভ্রুণ গতবছর ৭ জুলাই স্থাপন করা হয় কাশ্মীরার শরীরে । তারপর থেকে ওই দম্পতি প্রায় রোজই সারোগেট হাউসে কাশ্মীরার সঙ্গে দেখা করতেন । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু 10 ডিসেম্বর তিনি কাউকে কিছু না বলে সারোগেট হাউস থেকে পালিয়ে যান । ওই দম্পতি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করেন। কিন্তু, খোঁজ পাওয়া যায়নি । তারপরেই নিউ আলিপুর থানায় দায়ের করেন অভিযোগ।

তদন্ত থেমে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ কাশ্মীরার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে। মুক্তির পর দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে অঞ্চলে তাঁর টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায়। তারপর ফেব্রুয়ারি মাসের 5 তারিখ থেকে আর কোনওভাবেই কাশ্মীরার ফোন কাজ করছিল না। এবার শুরু হয় হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের কাজ। কাশ্মীরার নতুন নম্বর জোগাড় করা হয় । সেই সূত্র ধরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি SSKM হাসপাতালে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরাকে। তদন্ত শেষ করার জন্য ভ্রূণের হদিশ পাওয়ার দরকার ছিল তদন্তকারীদের। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।

কাশ্মীরা জানায়, সারোগেট হোম থেকে তিনি সোজা মথুরাপুরের বাড়ি চলে যান। সেখানে পড়ে গিয়ে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তখন সেই ভ্রুণ তিনি নদীর জলে ভাসিয়ে দেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে একই তত্ত্ব আওড়াতে থাকে কাশ্মীরা।

তখন পুলিশ আবার নিজেদের মতো করে খোঁজখবর শুরু করে। তৈরি করা হয় চারটি টিম। পুলিশের কাছে তথ্য আছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে নাম ভাড়িয়ে ঠিকাদারির কাজ করত কাশ্মীরা। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ২০ জানুয়ারি থেকে কাজ করছিল সে । পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় যা হওয়ার হয়েছে ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে। সেই সময়ের মধ্যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেল নিতে শুরু করে পুলিশ। তার টাওয়ার লোকেশনে বোঝা যায়, ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সে মন্দিরবাজার-মথুরাপুর এইসব এলাকাতেই ঠিক ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে ১৯ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত ডায়মন্ডহারবার টাউনে তাঁর টাওয়ার লোকেশন ছিল। পুলিশের দু'টি দল ডায়মন্ডহারবারের সব হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের রেকর্ড খতিয়ে দেখে।

আজ আছে পাওয়া যায়, রবিউল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির খোঁজ । কাশ্মীরার শওহরের মৃত্যুর পর রবিউল হয়ে উঠেছিল কাশ্মীরার বিশেষ বন্ধু। সেই রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া যায় কাশ্মীরার মা এবং তাঁর দুই বোনের ছবি এবং খোঁজ। মন্দিরবাজার এলাকায় কাশ্মীরার মা আম্বিয়া বিবি থাকেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কিন্তু, বিশেষ লাভ হয়নি। তাঁর মোবাইলে টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আম্বিয়া বিবিও ছিলেন ডায়মন্ডহারবারে। এবার আরও একবার ডায়মন্ডহারবার চত্বরের সমস্ত হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে খোঁজ শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, ১৭ ডিসেম্বর রাতে আম্বিয়া বিবি ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন জনৈক মিনা হালদারকে। হাসপাতাল কর্মীদের দেখানো হয় কাশ্মীরার ছবি। তাঁরা নিশ্চিত করে দেন, কাশ্মীরা আর মিনা একই মহিলা। ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেন কাশ্মীরা। সবটা জানাজানির পর পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নেন কাশ্মীরা । এখন প্রশ্ন হল, সারোগেট হাউসে সঠিক সুপারভিশনে থাকার পরেও মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে ওই ভ্রূণের মৃত্যু হল কীভাবে? ভূমিষ্ঠ হতে চলা ওই সন্তানকে পেটেই মেরে ফেলে নিন তো তিনি? উত্তর খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

আর তাতেই সন্ধান পাওয়া গেল "কেউটে"র। ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাশ্মীরা যে মন্দিরবাজার এলাকায় ছিলেন তা আগেই জানা গেছিল। পুলিশ মন্দিরবাজারের সমস্ত নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকের আশপাশে সন্ধান শুরু করে। সাফল্য আসে। গ্রিনল্যান্ড নার্সিংহোমের সামনে এক ফল বিক্রেতা পুলিশকে জানান, জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নার্সিংহোমে এসেছিলেন তিনি। জানা যায়, সেই নার্সিংহোমের এক কর্মী আজ়িজ়ুর রহমান তাঁকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। আজ়িজ়ুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কাশ্মীরাকে সে নিয়ে গেছিল গোপাল ডাক্তারের কাছে। সেখানেই গোপন কর্মটি হয়। গোপাল ডাক্তারের বাড়িতে যায় পুলিশ। দেখা যায়, রীতিমতো একটি নার্সিংহোম ফেঁদে বসেছে গোপাল মালিক। তার বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। সেখানে আছে ইমারজেন্সি, জেনেরাল ওয়ার্ড, ডিসপেন্সারি। পুলিশ জানতে পারে, গোপাল টুয়েলভ পাস এক যুবক। তিন বছর OT অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সে শুরু করে দেয় ডাক্তারি। 12 বছর ধরে সেই নার্সিংহোম চালাচ্ছে গোপাল। সেখানে সে কয়েকটি ওষুধ দিয়ে কাশ্মীরার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলে। পরের বিষয়টি "ম্যানেজ" না হওয়ায় কাশ্মীরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে। পুলিশ গোপালকে গ্রেপ্তার করেছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে তার বেআইনি নার্সিংহোম “মাতৃ সেবা সদন"। নিউ আলিপুর থানার এই তদন্ত যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ মহলে।

কলকাতা, 7 মার্চ : ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেছিল কাশ্মীরা বিবি । সেই মৃত সন্তান নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় । অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পুলিশ জানতে পেরেছিল সেটাই। জানা ছিল না, কাহিনি শেষ হয়নি। "কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে"র সন্ধান মিলবে । সারোগেসি প্রতারণার তদন্তের গভীরে গিয়ে পুলিশ সন্ধান পেল এক টুয়েলভ পাশ "ডাক্তার" এবং তার নার্সিংহোমের! অভিযোগ, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সারোগেসির শর্ত মেনে গর্ভদান করা কাশ্মীরা বিবি খুন করে 26 সপ্তাহের সন্তানকে । ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই জাল ডাক্তার এবং তার এক দালালকে । কাশ্মীরার বিরুদ্ধে যোগ করা হয়েছে গর্ভের সন্তানকে খুনের ধারা । সিল করা হয়েছে জাল ডাক্তারের বেআইনি নার্সিংহোম ।

সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন দম্পতি । তাঁরা দু'জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত । দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় থাকেন । নিউ আলিপুরের একটি নামকরা ফার্টিলিটি ক্লিনিকের তাঁরা বহুদিন ধরে সহায়তা নিচ্ছিলেন । শহরের নামি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে অবশেষে ঠিক হয় “ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন" করার। সেইমতো একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। ওই দম্পতির পাশাপাশি চুক্তিতে সই করেন ক্লিনিকের ম্যানেজমেন্ট এবং সারোগেট মাদার হতে চাওয়া কাশ্মীরা মোল্লা । কাশ্মীরা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের দহখণ্ডের বাসিন্দা । মোট 8 লাখ টাকার চুক্তি হয় । 3 লাখ 75 হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই দম্পতির জাইগোট থেকে তৈরি ভ্রুণ গতবছর ৭ জুলাই স্থাপন করা হয় কাশ্মীরার শরীরে । তারপর থেকে ওই দম্পতি প্রায় রোজই সারোগেট হাউসে কাশ্মীরার সঙ্গে দেখা করতেন । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু 10 ডিসেম্বর তিনি কাউকে কিছু না বলে সারোগেট হাউস থেকে পালিয়ে যান । ওই দম্পতি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করেন। কিন্তু, খোঁজ পাওয়া যায়নি । তারপরেই নিউ আলিপুর থানায় দায়ের করেন অভিযোগ।

তদন্ত থেমে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ কাশ্মীরার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে। মুক্তির পর দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে অঞ্চলে তাঁর টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায়। তারপর ফেব্রুয়ারি মাসের 5 তারিখ থেকে আর কোনওভাবেই কাশ্মীরার ফোন কাজ করছিল না। এবার শুরু হয় হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের কাজ। কাশ্মীরার নতুন নম্বর জোগাড় করা হয় । সেই সূত্র ধরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি SSKM হাসপাতালে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরাকে। তদন্ত শেষ করার জন্য ভ্রূণের হদিশ পাওয়ার দরকার ছিল তদন্তকারীদের। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।

কাশ্মীরা জানায়, সারোগেট হোম থেকে তিনি সোজা মথুরাপুরের বাড়ি চলে যান। সেখানে পড়ে গিয়ে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তখন সেই ভ্রুণ তিনি নদীর জলে ভাসিয়ে দেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে একই তত্ত্ব আওড়াতে থাকে কাশ্মীরা।

তখন পুলিশ আবার নিজেদের মতো করে খোঁজখবর শুরু করে। তৈরি করা হয় চারটি টিম। পুলিশের কাছে তথ্য আছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে নাম ভাড়িয়ে ঠিকাদারির কাজ করত কাশ্মীরা। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ২০ জানুয়ারি থেকে কাজ করছিল সে । পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় যা হওয়ার হয়েছে ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে। সেই সময়ের মধ্যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেল নিতে শুরু করে পুলিশ। তার টাওয়ার লোকেশনে বোঝা যায়, ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সে মন্দিরবাজার-মথুরাপুর এইসব এলাকাতেই ঠিক ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে ১৯ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত ডায়মন্ডহারবার টাউনে তাঁর টাওয়ার লোকেশন ছিল। পুলিশের দু'টি দল ডায়মন্ডহারবারের সব হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের রেকর্ড খতিয়ে দেখে।

আজ আছে পাওয়া যায়, রবিউল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির খোঁজ । কাশ্মীরার শওহরের মৃত্যুর পর রবিউল হয়ে উঠেছিল কাশ্মীরার বিশেষ বন্ধু। সেই রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া যায় কাশ্মীরার মা এবং তাঁর দুই বোনের ছবি এবং খোঁজ। মন্দিরবাজার এলাকায় কাশ্মীরার মা আম্বিয়া বিবি থাকেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কিন্তু, বিশেষ লাভ হয়নি। তাঁর মোবাইলে টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আম্বিয়া বিবিও ছিলেন ডায়মন্ডহারবারে। এবার আরও একবার ডায়মন্ডহারবার চত্বরের সমস্ত হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে খোঁজ শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, ১৭ ডিসেম্বর রাতে আম্বিয়া বিবি ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন জনৈক মিনা হালদারকে। হাসপাতাল কর্মীদের দেখানো হয় কাশ্মীরার ছবি। তাঁরা নিশ্চিত করে দেন, কাশ্মীরা আর মিনা একই মহিলা। ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসব করেন কাশ্মীরা। সবটা জানাজানির পর পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নেন কাশ্মীরা । এখন প্রশ্ন হল, সারোগেট হাউসে সঠিক সুপারভিশনে থাকার পরেও মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে ওই ভ্রূণের মৃত্যু হল কীভাবে? ভূমিষ্ঠ হতে চলা ওই সন্তানকে পেটেই মেরে ফেলে নিন তো তিনি? উত্তর খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

আর তাতেই সন্ধান পাওয়া গেল "কেউটে"র। ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাশ্মীরা যে মন্দিরবাজার এলাকায় ছিলেন তা আগেই জানা গেছিল। পুলিশ মন্দিরবাজারের সমস্ত নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকের আশপাশে সন্ধান শুরু করে। সাফল্য আসে। গ্রিনল্যান্ড নার্সিংহোমের সামনে এক ফল বিক্রেতা পুলিশকে জানান, জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নার্সিংহোমে এসেছিলেন তিনি। জানা যায়, সেই নার্সিংহোমের এক কর্মী আজ়িজ়ুর রহমান তাঁকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। আজ়িজ়ুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কাশ্মীরাকে সে নিয়ে গেছিল গোপাল ডাক্তারের কাছে। সেখানেই গোপন কর্মটি হয়। গোপাল ডাক্তারের বাড়িতে যায় পুলিশ। দেখা যায়, রীতিমতো একটি নার্সিংহোম ফেঁদে বসেছে গোপাল মালিক। তার বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। সেখানে আছে ইমারজেন্সি, জেনেরাল ওয়ার্ড, ডিসপেন্সারি। পুলিশ জানতে পারে, গোপাল টুয়েলভ পাস এক যুবক। তিন বছর OT অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সে শুরু করে দেয় ডাক্তারি। 12 বছর ধরে সেই নার্সিংহোম চালাচ্ছে গোপাল। সেখানে সে কয়েকটি ওষুধ দিয়ে কাশ্মীরার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলে। পরের বিষয়টি "ম্যানেজ" না হওয়ায় কাশ্মীরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে। পুলিশ গোপালকে গ্রেপ্তার করেছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে তার বেআইনি নার্সিংহোম “মাতৃ সেবা সদন"। নিউ আলিপুর থানার এই তদন্ত যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ মহলে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.