কলকাতা, 4 অগস্ট : ম্যান-মেড শব্দব্রহ্মটি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর আবিষ্কার । বাম আমলে ম্যান-মেড বন্যা বলে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদত্যাগ তিনি দাবি করেছিলেন । এখন ম্যান-মেড বন্যা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কাকে দায়ী করছেন, তা পরিষ্কার হওয়া উচিত বলে মনে করেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) । এই পরিস্থিতিতে কার পদত্যাগ দাবি করবেন সেই ছবিটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি । কারণ, এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং, না সেচমন্ত্রী, সেচসচিব কার দায়, তাও পরিষ্কার হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুজন ৷
সুজন বলেন, "মনে রাখা উচিত, ম্যান-মেড বলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন উনি ৷ আমরা অবশ্য ম্যান-মেড বন্যা মনে করি না । জল অনেক বেশি হয়েছে তাই ডিভিসি বেশি পরিমাণে জল ছেড়েছে । কিন্তু এক্ষেত্রে নাব্যতা বাড়াতে যা করা উচিত ছিল তা গত দশ-এগারো বছরে রাজ্য সরকার করেনি । মুখ্যমন্ত্রী গত তিরিশ বছরে একটিবার ছাড়া সবসময় সাংসদ ছিলেন । উনি তো দিল্লিতে সব দলের সরকারেই ছিলেন । এই গুণ তো কারও নেই । উনি বলতে পারবেন ম্যান-মেড বন্যা বলতে আসলে কার দায় । কার দিকে আঙুল তুলছেন । এই অবস্থায় কী ব্যবস্থা তিনি নিচ্ছেন, তাও পরিষ্কার করা উচিত ৷"
ভ্যাকসিন নিয়েও ফের রাজনীতির কথা তুলেছেন সুজন । এই ব্যাপারে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি । বলেন, "ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে ক্লাব, পুজো কমিটি, পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটির মাধ্যমে । টিকাকরণ স্বাস্থ্য দফতরের কাজ ৷ স্বাস্থ্য দফতর এমনিতেই পাচ্ছে কম । তার ওপর তা আবার কেড়ে নিয়ে দলতন্ত্র চলছে । মানুষ রাতভর অপেক্ষার পরও দেখছেন টিকা পাওয়া যাচ্ছে না । অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের অফিস থেকে চিরকুট নিয়ে এলেই টিকা পাওয়া যাচ্ছে । ফলে দেবাঞ্জনদের সৃষ্টি হচ্ছে । কাজ হারিয়ে চরম বিপাকে মানুষ ৷ তাদের জন্য পরিবার প্রতি সাড়ে সাত হাজার টাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য দায় সরকারকে নিতে হবে ৷" বিপুল বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে । কৃষকরা অথৈ জলে । সুজনবাবুর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য অবিলম্বে কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক ।
উপনির্বাচন এবং পৌরনির্বাচন নিয়ে শাসক এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের চাপানউতোর নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন সুজন । তবে সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, "কোভিড পরিস্থিতি উন্নত হলে কেন রেল চালু করা যাচ্ছে না বা স্কুল-কলেজ খোলা যাচ্ছে না তার ব্যাখ্যা জরুরি । বকেয়া পৌরনির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে । উপনির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের । মধুভাণ্ড ভোগের প্রতিযোগিতা চলছে । তাই আমাদের দাবি, আগে বকেয়া পৌরনির্বাচন হোক । তারপর উপনির্বাচনের আয়োজন ৷"
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রে প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাসের লেখা নিয়ে বিতর্ক চলছে । এই বিষয়ে অজন্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়ে, যা নিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে । সম্প্রতি কবি মান্দাক্রান্তা সেনের কাছে তৃণমূলের মুখপত্রে লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন । তাঁর এই প্রত্যাখ্যানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী । বলেন, "অন্য কোনও কাগজে লেখা আর সিপিএমের লোক বলে দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য পুনঃপ্রকাশিত কাগজে লেখা এক নয় । এর ফলে বিষয়টি ভালভাবে নেওয়া যায় না । যাঁরা লিখেছেন তাঁদের বিবেচনা বোধ হারিয়ে গিয়েছে বলে মানতে হবে ।"
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : রাজ্যে বন্যা ম্যান-মেড, বললেন মুখ্যমন্ত্রী